WI vs IND: প্রথম টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে দাপুটে জয় ছিনিয়ে নিয়েছিলো ভারত। ডোমিনিকার উইন্ডসর পার্কে আগাগোড়া প্রাধান্য রেখেছিলো রোহিত শর্মার দলই। টসে জিতে প্রথমে ব্যাটিং বেছে নিয়েছিলেন উইন্ডিজ অধিনায়ক ক্রেগ ব্রেথওয়েট (Kraigg Braithwaite)। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত শেষমেশ ব্যুমেরাং হয়ে ফেরে তাদের জন্যই। বল হাতে তাঁদের ভাঙেন রবিচন্দ্রণ অশ্বিন। মাত্র ১৫০ রানে গুটিয়ে যায় উইন্ডিজ ইনিংস। জবাবে ব্যাট করতে নেবে নবাগত যশস্বী জয়সওয়াল (Yashasvi Jaiswal) এবং অধিনায়ক রোহিত শর্মার (Rohit Sharma) জোড়া শতরানে ভর করে ভারত তোলে ৪২১ রান। দ্বিতীয় ইনিংসেও অশ্বিনের (Ravichandran Ashwin) ঘূর্ণিতে কাত হয় ক্যারিবিয়ান’রা। গুটিয়ে যায় ১৩০ রানেই। দুই ইনিংস মিলিয়ে মোট ১২ উইকেট নিয়ে জয় সুনিশ্চিত করেন অশ্বিন। হোল্ডার, কেমার রোচদের বিপক্ষে ভারত জেতে ইনিংস ও ১৪১ রানের ব্যবধানে।
প্রথম টেস্টে ভারতীয় ব্যাটার এবং স্পিনাররা দুর্দান্ত পারফর্ম করেন। যশস্বী ও রোহিত ছাড়াও চমৎকার ৭৬ রানের ইনিংস খেলেন বিরাট কোহলি (Virat Kohli)। রবীন্দ্র জাদেজাও দুই ইনিংস মিলিয়্বে ৫ উইকেট পান। কিন্তু আশানুরূপ পারফর্ম্যান্স করে দেখাতে পারেন নি ভারতীয় পেসার’রা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে প্রায় আনকোরা এক পেস আক্রমণ নিয়ে মাঠে নেমেছিলো টিম ইন্ডিয়া। মহম্মদ সিরাজ (Mohammed Siraj) এবং শার্দূল ঠাকুরের সাথে জুড়ে দেওয়া হয়েছিলো জয়দেব উনাদকাটকে।
দুই ইনিংস মিলিয়ে সিরাজ ২ উইকেট পান। প্রথম ইনিংসে ১ উইকেট পান শার্দূল। হতাশ করেছেন জয়দেব উনাদকাট’ও (Jaydev Unadkat)। দুই ইনিংস মিলিয়ে ৯ ওভার হাত ঘুরিয়ে ১৮ রান দিলেও কোনো উইকেট পান নি তিনি। পেস ব্যাটারির ব্যর্থতার পর দ্বিতীয় টেস্টে খানিক বদলের পথে হেঁটেছে টিম ইন্ডিয়া। শার্দূল (Shardul Thakur) চোট পাওয়ায় জায়গা দেওয়া হয়েছে মুকেশ কুমারকে (Mukesh Kumar)।
Read More” রোহিত শর্মার জন্য কাল হবেন এই খেলোয়াড়, হার্দিক নিজের হাতেই করছেন তৈরি !!
লড়াই করে লাইমলাইটে মুকেশ কুমার-
মুকেশের জন্ম বিহারের গোপালগঞ্জ জেলায়। গ্রামের নাম কঙ্কর কুন্দ। বাবা কলকাতায় ট্যাক্সি চালাতেন। কাজের সন্ধানে বিহার ছেড়ে কলকাতা এসেছিলেন অল্প বয়সেই। ক্রিকেটে প্রতিভা থাকলেও বাবা চেয়েছিলেন সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্সে যোগ দিন মুকেশ (Mukesh Kumar) । দুইবার পরীক্ষা দিয়েও ব্যর্থ হন তিনি। অর্থ উপার্জনের চেষ্টায় হাতে তুলে নিয়েছিলেন টেনিস বল। কলকাতা ও শহরতলীর খেপের ময়দানে নিয়মিত দেখা যেত তাঁকে। ৫০০ থেকে ৫০০০ টাকার বিনিময়ে বল হাতে নিজেকে উজাড় করে দিতেন তিনি। মুখ থুবড়ে পড়েছিলো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার স্বপ্ন।
