Asia Cup 2025: গত ২২ এপ্রিল ভূস্বর্গ কেঁপে উঠেছিলো গুলির শব্দে। পহলগামের বৈশরণ উপত্যকায় নিরীহ পর্যটকদের উপর নির্বিচারে গুলি চালিয়েছিলো পাক মদতপুষ্ট সন্ত্রাসবাদীরা। ২৬ জন প্রাণ হারান। নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের বদলা হিসেবে ৭ মে ভোররাতে পাক অধিকৃত কাশ্মীর ও পাক ভূখণ্ডের নয়টি জায়গায় ক্ষেপনাস্ত্র হামলা চালায় ভারতীয় সেনাবাহিনী। গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় জঙ্গিঘাঁটি। এই অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছিলো অপারেশন সিঁদুর। পাক সেনার পাল্টা আক্রমণের চেষ্টা রুখে দেয় ভারতের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম। শেষমেশ ১০ মে ঘোষিত হয় সংঘর্ষবিরতি। অতীতেও বারবার ভারতের মাটিতে সন্ত্রাসবাদী হামলায় পাক যোগ প্রমাণিত হয়েছে। পহলগামের ঘটনার পর তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছিলো জনমানসে। সামাজিক ও রাজনৈতিক ভাবে পাকিস্তানকে সম্পূর্ণ বয়কটের দাবী তুলেছিলেন দেশবাসী।
Read More: ভারত বয়কট করায় WLC’এ অপমানিত পাকিস্তান দল, PCB নিলো এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত !!
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খেলেন নি প্রাক্তনীরা-

গত ২০ তারিখ ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ অফ লেজেন্ডস (WLC) টুর্নামেন্টে যাত্রা শুরু করার কথা ছিলো ভারতীয় প্রাক্তনীদের। প্রথম ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ হওয়ার কথা ছিলো পাকিস্তান চ্যাম্পিয়ন্সের। কিন্তু পহলগাম হত্যাকাণ্ড ও অপারেশন সিঁদুরের পর শাহীদ আফ্রিদি, কামরান আকমলদের বিরুদ্ধে খেলতে অস্বীকার করেন শিখর ধাওয়ান (Shikhar Dhawan), হরভজন সিং, সুরেশ রায়না’রা। নিজেদের সিদ্ধান্ত টুর্নামেন্ট উদ্যোক্তাদের জানিয়ে দেন তাঁরা। শেষমেশ বাতিল হয় সেই ম্যাচ। গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে নক-আউটে পৌঁছেছিলো পাক শিবির। চতুর্থ স্থানে থেকে শেষ চারের টিকিট আদায় করে ভারত’ও। ফলত সেমিফাইনালে ফের দেখা হওয়ার সম্ভাবনা ছিলো দুই দলের। কি দাঁড়ায় পরিস্থিতি সেদিকে নজর ছিলো সকলের। ফের একবার নিজেদের অবস্থানেই অনড় থাকেন ভারতীয় প্রাক্তনীরা। ট্রফি নয় বরং দেশপ্রেমকে অগ্রাধিকার দিয়ে সরে দাঁড়ান ম্যাচ থেকে।
এশিয়া কাপে উলটো নীতি বিসিসিআই-এর-

২০১৩’র পর পাকিস্তানের সাথে কোনো রকম দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলে নি ভারতীয় দল। সম্প্রতি এশিয়া কাপ (Asia Cup) ও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সময় ওয়াঘা সীমান্তের ওপারে গিয়ে কোনো ম্যাচও খেলে নি তারা। জঙ্গিহানার ঘটনার পর পড়শি দেশকে নিয়ে আরও কড়া নীতি গ্রহণ করবে বোর্ড। বহুদলীয় টুর্নামেন্টের ক্ষেত্রেও বয়কটের পথে হাঁটবেন রজার বিনি, দেবজিৎ সইকিয়ারা, আশায় ছিলেন দেশের ক্রিকেটজনতা। কিন্তু সকলকে অবাক করেই ২০২৫-এ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এশিয়া কাপে (Asia Cup) অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে সবুজ সংকেত দিয়েছে ভারতীয় ক্রিকেট নিয়ামক সংস্থা। গত ২৪ জুলাই যে সূচি প্রকাশ করেছে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল, তা অনুযায়ী ১৪ সেপ্টেম্বর গ্রুপ পর্বের ম্যাচে মুখোমুখি হওয়ার কথা দুই দলের। এমনকি শেষ চার পর্ব ও ফাইনালে আরও দুই বার সম্মুখসমরে নামতে পারে উপমহাদেশের দুই হেভিওয়েট দল। বোর্ডের সিদ্ধান্তে রীতিমত হতাশ সমর্থকেরা।
এশিয়া কাপ বয়কটের ঘটনা ঘটেছে আগে-

বহুদলীয় টুর্নামেন্ট বয়কট করা সম্ভব নয়। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মাঠে নামা থেকে বিরত থাকলেও আদতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে টিম ইন্ডিয়াই, এমনই যুক্তি খাড়া করছে বিসিসিআই,। কিন্তু ইতিহাস কিন্তু ভিন্ন কথাই বলছে। রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক কারণে এর আগেও দুইবার এশিয়া কাপ (Asia Cup) বয়কটের ঘটনা ঘটেছে। ১৯৮৬ সালে শ্রীলঙ্কান গৃহযুদ্ধের কারণে দ্বীপরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছিলো ভারতের। সেই কারণেই সেবার এশিয়া কাপ খেলে নি ‘মেন ইন ব্লু।’ অংশ নিয়েছিলো শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ। ফাইনালে পাক শিবিরকে হারিয়ে ট্রফি জেতে আয়োজক লঙ্কানরা। ১৯৯০-৯১ মরসুমের এশিয়া কাপ থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলো পাকিস্তান দল। কাশ্মীর ইস্যুতে ভারতের সাথে সম্পর্কের টানাপোড়েনের কারণে এহেন সিদ্ধান্ত নেয় পিসিবি। সেবার ট্রফি জিতেছিলো টিম ইন্ডিয়া। একই পথে এবার কেন হাঁটছে না বিসিসিআই? রয়েই গিয়েছে প্রশ্ন।