ভারতীয় দলের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান হলেন বিরাট কোহলি (Virat Kohli)। ২৪ হাজারের বেশি রান বানিয়ে ফেলেছেন তিন ফরম্যাট জুড়ে। তার ১৫ বছরের ক্যারিয়ারে বিরাট ৭৮ টি সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ফেলেছেন, তার সামনে রয়েছে শচীন টেন্ডুলকারের সর্বাধিক ওডিআই সেঞ্চুরি রেকর্ড ভাঙ্গার। আশা করা যায় খুব শীঘ্রই তিনি এই রেকর্ডটি ভেঙে ফেলতে চলেছেন, এমনকি এই বিশ্বকাপে দুর্দান্ত ছন্দে রয়েছেন কিং কোহলি। ভারতীয় দলের কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান টুর্নামেন্ট জুড়ে বেশ দারুন পারফরমেন্স দেখাচ্ছেন। একটি শতরান ও চারটি অর্ধশতরান সহ বিরাট এই বিশ্বকাপে ভারতের সর্বাধিক রান স্কোরার। তবুও বিরাটকে পছন্দ করতে পারেননা তিন কিংবদন্তী, প্রকাশ্যেই করে বিরাটকে অপমান।
Read More: আইপিএলের আঙিনায়ক আরসিবির জার্সি গায়ে এই ৩ বড় বিতর্ক ঘটিয়েছেন বিরাট, ভুলতে পারেননি ফ্যানরা !!
১. সুনীল গাভাস্কার
বিরাট কোহলির খারাপ সময় তাকে নিয়ে তামাশা করেছিলেন কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান সুনীল গাভাস্কার (Sunil Gavaskar)। ভারতীয় দলের এই কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান কোভিডের লকডাউনের পর যখন আইপিএল (IPL 2020) শুরু হয়েছিল তখন এবিষয়ে একটি মন্তব্য করেছিলেন। কোহলি ২০২০ আইপিএলে পরপর দুই ম্যাচে ফ্লপ হয়েছিলেন কিন্তু সে সময় কোহলির পাশে না দাঁড়িয়ে অত্যন্ত কুৎসিত মন্তব্য করেছিলেন ভারতের কিংবদন্তী ওপেনার সুনীল গাভাস্কার।
পাঞ্জাবের বিরুদ্ধে একটি ম্যাচে পেসার শেল্ডন কটরেলের বলে যখন বিরাট কোহলি ক্যাচ আউট হয়ে প্যাভিলিয়নের দিকে রওনা দিচ্ছিলেন, তখন সুনীল গাভাস্কার হিন্দিতে কমেন্ট্রি করছিলেন এবং মন্তব্য করে বলে উঠেছিলেন, “ইনহোনে লকডাউন মে বাস অনুষ্কা কি গেন্দোঁ কি প্র্যাকটিস কি হ্যায়।”
অর্থাৎ তিনি বোঝাতে চেয়েছিলেন যে, “কোহলি লকডাউনে শুধু অনুষ্কার বলেই অনুশীলন করেছেন।” শুধু এখানেই থেমে থাকেন এরপরে কোহলির ভিতর যে ইগো রয়েছে তার একটি বর্ণনা তিনি দিয়েছিলেন। আসলে তিন বছর ধরে বিরাটের ব্যাট তুলনামূলকভাবে শান্ত ছিল, এমন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে বিরাট ২০১৪ সালেও কাটিয়েছিলেন, তবে সেই সময় তিনি শচীন তেন্ডুলকরের সাহায্য নিয়েছিলেন বিরাট। যদিও সে সময় একজন তরুণ প্লেয়ার ছিলেন বিরাট আর কিছু বছর পর নিজে যখন একজন কিংবদন্তিতে পরিণত হয়েছেন তখন সচিনের থেকে পরামর্শ নিতে বিরাটের ইগোর সমস্যা হয়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন।
২০২৪ আইপিএলে (IPL 2024) বিরাট কোহলিকে নিয়ে নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন এই ক্রিকেট লেজেন্ড। তিনি বিরাটের স্ট্রাইক রেটের উপর প্রশ্ন তুলেছেন। মন্তব্য করে তিনি বলেন, “একজন ওপেনার যখন মাঝের ওভারে ব্যাটিং করেন তিনি ১১০-১২০ স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করতে পারেননা।” গাভাস্কারের এই বয়ানের সাপেক্ষে কোহলি কমেন্টেটরদের উদ্যেশ্যে বলেন, “যারা আমার স্ট্রাইক রেট নিয়ে কথা বলছেন তারা হয়তো জানেন না আমি এমনটা দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে করে আসছি। দলের জয় আসছে কিনা সেটা দেখতে হবে, আপনারা কখনো এমন পরিস্থিতির মুখে পড়েছেন কিনা জানি না। বক্সের মধ্যে বসে সমালোচনা করছেন।“
