আইপিএলের (IPL) প্রথম সতেরো বছরের মধ্যে তিন বার ফাইনালে পা রেখেছিলো রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু (RCB)। কিন্তু প্রত্যেকবারই তীরে এসে ডুবেছিলো তরী। ‘ট্রফিহীন’ ও ‘চোকার্স’ তকমা যেন সেঁটে বসেছিলো ফ্র্যাঞ্চাইজির গায়ে। অবশেষে গত মঙ্গলবার সেই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পায় তারা। আহমেদাবাদের মাঠে পাঞ্জাব কিংস-কে হারিয়ে শেষমেশ পায় সাফল্যের স্বাদ। তা সমর্থকদের সাথে ভাগ করে নিতে চেয়েছিলেন কর্মকর্তারা। ঠিক ছিলো বুধবার ‘হোমগ্রাউন্ড’ চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে হবে বিজয়োৎসব। সব কিছু ঠিকঠাক এগোচ্ছিলো। বিধান সৌধ থেকে শোভাযাত্রাও সম্পন্ন হয় নির্বিঘ্নে। কিন্তু এরপরেই ঘোরালো হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। জনতার চাপে ভেঙে পড়ে নিরাপত্তাব্যবস্থা। চিন্নাস্বামীর গেটের বাইরে হুড়োহুড়িতে পদপিষ্ট হয়ে প্রাণ হারান ১১ জন সাধারণ ক্রিকেটপ্রেমী, আহত হন ৭৪ জন।
Read More: রাহুল-আথিয়া’র জীবনে নামলো অন্ধকার, হারালেন পরিবারের সদস্যকে !!
বেশ বেকায়দায় বেঙ্গালুরু-

বুধবারের বিপর্যয়ের দায় কার? আঙুল উঠছে বেঙ্গালুরু ফ্র্যাঞ্চাইজির (RCB) দিকে। ইতিমধ্যে কাবন পার্ক থানায় দায়ের হয়েছে এফআইআর। অভিযোগপত্রে নাম রয়েছে অনুষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক ডিএনএ এন্টারটেইনমেন্ট সংস্থা ও কর্ণাটক স্টেট ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনেরও। ইতিমধ্যেই কাবন পার্ক থানা ও সেন্ট্রাল ক্রাইম ব্রাঞ্চের (সিসিবি) যৌথ বাহিনী শুরু করেছে তদন্ত। গত পরশু দিন মুম্বই উড়ে যাচ্ছিলেন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর (RCB) মার্কেটিং হেড নিখিল সোসালে (Nikhil Sosale)। বিমানবন্দর থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এছাড়া তারা আটক করে সুমন্ত, কিরণ ও সুনীল ম্যাথিউ নামে ডিএনএ এন্টারটেইনমেন্ট সংস্থার তিন আধিকারিককেও। আরসিবি ভাইস প্রেসিডেন্ট রাজেশ মেনন (Rajesh Menon) ও কর্ণাটক ক্রিকেট সংস্থার সচিব ও কোষাধ্যক্ষও ছিলেন পুলিশের রেডারে। কিন্তু কার্যত পালিয়ে বাঁচেন তাঁরা।
বৃহস্পতিবার বিকালে বেঙ্গালুরু হাইকোর্ট খানিক স্বস্তি দেয় কর্ণাটক ক্রিকেট সংস্থার (KSCA) সচিব এ শঙ্কর ও কোষাধ্যক্ষ ই এস জয়রামকে। তাঁদের বিরুদ্ধে দমনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করার নির্দেশ দেন বিচারপতি এস আর কৃষ্ণকুমার। পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য্য হয়েছে ১৬ জুন। হাইকোর্টের রায় আসার পর ঘটনার নৈতিক দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে অবশ্য পদত্যাগ করেছেন তাঁরা। তবে অনুসন্ধান যে এখনও চলছে তা স্পষ্ট করেছে পুলিশ প্রশাসন। আরসিবি কর্তা রাজেশ মেনন, কিরণ কুমার, ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিকপক্ষ ডিয়াজিও রয়েছে আতসকাঁচের নীচে। ভবিষ্যতে আরও কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে বলে অনুমান করছে বিশেষজ্ঞমহল। আইনি সমস্যার পাশাপাশি ক্রিকেটের বাইশ গজেও সমস্যা বাড়তে পারে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্সের জন্য। গোটা বিষয়টির দিকে নজর রাখছে বিসিসিআই। শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে তারাও।
নির্বাসনের খাঁড়া ঝুলছে RCB-র ভাগ্যে-

বেঙ্গালুরুর (RCB) ট্রফি সেলিব্রেশন সম্পর্কে কোনো ধারণা ছিলো না বিসিসিআই-এর, সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট জানিয়েছেন আইপিএল চেয়ারম্যান অরুণ ধূমল। “এই ঘটনা যাতে ভবিষ্যতে আর না ঘটে তা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে,” বলেছেন বিসিসিআই সচিব দেবজিৎ সইকিয়াও (Devajit Saikia)। পদপিষ্ট হয়ে প্রাণহানির ঘটনায় বোর্ড যে রীতিমত অসন্তুষ্ট তা তাঁদের মন্তব্য থেকেই পরিষ্কার। আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলির সাথে বিসিসিআই-এর যে চুক্তিপত্র রয়েছে সেখানে দর্শক নিরাপত্তা সংক্রান্ত একাধিক ধারা উল্লিখিত রয়েছে। যদি প্রশাসনিক তদন্তে প্রমাণিত হয় যে আরসিবি’র (RCB) গাফিলতিতেই ১১ জন ক্রিকেটপ্রেমী প্রাণ হারিয়েছেন সেক্ষেত্রে তাদের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নিতে পারে বোর্ড। নির্বাসনের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। অতীতে দুই বছরের জন্য ‘নির্বাসিত হয়েছিলো চেন্নাই ও রাজস্থান। আইপিএলের ‘ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন’রাও যুক্ত হতে পারে সেই তালিকায়।