লাল বলের ফর্ম্যাটে সাফল্যের মুখ না দেখলেও T20তে দুর্দান্ত গতিতে এগিয়ে চলেছে ভারতীয় ক্রিকেট দল। গত জুনে কুড়ি-বিশের বিশ্বকাপ জিতেছে তারা। এরপর জিম্বাবুয়ে সফরে একঝাঁক সিনিয়রকে বিশ্রাম দিয়েও সিরিজ জিতেছে ৪-১ ফলে। নয়া কোচ গম্ভীর ও নয়া অধিনায়ক সূর্যকুমারের (Suryakumar Yadav) ইনিংস শুরু হয়েছিলো শ্রীলঙ্কা সফর থেকে। অশ্বমেধের দৌড় চলছে তাঁদের অধীনেও। লঙ্কানদের ৩-০ উড়িয়ে দিয়েছে ভারত। এরপর ঘরের মাঠে বাংলাদেশের বিপক্ষেও এসেছিলো দাপুটে জয়। ২০২৪-এর শেষটা ভারতীয় T20 শিবির করেছিলো দক্ষিণ আফ্রিকার মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৩-১ হারিয়ে। নতুন বছরের শুরুটাও কুড়ি-বিশের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা করলো দাপটের সাথেই। ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডকে ৪-১ ফলে উড়িয়ে দিলো তারা। অভিজ্ঞতার সাথে তারুণ্যের দুর্দান্ত মিশেলই ‘মেন ইন ব্লু’র T20 সাফল্যের মূলমন্ত্র বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞমহল।
Read More: চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জেতা হচ্ছে না টিম ইন্ডিয়ার, চোটের কারণে দল থেকে আউট ‘X-ফ্যাক্টর’ !!
T20’র আকাশে নতুন তারা অভিষেক-
গত কয়েক মাসে কুড়ি-বিশের ক্রিকেটে অভিষেক শর্মা’র (Abhishek Sharma) ব্যাটিং মোহিত করেছে বিশেষজ্ঞদের। ইনিংসের প্রথম বল থেকে বড় শট খেলার সহজাত দক্ষতা রয়েছে তাঁর। জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে প্রথমবার মাঠে নেমেছিলেন জাতীয় দলের জার্সিতে। কেরিয়ারের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক ম্যাচে ঝোড়ো শতরান করে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন যে লম্বা রেসের ঘোড়া হতে চলেছেন তিনি। আক্রমণাত্মক ব্যাটিং-এ যে ঝুঁকিও রয়েছে তা বিলক্ষণ জানে ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট। বেশ কিছু ম্যাচে শুরুটা ভালো করেও তাই ১৫ বা ২০ রানের মধ্যে আউট হয়েছেন অভিষেক (Abhishek Sharma)। কিন্তু তাঁকে নিয়ে ধৈর্য্য হারান নি কোচ গম্ভীর বা থিঙ্কট্যাঙ্কের অন্যান্যরা। নিয়মিত সুযোগ দিয়ে গিয়েছেন পাঞ্জাবের ২৪ বর্ষীয় বাম হাতিকে। সেই আস্থার প্রতিদান অবশ্য নিজের পারফর্ম্যান্স দিয়েই দিয়েছেন অভিষেক। মাতিয়েছেন বাইশ গজ।
ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সিরিজের শুরুটাই দুর্দান্ত গতিতে করেছিলেন অভিষেক শর্মা (Abhishek Sharma)। ইডেন গার্ডেন্সে মাত্র ৩৪ বলে তিনি করেন ৭৯ রান। এরপরের তিনটি ম্যাচে সেরা ছন্দে পাওয়া যায় নি তাঁকে। ১২, ১৪ ও ২৯ করেই ফিরেছেন সাজঘরে। কিন্তু শেষ ম্যাচে ফের বোঝালেন কেন তাঁকে প্রজন্মের অন্যতম সেরা T20 ব্যাটার বলা হচ্ছে। মুম্বইয়ের ওয়াংখেড়েতে শুরুতেই সঞ্জু স্যামসন (Sanju Samson) ফেরায় চাপে পড়েছিলো টিম ইন্ডিয়া। সেখান থেকে দল উদ্ধার করার পাশাপাশি প্রতিপক্ষের উপর পালটা চাপ দেওয়ার কাজটাও দুর্দান্ত ভাবে করেন অভিষেক (Abhishek Sharma)। ১৭ বলে পেরোন অর্ধশতক, ৩৭ বলে টপকে যান শতকের গণ্ডী। শেষমেশ ২৫০ স্ট্রাইক রেটে ১৩৫ করে থামেন তিনি। ৫৪ বলের ইনিংস সাজান ১৩টি ছক্কা ও ৭টি চারের সাহায্যে। আগামী বছরের T20 বিশ্বকাপ স্কোয়াডে জায়গাও কার্যত পাকা করে নেন তিনি।
একঝাঁক রেকর্ড গড়লেন অভিষেক শর্মা-
মুম্বইতে অভিষেকের (Abhishek Sharma) ঝোড়ো ইনিংসের সৌজন্যে নির্ধারিত ২০ ওভারে ২৪৭ তোলে ভারতীয় দল। জবাবে ইংল্যান্ড গুটিয়ে গিয়েছিলো ৯৭ রানেই। ১৫০ রানের ব্যবধানে জয় পায় ‘মেন ইন ব্লু।’ সবচেয়ে বেশী রানের ব্যবধানে হারের লজ্জার সম্মুখীন হতে হয় ২০০৯ ও ২০২২-এর বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের। অনবদ্য ইনিংস খেলে একের পর এক নয়া রেকর্ড গড়েন পাঞ্জাবের বাম হাতিও। সূর্যকুমার যাদব, কে এল রাহুলদের পিছনে ফেলে ভারতের জার্সিতে দ্বিতীয় দ্রুততম অর্ধশতকের মালিক হলেন তিনি। T20 শতরানের ক্ষেত্রেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এখন তিনি দ্বিতীয় দ্রুততম। এছাড়াও কুড়ি-বিশের ক্রিকেটে ভারতীয়দের মধ্যে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ রান ও সর্বোচ্চ ছক্কা হাঁকানোর রেকর্ড’ও নিজের করে নিয়েছেন অভিষেক (Abhishek Sharma)। আন্তর্জাতিক T20তে তাঁর স্ট্রাইক রেট ১৯৩.৮৪। গোটা দুনিয়ায় তার আশেপাশেও নেই কেউ।