ভারত অধিনায় বিরাট কোহলির বিরুদ্ধে মারাত্মক অভিযোগ আনলেন জাতীয় দলে খেলা প্রাক্তন তারকা ক্রিকেটার বীরেন্দ্র সেহওয়াগ। সেই সঙ্গে ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড (বিসিসিসআই)-এর বিরুদ্ধে বিস্ফোরক মন্তব্য় করেছেন বীরু। অনিল কুম্বলে সরে যাওয়ার পর রবি শাস্ত্রী ভারতীয় দলের হেড কোচের পদটা গোছাতে পেরেছেন, কারণ বোর্ডের অন্দরে তাঁর অনেক সেটিং রয়েছে। ঠিক এই ভাষায় বীরু এই আক্রমণাত্মক মন্তব্য় করেছেন।
রবি শাস্ত্রীকে কোচ করে আনার পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রয়েছে বিরাটের। তাঁকেও কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন ভারতের এই প্রাক্তন ওপেনার। সেহওয়াগের বক্তব্য় অনুযায়ী, কোহলি নিজেই তাঁকে যেচে প্রস্তাব দিয়েছিলেন, ভারতীয় দলের কোচ হওয়ার জন্য় আবেদনপত্র জমা দিতে। অনিল কুম্বলে সময়ের আগেই আচমকা সরে যাওয়ার পর নানান নাটুকে পরিস্থিতির মধ্য়ে দিয়ে রবি শাস্ত্রী ফের ভারতীয় দলের কোচের পদে আসেন। ক্রিকেট অ্য়াডভাইজরি কমিটির অন্য়তম সদস্য় সৌরভ গাঙ্গুলির বিরুদ্ধে শাস্ত্রীকে কোচ না করতে চাওয়ার অভিযোগ ওঠার পর, দাদা মিডিয়ায় বক্তব্য় রাখেন, কোহলির সঙ্গে আলোচনা করে প্রাক্তন টিম ডিরেক্টরকে হেড কোচ করা হয়েছে। কোহলির সঙ্গে শাস্ত্রীর ঘনিষ্ঠতা কোনও নতুন কথা নয়।
বীরু যেভাবে কোহলির বিরুদ্ধে ছল-চাতুরির অভিযোগ এনেছেন শাস্ত্রীকে কোচ করার ব্য়াপারে, তাতে কুম্বলেকে ভারত অধিনায়ক ইচ্ছাকৃতভাবে কোচের পদ থেকে তাড়িয়েছেন, এই যুক্তিই উঠে আসছে। কারণ, কুম্বলে হেড কোচ হওয়ার আগে শাস্ত্রী টিম ডিরেক্টর ছিলেন। সৌরভ গাঙ্গুলির একার আপত্তিতেই শাস্ত্রী কোচ হতে পারেননি। কারণ, ব্য়াঙ্ককে ছুটি কাটাতে গিয়ে ভিডিং কনফারেল্সিং করে রবি ইন্টারভিউ দেওয়ায়, দাদার তা মোটেই ভালো লাগেনি। এদিকে, কোহলির সঙ্গে মতের অমিল হওয়ায় কুম্বলে সরে যান। আর তার পরেই শাস্ত্রী হেড কোচ হয়ে ভারতীয় দলে ফের জাঁকিয়ে বসেছেন। তাঁর পুরনো সাপোর্টিং স্টাফের টিমকেও কৌশলে ঠিক ফিরিয়ে এনেছেন। সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে দুই মাথা এক হওয়ায়, বিরাট এখন তাঁর আধিপত্য় পুরোপুরি বিস্তার করতে পেরেছেন। দলে বিরাটের যুক্তিই এখন সর্বেসর্বা।
