২০২৩ সাল মানে ক্রিকেটের মরশুম, আর এই মরশুমে মহেন্দ্র সিং ধোনি (MS Dhoni) রয়েছেন ট্রেন্ডিং এ। এ বছর ধোনি ভক্তরা মনে করেছিল শেষবারের জন্যই হয়তো ক্রিকেট মাঠে দেখা যাবে ধোনি কে, কিন্তু তা একেবারেই নয় ভারতীয় দলের প্রাক্তন অধিনায়ক আগামী বছরও খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন । তবে সময় না আসলে এ সম্বন্ধে বিস্তারিত জানা যাবে না। মহেন্দ্র সিং ধোনির উপরে ভক্তদের ভালবাসাটা অনেকটাই বেশি , এমনকি তার জন্যই এই বছর স্টেডিয়ামে চেন্নাইয়ের হলুদ পতাকা ও জার্সি ছাড়া অন্য কোন জার্সির ফ্যানদের দেখা যায়নি। তার কারণেই বিপরীত দলের ভক্তরা ধোনি ফ্যান হয়ে উঠেছিল। কলকাতা, মুম্বাই, ব্যাঙ্গালোর থেকে শুরু করে যে সমস্ত জায়গায় এবছর আইপিএল খেলা হয়েছে সব জায়গাতেই দেখা গিয়েছে এই হলুদ জার্সি। তবে এখানেই উঠে আসে প্রশ্ন, কেন ধোনিকে সবাই মানুষ পছন্দ করেন ? আসলে একমাত্র অধিনায়ক হিসেবে আইসিসির তিনটে ট্রফি জিতেছেন এই নরম স্বভাবের মানুষটি, ট্রফির পাশাপাশি তিনি তিনজন রত্নকেও দিয়ে গিয়েছেন যারা ভারতীয় দলকে একেবারে রাজ করছে।
Read More: “MS Dhoni ছল করে জিতেছিল বিশ্বকাপ…” টিম ইন্ডিয়ার উপর গভীর অভিযোগ আনলেন প্রাক্তন পাক স্পিনার সৈয়দ আজমল !!
১. বিরাট কোহলি
এই তালিকায় প্রথমেই রয়েছেন ভারতীয় দলের বর্তমান যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলি (Virat Kohli)। দলের হয়ে একের পর এক ম্যাচ উইনিং পারফরমেন্স তিনি দেখিয়েছেন। তবে তার এই পারফরমেন্সের শের শতাংশ দিতে হয় মহেন্দ্র সিং ধোনিকে। একদা এক সময়ে টেস্ট ক্রিকেটে বাজে ফর্ম চলাকালীনও ধোনি (MS Dhoni) অনবরত সুযোগ দিয়েছেন তরুন বিরাট কোহলি কে। পরবর্তীকালে ভারতীয় দলের সেরা টেস্ট ক্যাপ্টেন দের মধ্যে একজন হয়েছেন বিরাট , তবে তার আগে বিরাটের ব্যাটিং চর্চা তো করতেই হয়, ভারতীয় দলের প্রাক্তন অধিনায়ক বিরাট কোহলি তিনটি ফরম্যাটে অসাধারণ ব্যাটিং করে থাকেন।
যদিও ২০২২ বিশ্বকাপের পরে জাতীয় দলে আর খেলতে দেখা যায়নি কোহলিকে। তার ক্যারিয়ার নিয়ে আলোচনা করতে গেলে প্রথমেই উঠে আসবে তার ওডিআই ক্রিকেটের পারফরমেন্স , আপাতত বিরাট ২৭৪ টি ওডিআই ম্যাচ খেলেছেন যেখানে ৫৭.৩২ গড়ে, ১২৮৯৮ রান বানিয়েছেন। পাশাপাশি ৬৫ বার অর্ধশত রান ও ৪৬ বার শতরান হাঁকিয়েছেন। এছাড়া টেস্ট ক্রিকেটের কথা বলতে গেলে ১০৯ টেস্ট ম্যাচ খেলে ৪৮ দশমিক ৭৩ গড়ে ৮৪৭৯ রান বানিয়েছেন কোহলি আর ১১৫ টি-টোয়েন্টি খেলে ৫২.৭৪ গড়ে ৪০০৮ রান বানিয়ে শীর্ষস্থানে রয়েছেন কোহলি আসন্ন ওডিআই বিশ্বকাপে বিরাট কোহলির বর্তমান ফরমটি টিম ইন্ডিয়া কাজে লাগবে।
২. রবীন্দ্র জাদেজা
তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন মহেন্দ্র সিং ধোনির শীর্ষ রবীন্দ্র জাদেজা (Ravindra Jadeja)। ২০২২ সালে ধোনির (MS Dhoni) পরিবর্তে রবীন্দ্র জাদেজা চেন্নাই দলকে নেতৃত্ব দেওয়া সুযোগ পেয়েছিলেন। তবে টিম ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝির জন্য চেন্নাই দল ছেড়ে দেওয়ার চিন্তা করেন জাদেজা, কিন্তু ধোনির পরামর্শে আবার চেন্নাই দলে ফিরে আসেন স্যার জাদেজা। আর এবারের আইপিএলে উইনিং শর্ট কিন্তু ওই জাদেজার ব্যাট থেকেই এসেছিল। ভারতীয় দলের এক প্রতিভাবান অলরাউন্ডার হলেন রবীন্দ্র জাদেজা, ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে মহেন্দ্র সিং ধোনির অবদানটা বেশ অনেকটাই ছিল।
সঠিক সময়ে ধোনির সাপোর্ট না পেলে আজকে জাদেজাকে স্যার জাদেজা হয়ে উঠতে দেখা যেত না। বর্তমানে ভারতীয় টেস্ট দলের এক নম্বর প্লেয়ার বলা যেতে পারে জাদেজাকে, তিনি আসন্ন বিশ্বকাপে ভারতীয় দলের এক গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হতে চলেছেন। জাদেজার ক্যারিয়ারের দিকে নজর দিলে দেখা যাবে, ৬৫ টেস্টে ২৭০৬ রান বানিয়েছেন ও নিয়েছেন ২৬৮ উইকেট। ১৭৪ ওডিআই ম্যাচে ২৫২৬ রান করেছেন এবং ১৯১ উইকেট নিয়েছেন। ব্যাটিং বোলিংয়ের পাশাপাশি তিনি বেশ দক্ষ ফিল্ডার।
৩. রোহিত শর্মা
এই তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে রোহিত শর্মা (Rohit Sharma)। একজন ট্যালেন্টেড খেলোয়াড় হিসাবে টিম ইন্ডিয়ায় অভিষেক করেছিলেন রোহিত। তবে ট্যালেন্ট থাকলেই যে সফলতা পাওয়া যায় এমনটা নয়। প্রথমদিকে একাধিক সুযোগ পেয়েও সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে দেখা যায়নি রোহিত শর্মাকে। তবে ২০১৩ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে যখন ক্যাপ্টেন কুলের (MS Dhoni) সিদ্ধান্ত মেনে ওপেনিং করতে এসেছিলেন রোহিত, ঠিক তারপর থেকেই বদলে যায় রোহিত শর্মার ক্যারিয়ার। এর পাশাপাশি টিম ইন্ডিয়া খুঁজেও পেয়েছিল তাদের পরবর্তী সুপারস্টারকে।
