সদ্য সমাপ্ত এশিয়া কাপের ফাইনাল বাদে ১২টি ম্যাচেই দেখা গেছে তুমুল উত্তেজনা নাটকীয়তা। নাটকীয়তার ধার অবশ্য সবচেয়ে বেশি ছিল ভারত-বাংলাদেশ ফাইনাল ম্যচে। অবশেষে সব নাটকীয়তার অবসান ঘটিয়ে এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে টিম ইন্ডিয়া।
আধুনিক ক্রিকেটে একদিনের ফরম্যাটের ম্যাচগুলোতে সাধারণত ৩০০ এর কাছাকাছি রান হলেও এশিয়া কাপে ২৫০-২৬০ রানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল বেশিরভাগ দলের স্কোর।
এবার একনজরে দেখে নেওয়া যাক জমজমাটপূর্ণ এশিয়া কাপের সেরা ৫টি মুহূর্ত।
৫. আফগান ক্রিকেটের উত্থান
‘এশিয়া কাপ ২০১৮’ আসরে ভারতের পাশাপাশি পাকিস্তান ফেভারিট ছিল আগে থেকেই। অন্যদিকে এই আসরের আগে আরো দুইবার ফাইনাল খেলা বাংলাদেশও যে ছেড়ে কথা বলবে না তাও ভেবে রেখেছিলেন অনেকেই। সবকিছু ছাপিয়ে আফগান বোলিং আক্রমণ যে ক্ষুরধার পারফরম্যান্স দেখাবে সেটা হয়তো অগোচরেই ছিল অনেকের।
প্রথমবার এশিয়া কাপ খেলতে আসা আফগানরা গ্রূপ পর্বে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে জায়গা করে নেয় সুপার ফোরে। সুপার ফোরে এসে বাংলাদেশ, পাকিস্তানের সাথে লড়াই করে হারার পর ভারতের সাথেও ড্র করে রশিদ-মুজিবের আফগানিস্তান। এমন তুখোড় পারফরম্যান্সের পর আর কারো বুঝতে বাকি রইল না আফগান দলের সামনে রয়েছে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ।
৪. শ্রীলঙ্কার বিদায়
এশিয়া কাপের ৫ বারের চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কা এবার গ্রূপ পর্ব টপকে সুপার ফোরেই জায়গা করে নিতে ব্যর্থ হয়। মূলত লঙ্কান দলের সিনিয়র ক্রিকেটার মাহেলা জয়াবর্ধনে, কুমার সাঙ্গাকারা, দিলশানদের মত তারকা ক্রিকেটাররা অবসর গ্রহণ করার পর থেকেই ভঙ্গুর দলে পরিণত হয়েছে ‘সিংহ’ প্রতীকধারী শ্রীলঙ্কা।
গ্রূপ পর্বে টুর্নামেন্ট উদ্বোধনী ম্যাচে বাংলাদেশের কাছে ১৩৭ রানের বিশাল ব্যবধানে হার ও এশিয়া কাপের নবীন দল আফগানিস্তানের বিপক্ষে আবারও ৯১ রানে হেরে গ্রূপ পর্ব থেকেই বিদায় নেয় লঙ্কানরা। এক মালিঙ্গা ছাড়া দলের অন্য সিনিয়রদের নিষ্প্রভ পারফরম্যান্সের কারণেই এমনটা ঘটেছে বলে অনেক ক্রিকেটবিদরা মনে করেন।
৩. ইনজুরি নিয়ে তামিম ইকবালের ব্যাটিং
গ্রূপ পর্বের ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচে ব্যাটিং করতে নেমে শুরুতেই আঙুলের ইনজুরিতে পড়ে রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে মাঠ ছাড়েন তামিম ইকবাল। অন্যদিকে ৪৭ ওভারে যখন টাইগারদের নবম উইকেটের পতন ঘটলে ইনজুরি নিয়েই ব্যাট হাতে মাঠে প্রবেশ করেন সব ফরম্যাটে বাংলাদেশের সেরা ব্যটসম্যান তামিম। এক হাত পেছনে রেখে অন্য হাতে ব্যাট নিয়ে একটি বল মোকাবেলা পর্যন্ত করেন তামিম। অপর প্রান্তে সেট ব্যাটসম্যান মুশফিক পরবর্তিতে তামিমকে আর স্ট্রাইকে না পাঠালেও ৩১ রানের জুটি গড়ে দলের স্কোর ২৬১ রানে নিয়ে যান। বাংলাদেশ ম্যাচও জিতে বড় ব্যবধানে।
এশিয়া কাপের এই মুহূর্তটি মনে রাখবে সকল ক্রিকেটপ্রেমিরা তা বলা যায় চোখ বুজেই।
২. হংকংয়ের চমক
ওয়ানডে স্ট্যাটাস না থাকা হংকং এশিয়া কাপের ষষ্ঠ দল হিসেবে কোয়ালিফাই করে গ্রূপ পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে নেয়। পাকিস্তানের সাথে গ্রূপ পর্বের ম্যাচে আট উইকেটে হারলেও প্রথমবারের মত ভারতের বিপক্ষে খেলতে নেমেই ২৮৬ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে আনশুমান রথ ও নাজিকাত খান ওপেনিং জুটিতে করেন ১৭৪ রান যা নজর কাড়ে সবার। তবে ওপেনিং জুটি প্যাভিলিয়নের পথ ধরলে তাসের ঘরের মত ভেঙে পড়ে হংকংয়ের ব্যাটিং লাইনআপ। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ হারলেও এমন চোখধাঁধানো পারফরম্যান্স মনে রাখার মতই সকল ক্রিকেটপ্রেমিদের কাছে।
১. অধিনায়ক হিসেবে মহেন্দ্র সিং ধোনির প্রত্যাবর্তন
গ্রূপ পর্ব পেরিয়ে আসা আফগানদের সাথে সুপার ফোরের ম্যাচে এশিয়া কাপের নিয়মিত অধিনায়ক রোহিত শর্মা বিশ্রামে থাকলে ক্যাপ্টেনের দায়িত্ব কাঁধে উঠে প্রাক্তন অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনির। ২০১৬ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সবশেষ ওয়ানডে ম্যাচে অধিনায়কত্ব করা ধোনি আফগানদের বিপক্ষে ম্যাচে ক্যাপ্টেন হিসেবে নেমে একদিনের ক্রিকেটে ক্যাপ্টেন হিসেবে ২০০ ম্যাচ খেলার রেকর্ড গড়েন। যা ভারতীয় কোনো ক্রিকেটার হিসেবে ক্যাপ্টেনের দায়িত্ব পালন করার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ।