বিতর্ক যেন ভারতীয় ক্রিকেটকে পিছু ছাড়তে চাইছে না। হেড কোচ নিয়োগ নিয়ে রোজ রোজ নতুন তথ্য় উঠে আসছে। সব খবরই একে অপরের বিপরীত। কোনওটাই নিশ্চিত ব্য়াখ্য়া দিচ্ছে না। ওদিকে, পরিস্থিতি ক্রমাগত অবনতি দেখে সৌরভ গাঙ্গুলি কমিটি অফ অ্য়াডমিনিস্ট্রেটর্সের কোর্টে বল ঠেলে দিয়েছেন মীমাংসার জন্য়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিসিসিআই-য়ের এক আধিকারিক আবার সৌরভকে এই ব্য়াপারে ক্লিন চিট দিয়েই দিয়েছেন। কারণ, কমিটি অফ অ্য়াডমিনিস্ট্রেটর্সের তাড়াহুড়োতেই নাকি এত বিপত্তি। ক্রিকেট অ্য়াডভাইজরি কমিটি তো চেয়েই ছিল সবাইকে একদিনে এক ছাতার তলায় এনে সবার সামনে কোচ বেছে নিতে। বোর্ডের ওই আধিকারিকের মন্তব্য়ে পরিষ্কার, বিসিসিআই কোনওভাবেই মেনে নিতে পারছে না তাদের মাথার ওপর জোর করে সুপ্রিম কোর্টের বসিয়ে দেওয়া কমিটিকে। বোর্ডের এখন ঘুঁটে পোড়ে, গোবর হাসে অবস্থা।
এখানে দেখুনঃ ভারতীয় দলের কোচের মতো এবার বিশেষ এই পদের যোগ্য সদস্যর জন্য বিজ্ঞাপন দিল বিসিসিআই
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বোর্ডের আরও এক আধিকারিক সংবাদমাধ্য়মকে দিলেন হাঁড়ির খবর। তাতে কোচ বিতর্ক যেমন আরও উস্কে দিল, তেমনই সৌরভের দাবিকেও প্রশ্নের মুখে ফেলে দিল। সৌরভ জোর গলায় বলছেন, ক্রিকেটপ্রেমীদের সত্য়টা জানা দরকার। কিন্তু, বিসিসিআই-য়ের অন্দরে যা গোলমেলে ব্য়াপার চলছে, তাতে মনে হয় না, এই সমস্য়ার সমাধান শিগগিরি হবে!
কি বলছেন, সেই বিসিসিআই আধিকারিক? শাস্ত্রীকে সৌরভ হেড কোচ করতে চাননি। কিন্তু, যে কোনও কারণে রাজি হওয়ার পর সত্য়টা যখন আচমকা সামনে এসে পড়ে, সৌরভ বলে বসেন, বিরাটের সঙ্গে আলোচনা করে শাস্ত্রীকে নেওয়া হয়েছে। খেলোয়াড়দের চাহিদাকে প্রাধান্য় দেওয়া হয়েছে।
অথচ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই আধিকারিকের বক্তব্য় সৌরভের দাবির একশো আশি ডিগ্রি উল্টো। তিনি জানান, “কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের মেন্টর হওয়ার পর বীরুর আত্মবিশ্বাস আস্তে আস্তে বাড়তে শুর করে। বীরুর মধ্য়ে সেই ব্য়াপারটাও আছে, যা আরও বড়ো আঙিনায় সফল হতে কাজে লাগে। মেন্টর হিসেবে বীরুর কাজ করার ধরন দেখে বোর্ডেরই এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক বীরুকে বলেন, ভারতীয় দলের কোচের পদের জন্য় আবেদন করতে।“
এখানে দেখুনঃ কোচের পদে রবি শাস্ত্রীর নিয়োগে ক্ষেপে লাল সেহওয়াগের এই কাছের মানুষটি
এখানেই শেষ নয়, ওই আধিকারিকের থেকে আরও জানান, “ক্রিকেট অ্য়াডভাইজরি কমিটি ঠিক কাজই করছিল। সবাইকে সামনে বসিয়ে দেখে নিতে চেয়েছিল। এর মাঝে কি হয়, বীরু নিজের কোচ হওয়ার ব্য়াপারে কোহলির সঙ্গে কথা বলেন। বিরাট সমর্থন দেবে জানিয়েও দিয়েছিলেন। হঠাৎই বীরু যখন, মিঠুন মিনহাস সহ গোটা কিংস ইলেভেনের সাপোর্ট স্টাফকে তুলে আনার কথা বলেন, তখন কোহলি মত পাল্টে পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছিলেন, ‘পাজি, আমি তোমাকে বেশ শ্রদ্ধা করি। যেটা চাইছ, তা হতে পারে না। কারণ, সিনিয়র টিম সাপোর্ট স্টাফদের একটা প্রফেশনাল সেট-আপ নিয়েই কাজ করছে। ক্রিকেট অ্য়াডভাইজরি কমিটির হাতেই সব রয়েছে।’ কোহলি বীরুকে এটাও বলেছেন, এই মুহূর্তে যে সাপোর্ট-স্টাফরা ভারতীয় দলের সঙ্গে কাজ করছেন, কোন ক্রিকেটার কি চান, বলার আগেই বুঝে যান তাঁরা। এতটাই তাঁদের মধ্য়ে বোঝাপড়া।“
ওই বিসিসিআই আধিকারিকের বক্তব্য়েই পরিষ্কার, বিরাট আগে থেকেই জানতেন, তাঁর ব্য়ক্তিগতভাবে অন্য় কাউকে পছন্দ থাকলেও, ক্রিকেট অ্য়াডভাইজরি কমিটি যাকে পছন্দ করবে, তাঁকেই ভারতীয় দলের হেড কোচ করে দেওয়া হবে। মনে রাখতে হবে, বিসিসিআই এখনও কিন্তু বিবৃতিতে দিয়ে জানায়নি, বিরাটের সঙ্গে আলোচনা করে কোচ নিয়োগ করা হয়েছে। শাস্ত্রীকে তিনি কোচ করতে চাননি, এখবর সামনে আসার পরই সৌরভ বলতে শুরু করেন, কোহলির মত নিয়ে কোচ নিয়োগ করা হয়েছে। আশ্চর্যের বিষয়, অ্য়াডভাইজরি কমিটির অপর দুই সদস্য় শচীন-লক্ষ্মণ এখনও পর্যন্ত মুখ খোলেননি এব্য়াপারে। উল্টোদিকে সৌরভ একবারও বলছেন না, কোহলি জনসমক্ষে এসে বলুক, তাঁর সঙ্গে আলোচনা করে শাস্ত্রীকে কোচ করা হয়েছে কি না? তাহলেই তো সত্য়িটা সামনে চলে আসে।