নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে পরপর দু’টি টেস্ট সিরিজে ব্যর্থতার পর গত সপ্তাহে একটি রিভিউ বৈঠক আয়োজন করেছিলো বিসিসিআই (BCCI)। সেখানে উপস্থিত ছিলেন অধিনায়ক রোহিত শর্মা (Rohit Sharma), মুখ্য নির্বাচক অজিত আগরকার (Ajit Agarkar) ও হেড কোচ গৌতম গম্ভীর (Gautam Gambhir)। হতশ্রী পারফর্ম্যান্সের জন্য রীতিমত জবাবদিহি করতে হয়েছে তাঁদের। অস্ট্রেলিয়া সফর চলাকালীন ড্রেসিংরুমের অভ্যন্তরের নানান খবর চলে এসেছিলো বাইরে। কয়েকজন ক্রিকেটারের পারফর্ম্যান্সে খুশি নন কোচ গম্ভীর, রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছিলো ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে। কোচের সাথে অধিনায়কের সম্পর্ক নিয়েও শুরু হয়েছিলো গুঞ্জন। এহেন অনভিপ্রেত ঘটনা যাতে আর না ঘটে তা নিশ্চিত করতে মরিয়া বিসিসিআই (BCCI)। শৃঙ্খলার তারে তারকাদের বাঁধতে কড়া অবস্থান নিয়েছে তারা।
Read More: CT 2025: চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে মাথায় হাত নির্বাচকদের, একইসাথে চোটের কবলে দুই তারকা পেসার !!
গুরুত্ব ঘরোয়া ক্রিকেটে, চালু ‘ওয়েট লিমিট’-
ঘরোয়া ক্রিকেটকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার কথা আগেই ঘোষণা করেছিলো বিসিসিআই (BCCI)। নয়া নির্দেশিকায় তা আরও একবার মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে ক্রিকেটারদের। সুযোগ থাকলে রাজ্য দলের হয়ে মাঠে নামা যে বাধ্যতামূলক তা স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিটির চেয়ারম্যানের সম্মতি ছাড়া ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে বিরতি নিতে পারবেন না জাতীয় দলের তারকারা। ম্যাচ ও প্র্যাক্টিস সেশনে দলের সকল সদস্যদের একসাথে যাতায়াত করতে হবে। পরিবারের সাথে বা আলাদা ভাবে কোনো তারকা যাতায়াত করতে পারবেন না। যদি কোনো বিশেষ কারণবশত আলাদা যেতে চান কেউ, তার জন্য আগে থেকে মুখ্য নির্বাচক ও হেড কোচের অনুমতি নিতে হবে। দেশে ও বিদেশে কোনো সিরিজ চলাকালীন ক্রিকেটার ও সাপোর্ট স্টাফ’রা কত পরিমাণ মালপত্র বহন করতে পারবেন, নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে তাও।
বিদেশের মাঠে কোনো সিরিজ যদি ৩০ দিনের বেশী সময় ধরে চলে তাহলে ক্রিকেটারদের তিনটি ব্যাগ ও দুটি কিট ব্যাগ অথবা ১৫০ কিলোগ্রাম মালপত্র বহনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সাপোর্ট স্টাফদের ক্ষেত্রে ২টি বড় ও ১টি ছোট স্যুটকেসের অনুমতি দিয়েছে বিসিসিআই। ৮০ কিলোগ্রামের বেশী ওজন বহন করার অনুমতি নেই তাঁদের। ৩০ দিনের কম সময় যদি কোনো সিরিজ চলে তাহলে ক্রিকেটার ও সাপোর্ট স্টাফেরা যথাক্রমে ১২০ ও ৬০ কেজি মাল বহন করতে পারবেন। দেশের মাঠেও ক্রিকেটারদের ১২০ কেজি ও সাপোর্ট স্টাফদের ৬০ কেজি মালপত্র বহনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। যদি এর বেশী ওজন কেউ বহন করেন, তাহলে সেই অতিরিক্ত ওজনের খরচ তাঁকে দিতে হবে নিজের পকেট থেকে। বেঙ্গালুরুর এনসিতে মালপত্র পৌঁছনোর ক্ষেত্রেও ক্রিকেটারদের থেকে সহযোগিতা চেয়েছে বিসিসিআই (BCCI)।
পরিবারের সদস্যদের উপর লাগু বিধিনিষেধ-
নির্দেশিকা প্রকাশ করে বিসিসিআই (BCCI) জানিয়ে দিয়েছে যে দেশে অথবা বিদেশে কোনো ক্রিকেটার ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী, কর্মচারী, সহায়তাকারী বা রাঁধুনি নিয়ে যেতে পারবেন না। যাতায়াতে সুবিধা ও দলীয় সংহতি রক্ষার্থে এই পদক্ষেপকে অত্যন্ত জরুরী বলে মনে করছে বোর্ড। বিদেশ সফরে ক্রিকেটারদের পরিবারের সদস্যদের সামিল হওয়া নিয়েও জারি হয়েছে বিধিনিষেধ। বিদেশ সফর যদি ৪৫ দিনের বেশী দীর্ঘ হয় সেক্ষেত্রে ক্রিকেটারদের সাথে থাকতে পারেন তাঁদের স্ত্রী ও নাবালক সন্তানেরা। তবে ১৪ দিনের বেশী একসাথে থাকা চলবে না। এই দুই সপ্তাহ পরিবারের সদস্যদের থাকার ব্যয়ভার বিসিসিআই (BCCI) বহন করবে। অন্যান্য খরচ চালাতে হবে সংশ্লিষ্ট ক্রিকেটারকেই। হেড কোচ বা ,মুখ্য নির্বাচকের অনুমতি ছাড়া এই নিয়মের কোনো ব্যত্যয় ঘটানো চলবে না।
টি-২০ বিশ্বকাপ চলাকালীন শুভমান গিলের বিরুদ্ধে বাণিজ্যিক প্রচারে অংশ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিলো। এবার তা পুরোপুরি বেআইনি বলে ঘোষণা করে দিলো বোর্ড। কোনো সিরিজ বা টুর্নামেন্ট চলাকালীন ব্যক্তিগত কোনো বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপন বা অন্য অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারবেন না ক্রিকেটাররা। নির্দেশিকায় বিসিসিআই (BCCI) আরও জানিয়েছে যে প্র্যাক্টিস সেশন থেকে কেউ নির্দিষ্ট সময়ের আগে অব্যাহতি পাবেন না। অনুশীলন শেষে হোটেলে যাতায়াতও করতে হবে সতীর্থদের সঙ্গেই। নির্দিষ্ট সময়ের আগে কোনো ম্যাচ শেষ হয়ে গেলেও ক্রিকেটারদের সতীর্থদের সাথেই থাকতে হবে। সাময়িক বিরতি নিয়ে বাড়িতে বা পরিবারের সাথে সময় কাটাতে যাওয়া চলবে না। এছাড়া বিসিসিআই-এর যাবতীয় অনুষ্ঠান বা অন্যান্য বিজ্ঞাপনী দায়িত্ব ক্রিকেটারদের পালন করতে হবে বলেও স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।