এশিয়া কাপ আয়োজন নিয়ে দীর্ঘ কয়েক মাস টানাপোড়েন চলেছে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে। আয়োজক তকমা হারাতে রাজী নয় পাকিস্তান। অপরদিকে পাকিস্তানে গিয়ে ক্রিকেট খেলার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই ভারতীয় দলের। এই নিয়েই তরজা চলেছে দুই দেশের মধ্যে। শুরুটা করেছিলেন বিসিসিআই সচিব জয় শাহ (Jay Shah) এবং পাকিস্তান বোর্ডের তখনকার চেয়ারম্যান রামিজ রাজা (Ramiz Raja)। এরপর দুই দেশ থেকেই প্রাক্তন ক্রিকেটারেরা গোটা বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলেন। বিবৃতি-পাল্টা বিবৃতিতে সরগরম হয়ে ওঠে ক্রিকেটমহল। ভারত থেকে বক্তব্য পেশ করেন ইরফান পাঠান, গৌতম গম্ভীর’রা। প্যাঘা সীমান্তের ওপার থেকে পালটা দেন সঈদ আনোয়ার, শাহীদ আফ্রিদিরা (Shahid Afridi)। পাকিস্তানের তরফে একের পর এক বিবৃতি জারি করা হলেও ভারত অবশ্য পাকিস্তান না যাওয়া নিয়ে নিজেদের অবস্থানে অনড় থেকেছে। সম্প্রতি পাকিস্তানের পেশোয়ারে জঙ্গী নাশকতার ঘটনা ভারতের পড়শি দেশে না যাওয়ার পদক্ষেপকে আরও দৃঢ় করেছে। এই আবহে বাহরিনে বসেছিলো এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল বা ACC-এ গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক। সেখান থেকেই সমাধানসূত্র আসতে চলেছে বলেছে খবর। মনে করা হচ্ছে ভারতের দাবী মেনে নিতেই চলেছে পাকিস্তান। পাক ভূমে নয় বরং নিরপেক্ষা সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর মাঠে।
এশিয়া কাপ নিয়ে কথার লড়াইয়ে ভারত-পাকিস্তান-

ভারতের ক্রিকেট বোর্ডের সচিব জয় শাহ (Jay Shah) জানিয়েছিলেন, কোনও অবস্থাতেই এশিয়া কাপ খেলতে পাকিস্তানে যাবে না ভারত। দরকারে কোনও নিরপেক্ষ দেশে খেলা হবে ২০২৩ সালের এশিয়া কাপ প্রতিযোগিতা। বিষয়টি ভালোভাবে নেন নি রামিজ রাজা (Ramiz Raja)। এই নিয়ে একাধিকবার ঘনিষ্ট মহলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন প্রাক্তন পিসিবি প্রধান। ২০২২-এ ঊর্দু নিউজ’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, “ভারতের আগামী বছর যে একদিনের বিশ্বকাপ হওয়ার কথা আছে, পাকিস্তান যদি সেখানে না খেলে, তবে খেলা দেখবে কে? আমাদের অবস্থান স্পষ্ট, যদি ভারত এখানে আসে, আমরাও যাবো বিশ্বকাপ খেলতে। যদি ওরা না আসে, তবে আমাদের ছাড়াই বিশ্বকাপ খেলতে হবে ভারত’কে। আগ্রাসী নীতি নেওয়ার কথা ভাবছি আমরা।” বিষয়টি নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে BCCI সভাপতি রজার বিনি (Roger Binny) বল ঠেলে দেন কেন্দ্রীয় সরকারের দিকে। তাঁদের সবুজ সঙ্কেত ছাড়া কিছু সম্ভব নয় বলেন বিনি। মূলত সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন থাকার কারণেই পাকিস্তানে যেতে রাজী নয় ভারত। তা নিয়ে ঘুরিয়ে ভারতীয় বোর্ড’কে খোঁচা দিয়েছিলেন রামিজ (Ramiz Raja)। বলেন, “কি হবে যদি পাকিস্তান সরকার ক্রিকেটারদের সুরক্ষার কারণে ভারতে যাওয়ার ছাড়পত্র না দেয়? বিতর্কের শুরুটা বিসিসিআই করেছে। আমাদের পালটা জবাব দিতেই হত।” আরেক পাক প্রাক্তণী সঈদ আনোয়ার (Saeed Anwar) পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডকে অনুরোধ জানিয়েছিলেন আইসিসি’র কাছে অভিযোগ জানাতে। ভারত থেকে একদিনের বিশ্বকাপ যেন সরিয়ে দেওয়া হয়, এই দাবী জানান তিনি।
বাহরিন বৈঠকে মিলেছে সমাধান?

বাহরিনে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলভুক্ত দেশগুলির উচ্চপদস্থ ক্রিকেট কর্তারা সম্প্রতি এক বৈঠকে মিলিত হন। মূলত এশিয়া কাপের জন্য স্থান বেছে নিতেই আলোচনায় বসেছিলেন তাঁরা। চলতি বছর সেপ্টেম্বরে বসতে চলেছে এশিয়া কাপের আসর। পূর্বে আয়োজক দেশ হিসেবে পাকিস্তানকে বেছে নেওয়া হলেও ওয়াঘা সীমান্তের ওপারে ক্রিকেট খেলতে যাওয়ার ব্যাপারে বেঁকে বসে ভারতীয় বোর্ড। ভারতীয় বোর্ডের সচিব এবং এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের চেয়ারম্যান জয় শাহ (Jay Shah) এই মর্মে বিবৃতি দেন। এই জট কাটার সম্ভাবনা অবশেষে দেখা গিয়েছে বাহরিন বৈঠক থেকে। বাহরিনে দীর্ঘ আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের চেয়ারম্যান নাজম শেঠি (Najam Sethi)। ছিলেন ভারতের জয় শাহ’ও। শোনা যাচ্ছে ভারতের দাবী মেনে নিয়ে এশিয়া কাপ আয়োজন করা থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পাকিস্তান। “বৈঠকে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। প্রতিযোগিতার সাফল্যের কথা মাথায় রেখে ভবিষ্যতে কার্য্যপ্রণালী, সময়কাল এবং অন্যান্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।” ACC’র তরফে এই মর্মে একটি বিবৃতি জারি করা হয়েছে। এখনও সরকারী ঘোষণা না হলেও এশিয়া কাপ যে সরছে, তা একপ্রকার নিশ্চিত। নাম গোপন রাখার শর্তে এক উচ্চপদস্থ বিসিসিআই কর্তা সংবাদসংস্থা PTI’কে জানিয়েছেন পাকিস্তানের এশিয়া কাপ আয়োজনের সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ, “ভারত পাকিস্তানে না গেলে টুর্নামেন্ট সরাতেই হবে। বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা, শুভমান গিল’রা না খেললে স্পন্সররা সরে আসবে প্রতিযোগিতা থেকে।” সদ্যই পিসিবি’র গদিতে বসেছেন নাজম শেঠি (Najam Sethi)। ভারতের দাবীর সামনে মাথানত করলে দেশে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতেই পারত। তবে পাকিস্তানে বর্তমানে অর্থনৈতিক অচলাবস্থা চলছে। এশিয়া কাপের মত বড় প্রতিযোগিতা আয়োজনের খরচ বহনের কথা চিন্তা করে শেষমেশ হয়ত টুর্নামেন্ট আমিরশাহীতে সরানোর ব্যাপারেই সবুজ সঙ্কেত দেবে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড।