বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে সাকিব জায়গা করে নিলেন এমসিসির বিশ্ব ক্রিকেট কমিটিতে। এর আগে ইতিহাসের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে আইসিসি র্যাঙ্কিংয়ে তিন ফরম্যাটেই শীর্ষ অলরাউন্ডার হওয়ার অসামান্য অর্জন রয়েছে অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের। বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাব (এমসিসি) ১৭৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ডের মালিকানা এ কমিটির অধীনে। ১৭৮৮ সালে ক্রিকেটের আইন প্রণয়নের দায়িত্ব নেয় এমসিসি। এরপর থেকেই অদ্যাবধি সময় সময়ে আইন সংশোধন করে আসছে ও এ আইনের স্বত্ত্বাধিকারী। এমসিসি ক্রিকেট কমিটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ২০০৬ সালে। কমিটিতে থাকেন বর্তমান ও সাবেক ক্রিকেটার ও আম্পায়াররা।
প্রতিবছর দুইবার করে সভা হয় এই কমিটির। ক্রিকেটের প্রাসঙ্গিক অনেক কিছু নিয়ে আলোচনা করে এই কমিটি। সমসাময়িক ক্রিকেটের আইন-কানুনসহ নানা পরিবর্তন ও ক্রিকেটের ভালো- মন্দ নিয়ে সুপারিশ করে আইসিসিকে। আইসিসি সভায় অনুমোদনসাপেক্ষে বাস্তবায়ন হয় সে সবের। সম্প্রতি ব্যাটের সাইজ থেকে শুরু করে বদলে যাওয়া বেশ কিছু আইনের সুপারিশ যেমন এসেছিল এই কমিটি থেকেই। গত ১৮ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিক চিঠির মাধ্যমে এ সুখবরটি সাকিবকে জানিয়েছে আইসিসি। নতুন কমিটির দায়িত্ব শুরু হয়েছে গত ১ অক্টোবর থেকে। এবারের কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পেয়েছেন সাবেক ইংলিশ অধিনায়ক মাইক গ্যাটিং। বিদায়ী কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন আরেক সাবেক ইংল্যান্ড অধিনায়ক মাইক ব্রিয়ারলি। ক্রিকেট ইতিহাসে মাঠ এবং মাঠের বাইরে সেরা কিছু নাম এর আগে অলংকৃত করেছেন ওয়ার্ল্ড ক্রিকেট কমিটি। আম্পায়ারদের মধ্যে যেমন ছিলেন ডেভিড শেফার্ড। সাবেকদের মধ্যে ছিলেন ব্যারি রিচার্ডস, মার্টিন ক্রো, স্টিভ ওয়াহ, মাইক আথারটন, জিওফ্রে বয়কটের মতো স্বনামধন্য ক্রিকেটাররা। সাকিবদের কমিটির প্রথম বৈঠক হবে আগামী ৯ ও ১০ জানুয়ারি, সিডনিতে। পরের সভা হবে আগামী ৬ ও ৭ আগস্ট, লর্ডসে। ১৫ সদস্যের এ কমিটিতে রয়েছেন মাইক গ্যাটিং, রিকি পন্টিং, কুমারী সাঙ্গাকারা, সৌরভ গাঙ্গুলি, ইয়ান বিশপ, রমিজ রাজা ও ব্রেন্ডন ম্যাককালামের মতো সাবেক গ্রেট ক্রিকেটাররা। অবশ্য কয়েক বছর পর পর কমিটির সদস্যদের মধ্যে পরিবর্তন আনে এমসিসি। সেই সুবাদে সম্প্রতি কমিটি থেকে বাদ পড়েছেন অনিল কুম্বলে- স্টিভ ওয়াহর মতো ক্রিকেটাররাও। কমিটিতে সাকিবের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করে ইতোমধ্যে নিজেদের ওয়েবসাইটে সাকিবের নাম অন্তর্ভুক্ত করেছে এমসিসি।
বৃহস্পতিবার নিজের ফেসবুক ভেরিফাইড পেজে এ খবর জানিয়েছেন সাকিব নিজেই। এক পোস্টে এমসিসির পাঠানো ই-মেইলের ছবি সংযুক্ত করে কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি। সাকিব বলেন, ‘‘মর্যাদাপূর্ণ এমসিসি ওয়ার্ল্ড ক্রিকেট কমিটির সদস্য হিসেবে মনোনীত করায় আমি সত্যিই অনেক আনন্দ বোধ করছি। আমাকে সম্মানিত করার জন্য আপনাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি।” সাকিব আল-হাসানের ২০০৬ সালের আগস্ট মাসে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে অভিষেক হয়। তিনি বাম হাতি মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান এবং বামহাতি অর্থোডক্স স্পিনার। তাঁর খেলার মান আর ধারাবাহিকতা তাঁকে নিয়ে গেছে এক নতুন উচ্চতায়, হয়েছেন দলের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য একজন খেলোয়াড়-“দ্য ওয়ান ম্যান আর্মি”। এছাড়াও তাঁর রয়েছে বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডার হওয়ার কৃতিত্ব। সাকিব ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে প্রথম বারের মত টেস্ট, ওডিআই ও টি২০ প্রত্যেক ক্রিকেট সংস্করণে এক নম্বর অল-রাউন্ডার হওয়ার গৌরব অর্জন করেন| তরুণ বয়সেই সাকিব খেলা পাগল ছিলেন। মাত্র পনের বছর বয়সেই সাকিব অনূর্ধ্ব-১৯ দলে খেলার সুযোগ পান। ২০০৫ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ ত্রি- দেশীয় টুর্নামেন্টের ফাইনালে (অপর দুটি দেশ ছিল ইংল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কা ) মাত্র ৮৬ বলে সেঞ্চুরি করে ও তিনটি উইকেট নিয়ে দলকে জেতাতে সহায়তা করেন তিনি। ২০০৫ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে সাকিব অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে ১৮টি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেন।