টি-২০ বিশ্বকাপ জেতানোর পর সরে দাঁড়িয়েছিলেন রাহুল দ্রাবিড়। এরপর গত ৯ জুলাই ভারতীয় দলের নতুন কোচ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিলো গৌতম গম্ভীরের (Gautam Gambhir) নাম। আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্সের মেন্টর হিসেবে দুর্দান্ত সাফল্য পেয়েছিলেন তিনি। দীর্ঘ এক দশক পর বেগুনি-সোনালী শিবিরকে এনে দিয়েছিলেন ট্রফি। ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-২০ লীগে গম্ভীরের মগজাস্ত্রের প্রয়োগ মুগ্ধ করেছিলো ক্রিকেটজনতাকে। ফলে তাঁদের সিংহভাগই নতুন কোচ’কে সাদরে বরণ করে নিয়েছিলেন। যখন নিজে খেলোয়াড় ছিলেন, তখন আগ্রাসনকেই বারবার হাতিয়ার করেছেন গম্ভীর (Gautam Gambhir)। কোচ হিসেবেও দলকে সেই আগ্রাসনের পাঠই দেবেন তিনি, আশায় ছিলেন সমর্থকেরা। কোচ হিসেবে আপাতত মাসচারেক কাজ করেছেন বিশ্বজয়ী প্রাক্তনী। তাঁকে ঘিরে যে প্রত্যাশা দানা বেঁধেছিলো, তার সাথে বাস্তবের সামঞ্জস্য বিশেষ চোখে পড়ে নি।
Read More: নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জুটেছে ব্যর্থতা, বর্ডার-গাওস্কর ট্রফি থেকে বাদ পড়ছেন এই ব্যাটার !!
হতাশ করেছে কোচ গম্ভীরের পারফর্ম্যান্স-
কোচের পদে বসার আগে বিসিসিআই-এর কাছে একঝাঁক শর্ত রেখেছিলেন গৌতম গম্ভীর (Gautam Gambhir)। তিনি দলের উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ চেয়েছিলেন। নিজের পছন্দের কোচিং স্টাফ’ও বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা দাবী করেছিলেন তিনি। এছাড়া আগামীর রোডম্যাপ স্থির করা, টেস্ট ক্রিকেটের উপর অধিক গুরুত্ব দেওয়ার মত বিষয়গুলির ক্ষেত্রেও নিজস্ব মতামত জানিয়েছিলেন তিনি। তাঁর দাবী মেনে নেয় বোর্ড। ২০২৪-এর জুলাই থেকে ২০২৭-এর ডিসেম্বর অবধি বিসিসিআই-এর সাথে চুক্তিবদ্ধ হন গম্ভীর (Gautam Gambhir)। তাঁর ইচ্ছাকে মান্যতা দিয়েই সহকারী কোচ হিসেবে অভিষেক নায়ার, রায়ান টেন দুশখাতে, মর্ণি মর্কেলদের ভারতীয় দলে করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অঢেল স্বাধীনতা পাওয়া সত্ত্বেও পারফর্ম্যান্সে এখনও অবধি মন ভরাতে পারেন নি ভারতীয় দলের নতুন কোচ। একের পর এক ম্যাচে জুটেছে ব্যর্থতাই।
কোচ হিসেবে গম্ভীর (Gautam Gambhir) প্রথমবার দায়িত্ব সামলেছিলেন শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে। টি-২০ সিরিজে জয় পেয়েছিলো দল। যে প্রত্যাশার ফানুস সেই সময় উড়েছিলো আকাশে তা চুপসে অবশ্য যায় লঙ্কানদের বিপক্ষে একদিনের সিরিজেই। কলম্বোর মাঠে টিম ইন্ডিয়ার ব্যাটিং লাইন-আপ’কে নাস্তানাবুদ করেন শ্রীলঙ্কার স্পিনাররা। কোহলি (Virat Kohli), রোহিত, শুভমানদের মত তারকারা ভাণ্ডারসে, ওয়েলালাগে (Dunith Wellalage), তীক্ষণাদের বিরুদ্ধে অসহায় আত্মসমর্পণ করে বসেন। ২৭ বছর পর দ্বিপাক্ষিক ওডিআই সিরিজে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে হারে ভারত। এই হতশ্রী পারফর্ম্যান্সের পর বাংলাদেশের বিরুদ্ধে জয় অক্সিজেন যুগিয়েছিলো কোচ গম্ভীর’কে। কিন্তু নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে (IND vs NZ) টেস্ট সিরিজ যেন ফের একবার ভারতীয় ক্রিকেটের জীর্ণ দশাটাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো। ২৪ বছর পর ঘরের মাঠে হোয়াইটওয়াশ হলো ‘মেন ইন ব্লু।’
গম্ভীরের ক্ষমতা খর্ব করছে বোর্ড-
শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে অহেতুক কাটাছেঁড়া করার জন্য সমালোচিত হয়েছিলেন গৌতম গম্ভীর (Gautam Gambhir)। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজেও তাঁর গেমপ্ল্যান বোধগম্য হয় নি ক্রিকেটজনতার। বেঙ্গালুরুতে ভিজে পিচ ও স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়া সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হওয়া সত্ত্বেও কেন ব্যাটিং বেছে নেওয়া হলো টসে জিতে তার কোনো ব্যাখ্যা নেই কারও কাছে। দলের ব্যাটারদের স্পিন দুর্বলতার কথা জেনেও মুম্বইতে র্যাঙ্ক টার্নারের দাবী কেন করা হলো, কেনই বা নাইট ওয়াচম্যান হিসেবে দলের সবচেয়ে দুর্বল ব্যাটার মহম্মদ সিরাজকে মুম্বই টেস্টের প্রথম দিন এগিয়ে দেওয়া হলো তারও কোনো কারণ বুঝে উঠতে পারছেনা বিশেষজ্ঞরা। চার মাসে গৌতম গম্ভীর (Gautam Gambhir) যে পথে এগিয়েছেন তা খুশি করতে পারে নি খোদ বিসিসিআইকেও। তাঁর হাতে থাকা বিশেষ ক্ষমতা কেড়ে নেওয়ার কথা ভাবছে বোর্ড।
সাধারণত দল নির্বাচনের ক্ষেত্রে কোচের কোনো ভূমিকা থাকে না। সেই কাজটি সম্পন্ন করে নির্বাচকমণ্ডলী। কিন্তু ব্যতিক্রম গম্ভীরের (Gautam Gambhir) ক্ষেত্রে। আসন্ন অস্ট্রেলিয়া সফরের স্কোয়াড নির্বাচনের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন তিনি। হর্ষিত রাণা, নীতিশ কুমার রেড্ডিদের মত ক্রিকেটারদের তাঁর জোরাজুরিতেই সামিল করা হয়েছে দলে। “গৌতম গম্ভীরকে যে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিলো তা ওনার পূর্বসূরি রবি শাস্ত্রী বা রাহুল দ্রাবিড় কখনও পান নি। বিসিসিআই-এর নিয়ম অনুযায়ী নির্বাচনী বৈঠকে কোচ থাকতে পারেন না। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া সফরের জন্য একটি ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিলো। এই সফরের গুরুত্ব মাথায় রেখে গম্ভীরকে বৈঠকে অংশ নেওয়ার ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছিলো” PTI-কে জানিয়েছেন এক বোর্ড কর্তা। তবে সংবাদসংস্থা PTI-এর রিপোর্টে জানানো হয়েছে যে ভুল বুঝতে পেরেছে বিসিসিআই। আগামীতে সম্ভবত নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় তাঁকে আর অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হবে না।