পথটা দেখিয়েছিলো ভারতের ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগই (IPL)। ২০০৮ সালে দেশের ক্রিকেট নিয়ামক সংস্থা BCCI-এর তত্ত্বাবধানে যে ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-২০ লীগ পথচলা শুরু করেছিলো, গত দেড় দশকে আড়ে-বহরে তার বিস্তার হয়েছে অনেকখানি। ক্রিকেট এবং বিনোদনের এই ককটেল চেটেপুটে উপভোগ করেন দুনিয়ার সকল ক্রিকেটপ্রেমী। দুই মাসব্যপী ক্রিকেটের কার্ণিভালে মাতোয়ারা হন সকলেই। কেবল ভারতীয় ক্রিকেটাররা নয়, বরং বিদেশী খেলোয়াড়রাও মুখিয়ে থাকেন বছরের দুটো মাস ভারতে এসে আইপিএলে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে।
আইপিএলের এই দুনিয়া জোড়া সাফল্য অন্যান্য দেশগুলিকেও উদ্বুদ্ধ করেছে তাদের নিজেদের টি-২০ লীগ চালু করার ব্যাপারে। অস্ট্রেলিয়ায় জন্ম নিয়েছে বিগ ব্যাশ (BBL)। একই পথ ধরে পাকিস্তান বা বাংলাদেশও নিয়ে এসেছে যথাক্রমে পিএসএল (PSL) এবং বিপিএল (BPL)।ক্রিকেটকে সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টায় রয়েছে আইসিসি। সেই প্রচেষ্টার অন্যতম মাধ্যম এই ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটই। আফগানিস্তান, শ্রীলঙ্কা, দক্ষিণ আফ্রিকার মত ক্রিকেটখেলিয়ে দেশগুলিতে যেমন গত কয়েকবছরে ফ্র্যাঞ্চাইজি লীগ পথচলা শুরু করেছে, তেমনই সংযুক্ত আরব আমিরশাহী, কানাডার মত ক্রিকেটীয় জগতে খানিক পিছিয়ে থাকা দেশগুলিতেও আত্মপ্রকাশ করেছে তাদের নিজস্ব ফ্র্যাঞ্চাইজি লীগ।
গ্ল্যামার বা ক্রিকেটের মানের নিরিখে বাকি লীগগুলির সাথে জোর টক্কর দিচ্ছেন কানাডার গ্লোবাল টি-২০ (GLT20) বা সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর আইএলটি-২০। এই পথে এবার হাঁটতে চলেছে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রেও। বাস্কেটবল, বেসবলের দেশে জায়গা করে নিতে চলেছে বাইশ গজের দ্বৈরথ। শুরু হতে চলেছে মেজর লীগ ক্রিকেট (MLC) প্রতিযোগিতা। দেশে-বিদেশে এই ধরণের প্রতিযোগিতার সংখ্যা যত বাড়ছে, ততই মাথাব্যথা বাড়ছে বিসিসিআই-এর। বিদেশি লীগ এবং তাতে ভারতীয় ক্রিকেটারদের অংশগ্রহণের ব্যাপারে গতকাল বোর্ডের সভায় দীর্ঘ আলোচনা হয় বলে খবর সংবাদমাধ্যম সূত্রে।
Read More: TOP 3: সৌরভ গাঙ্গুলীর আমলে ৩টি স্মরনীয় টেস্ট জয়, যা আজও ভক্তদের মনে গেঁথে আছে !!
