মহম্মদ আজহারউদ্দিনের আমলে ভারতীয় দলে এলেও আশিস নেহরার বিগ ম্য়াচ বোলার হয়ে ওঠা কিন্তু সৌরভ গাঙ্গুলির অধিনায়কত্বে। দিল্লির পেস বোলারটির নাছোড়বান্দা মনোভাবের সঙ্গে যদি সবচেয়ে বেশি কেউ পরিচিত হন, সেটা সৌরভ ছাড়া আর কেউ হতে পারেন না। কারণ, ভারতীয় ক্রিকেটে বেটিং কেলেঙ্কারি ফাঁস হওয়ার পর একেবারে নুইয়ে পড়া ভারতীয় দলটাকে তুলে ধরতে সৌরভ যখন নিজের মতো করে গড়ে তুলছিলেন, সেই সময় নেহরা নেতা সৌরভের অন্য়তম সেনানী ছিলেন। গত পয়লা নভেম্বর এখন ইতিহাসের পাতায়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অবসর নিয়েছেন, তিন দিন হয়ে গেল। গত আঠারো বছরের ওপর ধরে বারোবার অপারেশন টেবিলে শুয়েও ক্রিকেটে মাঠে ফিরে আসার সেই লড়াইটা আর দেখা যাবে না। কোটলা ময়দানেই সেই লড়াইতে যবনিকা টেনে দিয়েছেন দিল্লির বাঁ-হাতি পেস বোলারটি।
পুরনো দিনের সেইসব কথা শোনাতে গিয়ে সৌরভ নানান কথা বললেন ভারতীয় দলে তাঁর খেলা সতীর্থ সম্পর্কে। একটি বেসরকারি সংবাদমাধ্য়মকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নেহরার অবসর নেওয়া প্রসঙ্গে স্মৃতি রোমন্থন করতে করতে দাদা বলেন, ”আমার মনে হয়, নেহরার বেস্ট ফ্রেন্ড ওর ফিজিও ছিল। মনে হয়, নিজের স্ত্রীর সঙ্গেও অতটা সময় কাটায়নি, যতটা সময় ফিজিও সঙ্গে কাটিয়েছে ও।”
”ওর ক্রিকেট কেরিয়ারের বেশিরভাগ সময়টাই ওর (নেহরার) শরীর ওকে সঙ্গ দেয়নি। তবে, ও কিন্তু ভীষণ প্রতিভাবান ছিল। এই যে এত চোট-আঘাতের পরেও এতদিন ক্রিকেট খেলা চালিয়ে গেল। ওর মধ্য়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল। কখনও হাল ছাড়ত না।” দাদা এরপর বলেন, ”হতে পারে ওকে দেখতে দুর্বল। চোট-আঘাতে ভুগত। ফিল্ডিং কখনও ওর সেরা দক্ষতা ছিল না। কিন্তু, বোলিংয়ের ক্ষেত্রে – ওর হাতে একবার সাদা বল চলে এলে, একেবারে অন্য় এক ক্রিকেটারকে দেখা যেত। ওর বিদায়লগ্নটা দারুন বলব। ঘরের মাটিতে অবসর নেওয়ার সৌভাগ্য় সবার জোটে না। শচীন তেন্ডুলকর, তারপর আশিস নেহরা। নির্বাচকরা যে ওর ওপর আস্থা দেখিয়েছিলেন, সেজন্য় বেশ ভালো লেগেছিল আমার। কেরিয়ারের শেষ ম্য়াচে ভালোই বল করেছে বলব। কোটলার মাঠে বল করা খুব একটা সহজ কথা নয়। কিন্তু, ও ভালো বল করেছে।”
একথা কারওরই অজানা নয়, ভারতীয় দলের নেহরার নিয়মিত সদস্য় হতে না পারার একটাই কারণ, চোট-আঘাতের কারণে বারবার ছিটকে যাওয়া। সৌরভ সেই কথাই বলছেন। ২০০৩ দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে ডারবানে ইংল্য়ান্ডের বিরুদ্ধে সেই ঐতিহাসিক ম্য়াচটি। বিশ্বকাপে কোনও ভারতীয় পেস বোলারের অন্য়তম সেরা পারফরম্য়ান্স। ওই ম্য়াচে চোট নিয়ে খেলেছিলেন নেহরা। সৌরভের মুখেই শুনে নেওয়া যাক পুরো ঘটনাটা।
”নেহরা এমন একজন মানুষ, ওকে কেউ খেলাক বা না খেলাক, সব সময় খুশি থাকতে জানত। খুব ভালো ব্য়াপার। ওর মুখে সবসময় হাসি লেগে থাকত। আমি ওকে তরুণ বয়সে পেয়েছিলাম। যখনই ওকে ম্য়াচে রাখতাম না, ওকে বলতাম, ‘আশু তোকে ম্য়াচে রাখছি না।’ আমি জানতাম ম্য়াচ শেষ হলেই, (হোটেলে ফিরে যাওয়ার পর) আমার রুমের বেল বেজে উঠবে।”
”ম্য়াচের আগে বা সময়, কোনও কথা বলত না। যেই রাত এগারোটা বাজত, হোটেলে ফেরার পর ডোরবেল বেজে উঠত আমার রুমের। দেখতাম আশিস ওর চেনা-পরিচিত শর্টস আর ছিপছিপে পায়ে চটি পরে দাঁড়িয়ে রয়েছে। আমাকে দেখেই বলে উঠত, ‘আমাকে কেন খেলালে না?’ আমি ওকে বলতাম, ‘আমি অন্য় কাউকে সুযোগ দিতে চেয়েছিলাম, যে ভালো পারফর্ম করেছিল।’ ওটা বলা মানেই আমায় তখন ও পরিসংখ্য়ান দিতে বসবে।”
”ও বলা শুরু করত”
‘আমিও তোমার জন্য় ১৪৯ কিলোমিটার গতিতে বল করতে পারি। তোমার কি মনে হয়, আমি ফিট নয়? আমাকে বল দাও. আমি দেখিয়ে দিচ্ছি।’
”দক্ষিণ আফ্রিকায় যেমন বলেছিল, তেমনই করে দেখিয়েছিল। নামিবিয়ার বিরুদ্ধে ওকে খেলাইনি। গোড়ালি ভীষণভাবে ফুলে ছিল। তার তিন-চারদিন পর ইংল্য়ান্ডের বিরুদ্ধে ম্য়াচ। আমি ওকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, ওকে নিয়ে কি সিদ্ধান্ত নেব আমরা?”
”ও তখন বলে ওঠে, ‘আমায় দলে রাখো। আমি দৌড়ে দেখিয়ে দিচ্ছি।’ ঠিক তাই করে দেখাল। ইংল্য়ান্ডের বিরুদ্ধে ওই ম্য়াচে ওর বোলিং ফিগার ওর সেরা পারফরম্য়ান্স। নেহরার বিশেষত্ব এটাই। ও কখনও হার মানত না।”
স্ত্রীর তুলনায় ফিজিও’র সঙ্গে বেশি সময় কাটিয়েছে নেহরা – সৌরভ
