তার ঠান্ডা মাথার প্রশংসা গোটা বিশ্ব জুড়ে।কঠিন পরিস্থিতি থেকে দলকে খাঁদের কিনারা থেকে টেনে তুলতে তার জুড়ি মেলা ভার।এজন্যই তিনি ” ক্যাপ্টেন কুল ” ।তার হাত ধরেই ২৮ বছর পর ফের বিশ্বকাপ ক্রিকেটের স্বাদ পায় ভারতীয় ক্রিকেট দল।তিনি মহেন্দ্র সিং ধোনি।
একাধিক দুরন্ত দলগত এবং ব্যক্তিগত সাফলতায় সমৃদ্ধ তার ক্রিকেট জীবন।বরাবর প্রচার মাধ্যমের থেকে দুরে নিজের ব্যক্তিগত জীবন’ কে দুরে সরিয়ে রাখলেও একাধিক বার নানান বিতর্কে নাম জড়িয়েছে তার, যার জেরে তাকে পড়তে হয়েছে নানান প্রশ্নের মুখে।এবার এমনই পাঁচ বিতর্ক নিয়ে আলোচনা করা হলো এখানে।

১. বাদ কেনো ” গৌতম গম্ভীর ” ?
অধিনায়ক থাকাকালীন ভারতীয় ক্রিকেট দলে এক অদ্ভুত ” রোটেশন পদ্ধতি ” চালু করেন মহেন্দ্র সিং ধোনি।সেই পদ্ধতির কোপে একাধিক ম্যাচে বাইরে থাকতে হয়েছে গৌতম গম্ভীর, শচীন তেন্ডুলকার , বীরেন্দ্র শেহবাগ’এর মতো ক্রিকেট তারকাদের।এই পদ্ধতি নিয়ে ধোনির কাছে প্রশ্ন করা হলে তিনি সেই সময় জানিয়েছিলেন শুধুমাত্র দলের সব ক্রিকেটারদের রান করার সুযোগ দিতেন।
এই নিয়মের তীব্র প্রতিবাদ করেছিলেন গৌতম গম্ভীর।ফর্মে থাকা কালীন এই নিয়মের আওতায় পড়ে একাধিক ম্যাচে মাঠের বাইরে থাকতে হয়েছিল তাকে।পরবর্তী সময়ে একটি সাক্ষাৎকারে তিনি এর তীব্র প্রতিবাদ করেন, এবং গোটা বিষয়টি অযৌক্তিক বলেন তিনি।এমনকি একাধিক ম্যাচে ধোনির এই নিয়ম খুব একটা কার্যকর ভুমিকা পালন করতে পারেননি বলেছিলেন তিনি।
২. চুপ কেনো ” মাহি ” ?
২০১৪ সালে আইপিএ’লে চেন্নাই সুপার কিংসের বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে ম্যাচ ফিক্সিং স্ক্যান্ডালে।যা ঘিরে ঋতিমতো শোরগোল পড়ে যায় ক্রিকেট মহলে।পরবর্তী সময়ে এই বিতর্কে নাম জড়িয়ে যায় মহেন্দ্র সিং ধোনির।রিপোর্ট অনুযায়ী অভিযুক্ত বুকি ” কিটি ” র দাবী অনুযায়ী এই ফিক্সিং সম্পর্কে অবহিত ছিলেন মাহি।শুধুমাত্র তাই নয়, ২০১৩ সালে জয়পুরে রাজস্থানের বিরুদ্ধে ম্যাচে চেন্নাই আটকে যাবে ১৪০ রানে, তা ধোনি জানতেন বলে দাবি করেছিলেন সেই বুকি।
পরবর্তী সময় এমন খবর প্রচার কারী সংবাদমাধ্যমে বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেন ধোনি এবং যে সাংবাদিক যুক্ত ছিলেন এই খবর প্রচারমাধ্যমের সামনে নিয়ে আসার জন্যে তারা বরখাস্ত হন, তার ভক্ত এবং দেশবাসীর সামনে তাঁর ভাবমূর্তির হানি হচ্ছে সেই সময় এমনটাই বক্তব্য ছিলো ধোনির।