এনিয়ে কোনও দ্বিমত নেই, ইস্তফা দেওয়ার আগে কুম্বলের সঙ্গে অত্য়ন্ত খারাপ ব্য়বহার করেছেন কোহলি। অনিল শুধু প্রাক্তন ভারত অধিনায়কই নন, তিনি ভারতের সর্বকালের সেরা উইকেট শিকারী। বিশ্ব ক্রিকেটে টেস্টের আসরে মুরলীধরন এবং ওয়ার্নের সঙ্গে তাঁর নাম নেওয়া হয়। ভারতীয় বোর্ডই বা কেন এসব মেনে নিল, তার কোনও ব্য়াখ্য়া এখনও অমিল। কুম্বলের সঙ্গে কথা বন্ধ করে দেওয়ার মতো ব্য়ক্তিগত অপছন্দের কারণে যেভাবে চ্য়াম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে কোচের পরামর্শকে পাত্তা না দিয়ে গা জোয়ারি করে আগে বোলিং নেন বিরাট আর তারপর যা হয়েছে, তা কারওর অজানা নয়। আইসিসি ইভেন্টে কোনওদিন পাকিস্তানের কাছে হারার রেকর্ড ছিল না। বিরাটের একগুঁয়েমি ভারতকে সেই কলঙ্কের ভাগীদার করেছে। অনেকে বলছেন, আজ থেকে কুড়ি বছর আগে বিরাট অধিনায়ক হয়ে এই কাজ করলে, দেশে ফেরার আগেই চাকরি যেত।
এদিকে, বীরু বলছেন, শাস্ত্রী নিজে মুখে তাঁকে বলেছিলেন, একবার যে ভুল করেছেন, সেই ভুল তিনি আর করতে চান না। তাই জাতীয় দলের কোচ হওয়ার জন্য় তিনি আবেদন করবেন না বলেছিলেন। কারণ, শাস্ত্রী জানতেন, অ্য়াডভাইজরি কমিটিতে যতদিন আছেন, সৌরভ তাঁকে কোনওভাবেই আসতে দেবেন না। বিরাট হস্তক্ষেপ না করলে, এবারও সেই একই দিকে এগোচ্ছিল শাস্ত্রীর ভবিষ্য়ৎ। শুনে নেওয়া যাক বীরুর কথা, ”রবিকে আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম, ও কোচ হওয়ার জন্য় আবেদন দেয়নি কেন? তাতে ও আমায় জানিয়েছিল, ‘এক ভুল বারবার করতে চাই না।‘ বিরাটের সঙ্গে আমার এরপর কথা হচ্ছিল। তখন ও আমাকে বলে, আমি যেন কোচ হওয়ার জন্য় আবেদন করি। বিরাটের প্রস্তাবে রাজি হওয়ার পরই আমি কোচ হওয়ার জন্য় আবেদনপত্র জমা দিয়েছিলাম।” একটি বেসরকারি টিভি চ্য়ানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বীরু আরও বলেন, ”আপনি যদি আমাকে জিজ্ঞাসা করেন, আমি কি কোনওদিনই ভারতীয় দলের কোচ হতে চেয়েছি? আমি বলব না। কারণ, এনিয়ে আমার কোনও আগ্রহ ছিল না।”
বীরুকে এরপর বলা হয়, শাস্ত্রীর জন্য় আপনার কোচ হওয়া হলো না। তা শোনা মাত্রই সেহওয়াগ বলে ওঠেন, ”কারণটা, আপনাদের সামনে। বোর্ডের ভেতর আমার কোনও সেটিং নেই।” এরপর তিনি বলেন, ”আমি কোনওদিন কোচ হতে চাইনি। বোর্ডের আধিকারিকরা আমাকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন, আমি কেন এই ব্য়াপারটা ভেবে দেখছি না। বিসিসিআই সচিব অমিতাভ চৌধুরী ও এমভি শ্রীধর আমাকে অনুরোধ করেছিলেন, আমি যেন ওঁদের প্রস্তাবটা নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করি। আমার তখন মনে হয়েছিল, ওনারা এত করে বলছেন যখন আমার সাহায্য়ের হাত বাডিয়ে দেওয়া উচিত। আমি আর কোনওদিন ভারতের কোচ হওয়ার কথা মাথায় আনব না।”