শেষ কয়েকমাস তীব্র ডামাডোলের মধ্যে দিয়ে চলেছে পাকিস্তানের ক্রিকেট। টি-২০ বিশ্বকাপের ফাইনালে পৌঁছেও ইংল্যান্ডের কাছে হারতে হয় তাদের। এরপর ঘরের মাঠে বাবর আজমদের (Babar Azam) প্রতিপক্ষ ছিলো সেই ইংল্যান্ডই। বেন স্টোকসের (Ben Stokes) নেতৃত্বে ১৭ বছর পর টেস্ট সিরিজ খেলতে পাকিস্তানে পা দিয়েছিলো ইংল্যান্ড দল। ৩ টেস্টের সিরিজে ৩-০ ফলে হারেন বাবর-রিজওয়ানরা। ঘরে-বাইরে প্রচুর সমালোচনা সহ্য করতে হয় দলকে। এরপর নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে কোনোক্রমে টেস্ট সিরিজ ড্র করলেও একদিনের সিরিজে হারে তারা। ফের প্রশ্নের মুখে পড়ে বাবরের নেতৃত্ব। আগামী বিশ্বকাপে দলের ভবিষ্যত ভেবে চিন্তায় পড়েন সমর্থকেরা। ক্ষোভ উগড়ে দেন দলের বিরুদ্ধেই। মাঠের পারফরম্যান্স-এর পাশাপাশি মাঠের বাইরেও বিস্তর সমস্যার জালে আটকা পড়েছিলো পাক ক্রিকেট। এশিয়া কাপ আয়োজন নিয়ে ভারতের সাথে বিবাদে জড়ান পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের কর্তারা। প্রথমে রামিজ রাজা এবং তাঁর পদত্যাগের পর নাজম শেঠির (Najam Sethi) নানা মন্তব্য ঘিরে তৈরি হয় বিতর্ক।
দীর্ঘ টালবাহানার পর অবশেষে মেটার মুখে এশিয়া কাপ বিতর্ক। আয়োজনের দায়িত্ব পুরোপুরি ছাড়তে হচ্ছে না পাকিস্তানকে। চারটি ম্যাচ আয়োজন করবে তারা। আর বাকি ৯ ম্যাচ আয়োজিত হবে শ্রীলঙ্কায়। আপাতত অধিনায়ক হিসেবে বাবরকেও (Babar Azam) যে সরানো হচ্ছে না তা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের তরফে। একদিনের র্যাঙ্কিং-এ এক নম্বরে থাকা ব্যাটারই যে বিশ্বকাপ অবধি দলের নেতা থাকছেন তা নিশ্চিত। এতদসত্ত্বেও বিতর্ক শূন্য থাকতে পারছে না পাক ক্রিকেট। সম্প্রতি পাকিস্তানের প্রাক্তন ক্রিকেটার জুলকারনাইন হায়দারের (Zulqarnain Haider) একটি পুরনো ভিডিওর ফলে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে ক্রিকেটদুনিয়ায়। কেবল পাকিস্তানে নয়, এই ভিডিওর অভিঘাত সৃষ্টি হয়েছে সম্পূর্ণ বিশ্বের ক্রিকেট অনুরাগীদের মধ্যে। ভিডিওতে পাকিস্তান ও ক্রিকেট গড়াপেটার যোগসাজশ নিয়ে মন্তব্য করতে শোনা গিয়েছে জুলকারনাইনকে।
Read More: পাকিস্তানের চালে অন্ধকারের বিশ্বকাপের ভবিষ্যত, ক্রীড়াসূচি প্রকাশ নিয়ে দ্বিধায় আইসিসি !!
ধর্ম, ক্রিকেট ও গড়াপেটা, হায়দারের মন্তব্যে শোরগোল-
গড়াপেটার সাথে পাক ক্রিকেটের যোগ নতুন কিছু নয়। এর আগে ওয়াসিম আক্রমের (Wasim Akram) মত কিংবদন্তীর বিরুদ্ধেও উঠেছিলো গড়াপেটার অভিযোগ। মহম্মদ আমির (Mohammad Amir), মহম্মদ আসিফ (Mohammad Asif) এবং সলমন বাটের (Salman Butt) সুবাদে স্পট ফিক্সিং শব্দবন্ধের সাথেও পরিচয় হয়েছে বিশ্ব ক্রিকেটের। অর্থের বিনিময়ে দেশের সম্মান ধুলোয় লুটিয়ে ইংল্যান্ডের জেলে বন্দী ছিলেন তিনজনে। এবার পাকিস্তান জার্সিতে ১টি টেস্ট, ৪টি একদিনের ম্যাচ এবং ৩টি টি-২০ খেলা জুলকারনাইন হায়দারের (Zulqarnain Haider পুরনো একটি ভিডিও সামনে আসায় ফের গড়াপেটার ছায়া লম্বা হলো পাকিস্তান ক্রিকেটের ওপর। ভাইরাল ভিডিওতে মাঠের জগত আর ধর্মবিশ্বাসকে আলাদা রাখার কথা বলতে শোনা গিয়েছে জুলকারনাইনকে। মাঠের মধ্যে প্রার্থনা করার বিরোধিতা করেছেন তিনি।
হায়দার (Zulqarnain Haider বলেন, “আমি নিজে ধর্মবিশ্বাসী মানুষ। তবে মাঠের মধ্যে প্রার্থনা করা কেবল প্রচারের আলো টানার কৌশল।” মাঠের মধ্যে নয়, বরং স্টেডিয়ামে যে নির্দিষ্ট জায়গা থাকে সেখানেই ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা জানানোর কথা বলেছেন তিনি। এছাড়া হায়দারের মতে যাঁরা এইভাবে মাঠের মধ্যেই প্রার্থনা করেন তারা আসলে সাধারণ জনগণের থেকে সহানুভূতি আদায় করার কথা ভাবেন। ক্রিকেটকে ধর্মাচারণ থেকে দূরে রাখার কথা বলেছেন তিনি। এরপর তিনি বলেন, “আমি এমন ক্রিকেটারদের জানি যাঁরা মাঠে প্রার্থনা করেন, কিন্তু ম্যাচ গড়াপেটার সাথে যুক্ত।” জুলকারনাইন হায়দারের (Zulqarnain Haider এই মন্তব্য নিয়েই চলছে বিস্তর জলঘোলা। কার দিকে ইঙ্গিত তাঁর? বুঝতে চাইছে সোশ্যাল মিডিয়া। তাঁর মন্তব্যকে সমর্থন করেছেন অনেকে। তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় হায়দারকে কটূক্তিও শুনতে হয়েছে বিস্তর। এর আগে খুনের হুমকি পেয়ে ইংল্যান্ডের কাছে আশ্রয় চেয়েছিলেন তিনি। পাকিস্তানে ফেরেন ২০১১ সালে।