ভারতের কোচ হওয়ার দৌড়ে এই মুহূর্তে হট ফেভারিট গৌতম গম্ভীর (Gautam Gambhir)। জুন মাসের টি-২০ বিশ্বকাপ মিটলেই সরে যাচ্ছেন রাহুল দ্রাবিড় (Rahul Dravid)। টিম ইন্ডিয়ার হটসিটে ২০২১-এর নভেম্বর মাস থেকে রয়েছেন তিনি। গত বছরের নভেম্বর মাস অবধি ছিলো চুক্তি। কিন্তু টি-২০ বিশ্বকাপের কথা ভেবে তা নবীকরণ করা হয় মাস ছয়েকের জন্য। দিনকয়েক আগে নতুন কোচ নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিলো বিসিসিআই (BCCI)। আবেদন করার শেষ দিন ছিলো ২৭ মে ভারতীয় সময় সন্ধ্যা ৭টা অবধি। সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর যে প্রায় ৩০০০ আবেদন জমা পড়েছে বোর্ডের কাছে। এর মধ্যে আসল-নকল বাছতে এখন হিমশিম কর্তারা। কোচ বাছাইয়ের প্রক্রিয়া যে জটিল হতে চলেছে তা স্পষ্ট।
দ্রাবিড়ের উত্তরসূরি কে? এই প্রশ্নের এখন জবাব খুঁজছেন সকলে। রিকি পন্টিং, জাস্টিন ল্যাঙ্গার, অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারদের নাকি বাজিয়ে দেখেছে বিসিসিআই। রাজী হন নি কেউই। তাই বিদেশী কোচের মোহ ছেড়ে ভারতীয় প্রশিক্ষকের দিকেই ঝুঁকেছেন জয় শাহ, রজার বিনি’রা। ভাসছে গৌতম গম্ভীরের (Gautam Gambhir) নাম। এর আগে মেন্টর হিসেবে লক্ষ্ণৌ’কে টানা দুই মরসুম আইপিএলের প্লে-অফে নিয়ে গিয়েছেন গম্ভীর (Gautam Gambhir)। এবার কলকাতা নাইট রাইডার্সের মেন্টর হয়েছিলেন তিনি। প্রথম সুযোগেই দলকে করেছেন চ্যাম্পিয়ন। তাঁর মগজাস্ত্রের মোহে আবিষ্ট দেশের ক্রিকেটজনতাও। আইপিএল ফাইনালের দিন জয় শাহের (Jay Shah) সাথে আলাদা করে আলোচনা করতে দেখা গিয়েছে গম্ভীরকে। দৌড়ে গম্ভীর (Gautam Gambhir) এগিয়ে থাকলেও ‘ওয়াইল্ড কার্ড’ এন্ট্রি হিসেবে নাম ভাসছে তাঁরই সহকর্মী, কেকেআর কোচ চন্দ্রকান্ত পণ্ডিতের।
Read More: হেড কোচ বাছতে হিমশিম খাচ্ছে BCCI, আবেদনকারীর তালিকায় মোদী-অমিত শাহের নাম !!