যদিও কোহলির দেওয়া বয়ানে একদম খুশি হননি গাভাস্কার। মন্তব্য করে তিনি আরও জানিয়েছেন যে, “আপনারা যখন বলেন আপনারা বাইরের কোনো আলোচনায় কান দেননা, তাহলে আপনারা উত্তর কেন দেন ? মিডিল ওভারে যখন আপনার স্ট্রাইক রেট কম ছিল তখন ধারাভাষ্যকাররা প্রশ্ন তুলে ছিলেন। আমরা কমবেশি ক্রিকেট খেলেছি, যদিও সেটা খুব বেশি নয়। আমরা যা দেখি তাই বলি, আমাদের কেউ পছন্দ বা অপছন্দের নয়।“
২. কপিল দেব
বিরাট কোহলির (Virat Kohli) অন্যতম বড় সমালোচক হলেন কপিল দেব (Kapil Dev)। ভারতীয় ক্রিকেটের রূপধর বলা হয় কপিল দেবকে। তবে তার করা নানান মন্তব্য ভারতীয় ক্রিকেটকে খন্ডবিখণ্ড করে দেয়, প্রসঙ্গত বিরাট কোহলির খারাপ ফর্মের সময়ে তিনি নানা রকম মন্তব্য করেছিলেন যা তার মতন একজন কিংবদন্তীর থেকে শোভা পায় না। আসলে তিন বছর খারাপ ফর্ম থাকাকালীন বিরাটকে সন্ন্যাস নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন তিনি। একটি সাক্ষাৎকারে ২০২২ বিশ্বকাপে বিরাট কোহলিকে দলে বাছাই না করার পরামর্শ দিয়েছিলেন কপিল।
যদিও তার এই কমেন্টের পিছনে লুকিয়ে রয়েছে অনেক কারণ। আসলে ভারতীয় ক্রিকেট এটা অনেকবার দেখা গিয়েছে তিন ফরমেটে খেলা কোন প্লেয়ার যদি একটা ফরম্যাটে খারাপ পারফরমেন্স দেখায় তাহলে তাকে অন্য ফরম্যাটে তাকে বসিয়ে দেওয়া হয়। ঠিক এমনটাই করতে দেখা গিয়েছিল রবিচন্দন অশ্বিনের ক্ষেত্রে, ২০২১-২২ সাল নাগাদ ইংল্যান্ডে চলাকালীন টেস্ট সিরিজের একটি ম্যাচেও খেলানো হয়নি তাকে। ইংল্যান্ডের পরিস্থিতি বিচার করেই তাকে দেওয়া হয়নি সুযোগ। যেখানে খারাপ ফর্মে থাকা বিরাট কোহলি কে পুরো সিরিজেই খেলানো হয়েছিল তখন কপিল দেব প্রশ্ন তুলে বলেছিলেন, “কোহলিকে আরও ভাল পারফরম্যান্স করতে হবে এবং যদি স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে টেস্ট দল থেকে বাদ দেওয়া যায়, তবে বিরাটকেও টি-টোয়েন্টি স্কোয়াড থেকে বাদ দেওয়া উচিত।”
৩. গৌতম গম্ভীর
গৌতম গম্ভীরের সঙ্গে বিরাট কোহলির (Virat Kohli) সম্পর্ক সমাজের মাধ্যমে চর্চায় থাকে ভারতীয় দলের দুই কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান চর্চার মধ্যে থাকে সমাজ মাধ্যমে। ২০১৩ সালে দু’জনের মধ্যে প্রথম ঝামেলা দেখা যায়। কলকাতা নাইট রাইডার্স ও রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের মধ্যে চলাকালীন এক ম্যাচে দলের দুই অধিনায়ক গম্ভীর ও কোহলির মধ্যে কথা কাটাকাটি দেখা যায়। তবে সতীর্থরা এগিয়ে এসে দু’জনকে সরিয়ে নিয়ে যান। এরপর আবার ২০১৬ সালে দুজনেই মধ্যে কথা কাটাকাটি দেখা যায়।
এবার ইডেন গার্ডেন্সে খেলা কলকাতা ও ব্যাঙ্গালুরু ম্যাচে গম্ভীর বিরাটের দিকে আক্রমণাত্মক হয়ে যায়। আসলে ম্যাচের শেষের দিকে গৌতম গম্ভীর বিরাটের দিকে বল ছুঁড়ে মারেন। যেটা নিয়ে দু’জনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। তবে দুজনের মধ্যে আবার ২০২৩ আইপিএল সিজিনে কথা কাটাকাটি করতে দেখা যায়, মূলত ব্যাঙ্গালুরু ও লখনৌ’এর ম্যাচে দুই জনের মধ্যে আবার কথা কাটাকাটি হয়। বারবার কোহলির সঙ্গে এমন দ্বন্দ্ব করতে দেখা গিয়েছে গম্ভীরকে।এমনকি বিরাটের ব্যাবহার নিয়ে বারবার প্রশ্ন তুলেছেন গম্ভীর, তাছাড়া কমেন্ট্রি করার সময় বিরাটকে প্রশংসা করতেও তিনি চাননা, সবসময় বিষয়গুলি এড়িয়ে চলেন।