পরবর্তী সময়ে যখন রাজস্থান রয়েলস এর রাহুল দ্রাবিড় এবং চেন্নাইয়ের স্টিফেন ফ্লেমিং এই ফিক্সিং কাণ্ড সম্পর্কে নিজেদের ব্যক্তিগত মনোভাব ব্যক্ত করেন তখন একেবারে নিশ্চুপ ছিলেন ধোনী ,যা ঘিরে তীব্র সমালোচনা’র মুখোমুখি হতে হয় তাকে।যদিও পরবর্তী সময়ে তার বক্তব্য ছিলো, তার নিশ্চুপ থাকার অন্যতম কারণ তিনি এবিষয়টি কে তার নিজের খেলায় প্রভাব ফেলতে দিতে চাননি।
৩. বলি – কান্ড
২০০৮ সালে ১০ ই মার্চ , অস্ট্রেলিয়ায় ট্রাই- সিরিজ জিতে এসে রাঁচির মন্দিরে পাঁঠা বলি দেন ধোনি, এই ঘটনার জেরে তীব্র বিতর্কের মুখে হয় তাকে।বিভিন্ন পশু প্রেমী গ্রুপ যাদের মধ্যে রয়েছে ” PETA (people for the ethical treatment of animals ) তাদের রোষের মুখে পড়েন ” ক্যাপ্টেন কুল ” ।
সেই সময় ” পেটা” র ভারতের মুখ্য আধিকারিক অনিরুদ্ধ সাইনি মাহির উদ্দেশ্যে তীর্যক মন্তব্য সমৃদ্ধ চিঠি লেখেন, যেখানে ধোনির এমন কাজের জন্যে তার তীব্র সমালোচনা করেন, এবং তৎকালীন ভারতীয় অধিনায়ক কে বলেন, এমন একটি কাজ তাকে আজীবন অনুশোচনায় ভোগাবে।
৪.ধোনি- শ্রীনিবাসন যুগলবন্দী
মাঠের বাইরে ধোনি – শ্রীনিবাসন জুটির কর্ম সম্পর্কে ওয়াকিবহাল।যদিও কিছু কিছু সময় বিতর্কের জেরেও খবরের শিরোনামে উঠে এসেছে এই জুটি।
যে সময়ের কথা বলছি সে সময় শ্রীনিবাসন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের ট্রেজারার, পাশাপাশি ” ইন্ডিয়ান সিমেন্টস ” এর ভাইস চেয়ারম্যান এবং ম্যানেজিং ডিরেক্টর।যে কোম্পানির কাছে আছে চেন্নাই সুপার কিংসের স্বত্ব ।বি সি সি আই’ এর এই কর্মকর্তা সেই সময় ধোনিকে ইন্ডিয়া সিমেন্টের ” ভাইস প্রেসিডেন্ট ” এর পদে আনেন, সেই সময় ধোনি ছিলেন চেন্নাই সুপার কিংসের অধিনায়ক।পরবর্তী সময়ে বিষয়টি শিরোনামে এলে অনেকেই এটিকে ” কনফ্লিক্ট অফ ইন্টারেস্ট ” এর আওতায় এনে প্রশ্নের মুখে ফেলেন মাহিকে।
৫.ব্যবসার সংঘাত
প্রথম সারির একটি সংবাদ মাধ্যমের দাবী অনুযায়ী, ধোনি ‘র ১৫ শতাংশ শেয়ার ছিলো স্পোর্টস মার্কেটিং ফার্ম ” রিহিতি স্পোর্টস ” এ।এই কোম্পানির হাতে দায়িত্ব ছিলো রবীন্দ্র জাদেজা এবং সুরেশ রায়নার।প্রসঙ্গত, এরা দুজনেই সেই সময় চেন্নাই সুপার কিংসে ধোনির সদস্য ছিলেন।
চুক্তি অনুযায়ী রায়না এবং জাদেজা’ কে ম্যানেজ করার জন্য যতটা প্রফিট করবে এই কোম্পানি, তার ১৫ শতাংশ দিতে হবে ধোনিকে লভ্যাংশ হিসেবে।বিষয়টি প্রকাশ্যে এলে সেই কোম্পানির তরফে জানানো হয় ধোনি’ র সাথে তাদের একটা বকেয়া থাকা পেমেন্টের সূরাহা করার জন্য এই উপায় অবলম্বন করেন তারা।