ব্য়াটিং ভারতীয় ক্রিকেট দলের সবচেয়ে বড় শক্তি। শুধু ভারত কেন, স্কোর বোর্ডে বিশাল একটা স্কোর থাকলে যে কোনও দলের বোলাররা, বুকে বল পায়। ম্য়াচ জেতানো অনেকটাই সহজ হয়ে যায়। একটা সময় ছিল, যখন ভারত বিদেশ সফরে গেলে খুব ভুগত। ব্য়াটিং অর্ডারের ওপরের দিকের মহারথীরা ব্য়র্থ হলেই সব শেষ। ভারত ম্য়াচ হারছে, আন্দাজ করে নিয়ে টিভিটাকেই বন্ধ করে দিতেন কাজ কামাই করে ঘরে বসে থাকা ক্রিকেট পাগল বাবুরা। বাবা-কাকা-জ্য়াঠাদার দেখে পরবর্তী প্রজন্মও সেই একই টোটকাটা শিখেছিল, যেন নিশ্চিত হার্ট-অ্য়াটাক থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে অমনটা করলে। পরের দিন কাগজে চলত কাটাছেঁড়া। বারবারই সেই একটা কথা উঠে আসত। আমাদের ভাল অলরাউন্ডার নেই, যে ব্য়াট-বল দুটোই করে দেবে। অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্য়ান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেট টিমের উদাহরণ দেখিয়ে বলা হত, ওদের দেশে দেখো, কত চৌখস অলরাউন্ডার। ঠিক ম্য়াচ জিতিয়ে দেবে কোনও না কোনওভাবে। আমাদের দেশে যে কেন এমন অলরাউন্ডার জন্মায় না! একটা অতিরিক্ত বোলার খেলানো মানে, ব্য়াটিংটা কমজোরি হয়ে যাওয়া। আবার একটা অতিরিক্ত ব্য়াটসম্য়ান খেলানো মানে, বোলিং শক্তিটা কমে যাওয়া।

নব্বইয়ের জমানায় ভারতীয় দলের অলরাউন্ডার বলতে রবিন সিং, অজয় জাদেদাদের ধরা হতো। জোর করে একজনকে অলরাউন্ডার করা হয়েছিল, সেই অজিত আগরকর কোনওদিন ভরসা জাগিয়ে দলে নিজের জায়গা পাকা করতে পারেননি। বারবার নজর কাড়লেও, মনে রাখার মতো মুহূর্ত দিতে পারেননি। ম্য়াচ ফিনিশার কাকে বলে, সে সময় ভারতীয় ফ্য়ানেরা এসব জানত না। কাগজেও এসব শব্দ চোখেও পড়ত না। দু‘হাজার সালের শুরুতে আমাদের বাংলার ছেলে জাতীয় দলের অধিনায়ক হওয়ার পর ভারতীয় ক্রিকেটটা বদলাতে শুরু করে। দাদাই প্রথম সাহসটা দেখান, ভারতীয় ক্রিকেটে ম্য়াচ ফিনিশার আর অলরাউন্ডার অভাবটা মেটানোর। কিন্তু, ওই… ভারতীয়দের মূল সমস্য়া… ব্য়াটসম্য়ানরা বল করতে পারেন, অলরাউন্ডার বলা যায়, এমন ক্রিকেটারও আছেন, বেশিরভাগই স্পিন বোলার। উপমহাদেশের উইকেটে, কাজ চালিয়ে দিলেও, বিদেশের মাটিতে সবসময় ফাটকাটা কাজে লাগে না।
সৌরভ-ধোনি জমানায় ভারতীয় ক্রিকেট বদলেছে। ভারত জিততে শিখেছে। দলে এসেছে অনেক ম্য়াচ ফিনিশার। সৌরভ জমানায় যুবি, কাইফ দলকে ম্য়াচ জিতিয়েছিলেন। ইরফান পাঠানকে ব্য়াটিং শেখাতে গিয়ে তাঁর বোলিংটাই নষ্ট করে দিয়ে যান গ্রেগ চ্য়াপেল। আর ধোনি জমানায় ধোনি নিজে একাই একশো। কিন্তু, সেই বিশেষ ধরনের অলরাউন্ডার কখনও পাওয়া যায়নি। অভাবটা রয়েই গিয়েছিল।
বিরাট জমানায় বহুদিনের সেই অভাবটা মিটতে চলেছে। হার্দিক পান্ডিয়া। বরোদার এই ক্রিকেটারটি ইতিমধ্য়েই সাড়া ফেলে দিয়েছেন। যেমন ব্য়াট করতে পারেন, তেমন পেস বোলিং করতে পারেন। যে ধরনের অলরাউন্ডারের কথা সৌরভ একসময় বহুবার বলে এসেছিলেন। সংবাদমাধ্য়মেও হার্দিককে নিয়ে প্রচুর আলোচনা হচ্ছে ইদানিং। আইপিএল তো বটেই, ভারতের হয়ে সীমায়িত ওভারের দু‘ধরনের ক্রিকেটে গতবছর অভিষকের পর থেকে বেশ নজর কেড়েছেন হার্দিক। বিরাট কোহলি ইতিমধ্য়েই হার্দিককে আগামী দিনে ভারতীয় ক্রিকটের স্বার্থে কাজে লাগানোর পরিকল্পনা ছকে নিয়েছেন। ২০১৭ আইপিএলে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের জয়ে বড় ভূমিকা নিয়েছিল তেইশ বছরের এই ক্রিকেটারটির অলরাউন্ড পারফরমেন্স। ইংল্য়ান্ডে চ্য়াম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে পাকিস্তানের কাছে ভারত হেরে গেলেও, চাপের মুখে হার্দিকের ৪৩ বলে ৭৬ রান প্রশংসা কুড়িয়েছে সমর্থকদের। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে চলতি টেস্ট সিরিজে পাঁচদিনের খেলায় অভিষেক হয়েছে। সেখানেও ভালো ফর্মটা অব্য়াহত। গল টেস্টে ব্য়াট হাতে পঞ্চাশ রান করার পাশাপাশি একটি উইকেটও তুল নেন।
টিম বিরাটের এই ক্রিকেটারটি নিজের মুখেই জানালেন নিজেকে নিয়ে নানান অজানা তথ্য়। ফ্য়ানেদের জন্য় রইল তার কিছু অংশ :
১. পছন্দের মাঠ : মুম্বইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়াম
২. পছন্দের ক্রিকেট শট : স্ট্রেট ড্রাইভ
৩. মনে রাখার মতো মুহূর্ত : ২০১৬ টি-২০ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে করা স্পেল
৪. বই পড়া পছন্দ, না সিনেমা দেখা? : সিনেমা দেখা
৫. গানের গলা কেমন? : খুব খারাপ
৬. পছন্দের মোবাইল অ্য়াপ : হোয়াটসঅ্য়াপ
৭. সেলিব্রিটি ক্রাশ : দীপিকা পাড়ুকোন
৮. যদি কখনও নাম পরিবর্তন করার সুযোগ আসে, তাপলে কি নাম রাখবেন? : সেরকম কোনও ইচ্ছে নেই