উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুরে গত পাঁচদিনে নবজাতকসহ ৬৩টি শিশুমৃত্য়ুর ঘটনায় শোকাহত ভারতীয় দলে খেলা পেস বোলার রুদ্র প্রতাপ সিং। এই ঘটনায় দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি দিতে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন তিনি। এই অমানবিক ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে ট্য়ুইটারকে বেছে নেন আর পি। তাঁর ট্য়ুইট, ”গোরক্ষপুরে এতগুলি নিরোপরাধ শিশু মারা যাওয়ার খবর শুনে হৃদয় ভেঙে গিয়েছে। এর তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। যাঁরা তাঁদের শিশুদের হারালেন, সেই পরিবারগুলির প্রতি আমার সমবেদনা।”
আটচল্লিশ ঘণ্টায় গোরক্ষপুরের বিআরডি মেডিকেল কলেজে ত্রিশটির মতো শিশু প্রাণ হারিয়েছে। কারণটা শুনলে আতঁকে উঠতে হবে। এতগুলি শিশুর নিরীহ প্রান নিয়ে কারা খেলা খেলল, তাই নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠেছে। অভিযুক্ত কাকে করা যায়! যে সংস্থাটি ওই মেডিকেল কলেজে অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ করত, তাদের বকেয়া পুরোপুরি মেটানো হয়নি এখনও। ফলে, অক্সিজেন বরাত পাওয়া ওই সংস্থাটি তাদের বকেয়া না পাওয়া পর্যন্ত অক্সিজেন সিলিন্ডার পাঠানো বন্ধ করে দেয়। নব্বইটি জাম্বো সিলিন্ডার ব্য়বহার করেও ঘাটতি মেটাতে পারেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
গত বৃহস্পতিবার সকালে হাসপাতালের স্টোরের কর্মচারীরা সকালেই চিফ মেডিকেল অফিসারকে জানিয়েছিলেন, স্টোরে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সিলিন্ডার নেই। যা আছে, তা সন্ধ্য়ার মধ্য়েই ফুরিয়ে যাবে। এরপর রাত একটা নাগাদ অক্সিজেন ফুরিয়ে যায়। আর তাপরেই এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। নতুন করে পঞ্চাশটিরও বেশি অক্সিজেন সিলিন্ডার হাসপাতালে এসে পৌঁছোয় শুক্রবার ভোর রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ। তাও সকাল সাড়ে সাতটায় ফুরিয়ে য়ায়। সেই সময় হাসপাতালে ভর্তি ৭৩ জনের মধ্য়ে ৫৪ জন রোগী ভেন্টিলেশনে ছিল। যে সংস্থাটি অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ করত, সেখানে ছাপা মেরে পুলিশ বেশ কয়েকটি বকেয়া বিল উদ্ধার করেছে। তাতে পরিষ্কার, বারবার বলা সত্ত্বেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বকেয়া মেটায়নি।
একদিনে ৩০টি শিশু মারা যাওয়ার খবর কানে পৌঁছতেই উত্তরপ্রদেশের মুখ্য়মন্ত্রী যোগী আদিত্য়নাথ রাজ্য়ের স্বাস্থ্য়মন্ত্রী সহ তাঁর মন্ত্রিসভার এক মন্ত্রীকে হাসপাতাল পরিদর্শন করে ঘটনাটির পুঙ্খানুপুঙ্খ রিপোর্ট পেশ করার নির্দেশ দিয়েছেন। শিশুমৃত্য়ুর কারণ হিসেবে সংক্রমণ ও অক্সিজেন সিলিন্ডারের অপর্যাপ্ততার কথা প্রথমে জানালেও, এখন হাসপাতাল অক্সিজেন সিলিন্ডারের ঘাটতির কথা অস্বীকার করছে। শনিবার এই খবর জানার পরই জাতীয় দলের প্রাক্তন ক্রিকেটার তদন্তের দাবি জানান।
আর পি’র ট্য়ুইটের পর জাতীয় দলে একসময় খেলা দুই ক্রিকেটার গৌতম গম্ভীর ও অমিত মিশ্রও তাঁদের ক্ষোভ ও মর্মবেদনা ব্য়ক্ত করেছেন। ২০১১ বিশ্বকাপ জয়ী ভারতীয় দলের অন্য়তম সদস্য় গোতির ট্য়ুইট, ”স্বাধীনতার পর বেশ কয়েক দশক পার হয়ে গিয়েছে। কিন্তু, নিরোপরাধ এখনও শিশুরা জীবনদায়ী উপকরণের সরবরাহের অভাবে মারা যাচ্ছে। লজ্জাজনক ব্য়াপার।” স্পিনার অমিত মিশ্র ট্য়ুইট করেছেন, ”গোরক্ষপুরে এতগুলি নিরোপরাধ জীবন চলে গেল। অত্য়ন্ত শোকাহত। যে বাবা-মায়েরা শিশু হারিয়েছেন, তাঁদের প্রতি আমার সমবেদনা।”
উল্লেখ্য়, আর পি সিং দেশের হয়ে শেষবার মাঠে নেমেছিলেন ২০১১ সালে ইংল্য়ান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজে। ২০০৬ সালে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক হয় তাঁর। তার একবছর আগে ওয়ান-ডে ক্রিকেটে প্রথমবার ভারতের জার্সি গায়ে চাপান। টেস্ট ও একদিনের ক্রিকেটে তাঁর উইকেট সংখ্য়া যথাক্রমে ৪০ ও ৬৯। ২০০৭ সালে প্রথম টি-২০ বিশ্বকাপজয়ী ধোনি ব্রিগেডের অন্য়তম সদস্য় ছিলেন আরপি। ওই টুর্নামেন্টে ৭টি ম্য়াচে ১২টি উইকেট নিয়েছিলেন এই বাঁ-হাতি পেসার।
শোকত্বদ্ধ রুদ্র প্রতাপ সিং, গোরক্ষপুরে ষাটের বেশি শিশুমৃত্য়ুর ঘটনায় তদন্তের দাবি