একই সাথে জীবনকে কষ্টে ভরিয়ে তুলেছিলেন দুরারোগ্য ‘বোন এডেমা’ রোগ। হাঁটুতে তরল জমার ফলে মাঠের বাইরে সময় কাটাতে হত তাঁকে। বারবার ছুটতে হত হাসপাতাল বা কোনো রিহ্যাব সেন্টারে। ধুঁকতে থাকা মুকেশের (Mukesh Kumar) ক্রিকেট কেরিয়ারে বদলটা আসে ২০১৪ সালে। প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (Sourav Ganguly) যখন ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অফ বেঙ্গলের (CAB) প্রধান ছিলেন, তখন ভবিষ্যতের তারকাদের চিহ্নিত করার জন্য ‘ভিশন ২০২০’ নামে এক প্রকল্প চালু করেছিলেন। ভিভিএস লক্ষ্মণ (VVS Laxman), মুথাইয়া মুরলীথরনের মত তারকারা এই প্রকল্পের সাথে যুক্ত ছিলেন। এই প্রকল্পতে অংশ নিয়েই পেস বোলিং মেন্টর রণদেব বোসের নজরে পড়ে যান তিনি।
তাঁর গতি ও অফ স্টাম্পের বাইরের লাইনে দীর্ঘ সময় ধরে নিখুঁত থাকার দক্ষতা রণদেবের (Ranadeb Bose) নজর কেড়ে নিয়েছিলো। ট্রায়ালে ব্যর্থ হলেও রণদেবের কথাতেই মুকেশ কুমারের (Mukesh Kumar) ওপর বাজি খেলতে রাজী হয়েছিলেন সৌরভ। তাঁর থাকা-খাওয়া এবং চিকিৎসার যাবতীয় দায়িত্ব নেয় সিএবি। অবশেষে দীর্ঘ বাধা-বিপত্তি কাটিয়ে ২০১৫-১৬ মরসুমে হরিয়ানার বিরুদ্ধে বাংলার জার্সিতে প্রথম মাঠে নামেন তিনি। মেন্টর রণদেব তাঁর প্রিয় শিষ্য সম্পর্কে বলতে গিয়ে জানান, “আমার চাকরিটাই বাজি রেখেছিলাম ওর জন্য। লাহলির মাঠে শেহবাগকে প্রথম আউট করে ও আমার কেরিয়ার রক্ষা করেছিলো।”
জাতীয় দলের জার্সিতে অভিষেক মুকেশের-.
ক্লাব ক্রিকেটের আঙিনায় একটি ম্যাচ না খেলেই বাংলা দলের হয়ে রনি অভিষেক করেছিলেন মুকেশ কুমার (Mukesh Kumar)। এরপর থেকে ক্রমেই উপরের দিকে উঠেছে তাঁর কেরিয়ার গ্রাফ। ঘরোয়া ক্রিকেটে যেমন তিন ফর্ম্যাটেই অনবদ্য বোলিং করে দেশের সেরাদের তালিকায় নাম লিখিয়েছেন তিনি, তেমনই ডাক এসেছে আইপিএল থেকেও। বাংলার জার্সিতে দুইবার রঞ্জি ট্রফি ফাইনাল খেলেছেন মুকেশ। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৩৯ প্রথম শ্রেণির ম্যাচে নিয়েছেন ১৪৯ উইকেট।
২০২২ মরসুমে ছিলেন দিল্লী ক্যাপিটালসের নেট বোলার। সেখানে দিল্লী (DC) কর্তৃপক্ষের নজরে এসেছিলেন তিনি। ২০২৩-এর আইপিএলের মিনি অকশনে ৫.৫ কোটি টাকায় তাঁকে দলে নেয় দিল্লী। নিয়মিত খেলারও সুযোগ পেয়েছেন তিনি। কঠিন ওভারে বল হাতে ভালো নিয়ন্ত্রণও দেখিয়েছেন।জাতীয় দলেও তাঁর অভিষেক যে সময়ের অপেক্ষা, তা বোঝা গিয়েছিলো গত বছর। নিউজিল্যান্ড-এ এবং বাংলাদেশ-এ দলের বিরুদ্ধে ভালো বোলিং করেছিলেন ভারত-এ দলের হয়ে।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে একদিনের সিরিজে স্কোয়াডে জায়গা করে নিয়েছিলেম মুকেশ (Mukesh Kumar)। মাঠে নামার সুযোগ অবশ্য তখন পান নি তিনি। ফের ২০২৩-এ নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে টি-২০ স্কোয়াডে রাখা হয় মুকেশকে। সুযোগ দেওয়া হয় টিম ইন্ডিয়ার সাজঘরের অভিজ্ঞতা অর্জন করার। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে জসপ্রীত বুমরাহ, মহম্মদ শামি, উমেশ যাদবদের প্রতিষ্ঠিত পেস তারকারা নেই ভারতীয় দলে। তিন ফর্ম্যাটেই জায়গা দেওয়া হয়েছে মুকেশকে (Mukesh Kumar)। দল ঘোষণার পর থেকেই অভিষেকের আশায় বুক বাঁধছিলেন বাংলার ক্রিকেট সমর্থকেরা। অবশেষে পোর্ট অফ স্পেনে টিম ইন্ডিয়ার ৩০৮তম টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে কেরিয়ারের নতুন অধ্যায় শুরু করতে চলেছেন তিনি।