বিদেশি লীগে খেলা না-পসন্দ BCCI-এর-
অন্যান্য দেশের ক্রিকেটাররা বিভিন্ন দেশের ক্রিকেট লীগে খেলার সুযোগ পেলেও ভারতীয় খেলোয়াড়দের সামনে এই সুযোগ থাকে না। অস্ট্রেলিয়ার বিগ ব্যাশ (BBL) বা ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের সিপিএলে (CPL) বিরাট কোহলি (Virat Kohli) বা রোহিত শর্মাদের (Rohit Sharma) খেলতে দেখার কোনো রকম সম্ভাবনা আপাতত নেই। ভারতের ক্রিকেট নিয়ামক সংস্থা বিসিসিআই এই ছাড়পত্র দেয় না ক্রিকেটারদের। তবে বর্তমানে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলি যে হারে লোভনীয় অর্থের টোপ দিচ্ছে ক্রিকেটারদের তাতে এই নিয়ম নিয়ে চিন্তায় খোদ বিসিসিআই’ই।
বর্তমানে বিভিন্ন দেশের লীগে দল মাঠে নামাচ্ছে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলি। ক্রিকেটারদের বিপুল অর্থের প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে জাতীয় দলের জার্সি ত্যাগ করে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে কেবল ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট খেলার জন্য। ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ার বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার এই প্রস্তাব পেয়েছেন বলে খবর।ভারতীয় ক্রিকেটারদের বাইরের দেশের লীগ খেলার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরো হতে পারে বলে মত বোর্ড কর্তাদের একাংশের। বাইরের দেশের লীগ খেলার লোভনীয় প্রস্তাব গ্রহণ করে দ্রুত জাতীয় দল থেকে অবসর নিতেন পারেন অনেকে, এমনটাই আশঙ্কা তাদের।
২০২৩-এর আইপিএলের পর ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছিলেন অম্বাতি রায়ডু (Ambati Rayudu)। পরে তিনি ঘোষণা করেন আমেরিকায় আয়োজিত হতে চলা মেজর লীগ ক্রিকেটে (MLC) টেক্সাস সুপার কিংসের (TSK) হয়ে খেলবেন তিনি। পরে অবশ্য ব্যক্তিগত কারণবশত সরে এসেছেন। একা রায়ডু নয়, সুরেশ রায়না (Suresh Rayudu), শান্তাকুমারন শ্রীশন্থদের (S Sreesanth) মত তারকাদেরও দেখা গিয়েছে অবসরের পর বিদেশী লীগে নাম নথিভুক্ত করাতে। বিসিসিআই-এর (BCCI) সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে বিদেশী লীগ খেলার পন্থা রুখতে কড়া অবস্থান নিতে পারে বোর্ড। ‘কুলিং অফ’ পিরিয়ড রাখার কথা ঘোষণা হতে পারে বলে জানা যাচ্ছে।
নতুন নিয়ম আনতে পারে বোর্ড-
দেশ-বিদেশে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে খেলোয়াড়রা নাম লেখানোয় গভীর সমস্যায় পড়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল। ভারতের অবস্থা যাতে তেমন না হয় তা নিয়ে সচেষ্ট বিসিসিআই (BCCI)। গতকাল মুম্বইতে বোর্ডের এপেক্স কাউন্সিলের সভায় বিদেশি লীগ খেলা নিয়ে আলোচনা হয়। সংবাদমাধ্যমকে বোর্ডের এক কর্তা বলেন, “এখন ক্রিকেটারেরা চাইলেই অবসর নিয়ে বিদেশের লিগে খেলতে চলে যেতে পারে। বিভিন্ন দেশের লিগে আইপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজ়িগুলো রয়েছে। ফলে ভারতীয় ক্রিকেটারদের দলে চাইবে তারা। চাপ দেবে। এই কারণে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড চিন্তিত।”
অবস্থানের পরিবর্তনের জন্য কি ভাবছে বিসিসিআই (BCCI)? প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, “অবসরের পর কুলিং অফ পিরিয়ড (একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত খেলতে না পারা) রাখা হতে পারে। অনেকগুলো বিষয় মাথায় রাখা হচ্ছে। এখনকার নিয়ম অনুযায়ী ক্রিকেটারেরা অবসরের পর বিদেশের টি-টোয়েন্টি লিগে খেলতে পারে। সেটাকে পরিবর্তন করা হতে পারে। দেখা যাক বোর্ড কী সিদ্ধান্ত নেয়।”