অভিজ্ঞতা এগিয়ে রাখছে চন্দ্রকান্ত পণ্ডিতকে-
মুম্বই ও মধ্যপ্রদেশের হয়ে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলেছেন চন্দ্রকান্ত পণ্ডিত (Chandrakanta Pandit)। ছিলেন উইকেটরক্ষক-ব্যাটার। প্রথম শ্রেণির খেলায় তাঁর ১৩৮ ম্যাচে রয়েছে ৮২০৯ রান। লিস্ট-এ ক্রিকেটে করেছেন ১০১ ম্যাচে ২০৩৩ রান। ১৯৮৬ সালে প্রথমবার দেশের জার্সি গায়ে টেস্ট খেলতে নেমেছিলেন তিনি। সেই একই বছরে হয় ওয়ান ডে অভিষেক। টিম ইন্ডিয়ার হয়ে চন্দ্রকান্ত (Chandrakanta Pandit) ৫টেস্টে ১৭১ ও ৩৬ ওডিআই ম্যাচে ২৯০ রান করেছেন। অবসরের পর কোচিং-এ আসেন তিনি। শুরুটা করেন হংসরাজ মোরারজী পাব্লিক স্কুলে কোচিং করিয়ে। এরপর সময় যত এগিয়েছে ততই সমৃদ্ধ হয়েছে তাঁর কোচিং কেরিয়ার। তাঁর সোনালী স্পর্শে ট্রফির স্বাদ পেয়েছে একের পর এক দল।
মুম্বইয়ের কোচ হিসেবে পণ্ডিত (Chandrakanta Pandit) জিতছেন তিনটি রঞ্জি ট্রফি। বিদর্ভের দায়িত্ব নিয়েও সফল তিনি। তাদের ২০১৮ ও ২০১৯ সালে পরপর দুইবার রঞ্জি চ্যাম্পিয়ন করে নজির গড়েছিলেন তিনি। তার আগে মধ্যপ্রদেশকেও তাদের প্রথম রঞ্জি জয়ের স্বাদ এনে দিয়েছিলেন তিনিই। ছয়বার খেতাব জিতে ভারতীয় ঘরোয়া ক্রিকেটের ইতিহাসে সফলতম কোচ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন চন্দ্রকান্ত পণ্ডিত (Chandrakanta Pandit)। ২০২৩ সালে নাইট রাইডার্সের (KKR) কোচ হিসেবে নিযুক্ত হন তিনি। প্রথম মরসুমে সাফল্য পান নি। তবে নাইটদের হয়ে সাম্প্রতিক রঞ্জি জয় তাঁর মুকুটে যোগ করেছে নতুন পালক। একইসাথে সম্ভাব্য জাতীয় কোচের আলোচনাতেও উঠে এসেছে তাঁর নাম।
টিম ইন্ডিয়ার দায়িত্ব পেতে পারেন চন্দ্রকান্ত-
কোচ হিসেবে শৃঙ্খলাতে প্রচণ্ড গুরুত্ব দেন চন্দ্রকান্ত পণ্ডিত (Chandrakanta Pandit)। যা তাঁর সাফল্যের অন্যতম কারণ। গত ১৩ মে যে বিজ্ঞপ্তি নতুন কোচ নিয়োগের জন্য করেছে বিসিসিআই, তাতে স্পষ্ট করে লেখা রয়েছে কি হতে হবে আবেদনকারীর যোগ্যতার মাপকাঠি। বোর্ডের তরফে জানানো হয়েছে যে আবেদনকারীকে দেশের হয়ে ৩০টি টেস্ট বা ৫০টি একদিনের ম্যাচ খেলে থাকতে হবে। অথবা তাঁকে কোনো টেস্ট খেলিয়ে দেশের কোচ হিসেবে দুই বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন হতে হবে। অ্যাসোসিয়েট দেশের জাতীয় দল, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট দল অথবা কোনো দেশের ‘এ’ দলের সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কেউ চাইলেও আবেদন করতে পারেন। তবে সেক্ষেত্রে ২ নয়, অন্তত ৩ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে আবেদনকারীর।
দেশের হয়ে ৩০টি টেস্ট বা ৫০টি একদিনের ম্যাচ চন্দ্রকান্ত (Chandrakanta Pandit) খেলেন নি। কোনো টেস্ট খেলিয়ে দল’কে অন্তত ২ বছর প্রশিক্ষণ’ও দেন নি তিনি। তবে ঘরোয়া ক্রিকেটে ৩ নয়, দুই দশকেরও বেশী অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। যার ফলে কোচের পদে আবেদন করতেই পারেন তিনি। তবে চন্দ্রকান্ত সমস্যায় পড়তে পারেন তাঁর বয়সের কারণে। বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্ট জানানো হয়েছে যে কোনো মুল্যেই আবেদনকারীর বয়স যেন ৬০ বছরের বেশী না হয়। কিন্তু চন্দ্রকান্ত পণ্ডিতে বয়স বর্তমানে ৬২। যা বাধা সৃষ্টি করতে পারে তাঁর জন্য। তবে তাঁর সাফল্য ও ট্র্যাক রেকর্ড দেখে জয় শাহ, রজার বিনি’রা যদি দুই বছরের ব্যবধান উপেক্ষা করেন, তাহলে শিকে ছিঁড়তেও পারে চন্দ্রকান্ত পণ্ডিতের ভাগ্যে।