বর্তমানে ভারতীয় দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন রোহিত এবং তার নেতৃত্বে ভারতীয় দল আসন্ন বিশ্বকাপ খেলতে চলেছে। এই বিশ্বকাপে রহিতের ফর্ম খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। তবে একসময় এমএস ধোনি তার পাশের না দাঁড়ালে এই পর্যায়ে পৌঁছাতে হয়তো পারতেন না ভারতীয় দলের ক্যাপ্টেন। তিনি ৫০ টেস্টে ৪৫.২২ গড়ে ৩৪৩৭ রান বানিয়েছেন এবং তার ঝুলিতে ৯ টি শতরান ও ১৪ টি অর্ধশতরান করেছেন। ২৪৩ ওডিআই ম্যাচে ৪৮.৬৪ গড়ে ৯৮২৫ রান বানিয়েছেন ও ১৪৮ টি টোয়েন্টি ম্যাচে ৩০.৮২ গড়ে ৩৮৫৩ রান করেছেন।
৪. রবিচন্দ্রন অশ্বিন
এই তালিকায় চতুর্থ স্থানে রয়েছেন অফ-স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিন (Ravichandran Ashwin), তিনি বর্তমান বিশ্বের অন্যতম সেরা স্পিন বোলার। ধোনি অশ্বিনকে আইপিএল ২০১০-এ প্রথমবার খেলার সুযোগ দিয়েছিলেন। আইপিএলে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করেছিলেন অশ্বিন। এমনকি ঐবচর কাপ ও জেতে ধোনি বাহিনী, তার প্রতিভা দেখে তারপর তাকে ভারতীয় দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এমনকি ২০১১ বিশ্বকাপেও জায়গা বানিয়ে নেন অশ্বিন। দলে হরভজন সিংয়ের (Harbhajan Singh) মতন বলার থাকা সত্ত্বেও দলে অশ্বিনকে টেনে নেন ধোনি, এমনকি তার অধীনেই সেরা ফর্মে ছিলেন অশ্বিন ও অলফরম্যাট বলার হয়ে উঠেছিলেন। ভারতীয় দলের হয়ে ৯২ টেস্টে ৩১২৯ রান বানিয়েছেন ও নিয়েছেন ৪৭৪ টি উইকেট। ১১৩ ওডিআই ম্যাচে নিয়েছেন ১৫১ উইকেট ও ৬৫ টি টোয়েন্টি ম্যাচে নিয়েছেন ৭২ উইকেট।
৫. সুরেশ রায়না
মহেন্দ্র সিং ধোনি এবং সুরেশ রায়নার (Suresh Raina) বন্ধুত্ব ছিল খুব গভীর। ধোনি তার অধিনায়কত্বে রায়নাকে অনেক সুযোগ দিয়েছিলেন। রায়না একজন যুব প্রতিভা ছিলেন, ভারতকে অনেক ম্যাচে জিততেও সাহায্য করেছিলেন। ধোনির পরপরই জাতীয় দলে সুযোগ পান রায়না। আস্তে আস্তে ধোনির প্রিয় হয়ে ওঠেন রায়না। এমনকি ধোনি রায়নাকে একটানা খেলার সুযোগ দিয়েছিলেন, যার কারণে রায়নাকে সীমিত ওভারের ক্রিকেটের বিপজ্জনক ব্যাটসম্যানদের মধ্যে গণ্য করা হয়। তবে, রায়নার খারাপ সময়ে ধোনিকে পাশে পেয়েছেন ও ২০১১ বিশ্বকাপেও রায়নাকে দলে টেনে নেন ধোনি। এমনকি ২০১১ বিশ্বকাপ কোয়াটার ফাইনাল ও সেমিফাইনালে রায়নার পারফরম্যান্স ছিল অসাধারণ। তার ক্যারিয়ারের কথা বলতে গেলে, ১৮ টি টেস্ট ম্যাচে ২৬.৪৮ গড়ে ৭৬৮ রান বানিয়েছেন। ২২৬ টি ওডিআই ম্যাচে ৩৫.৩১ গড়ে ৫৬১৫ রান করেছেন ও ৭৮ টি টোয়েন্টি ম্যাচে ২৯.১৬ গড়ে ১৬০৪ রান করেছেন।