WTC Final: “আমাদের কয়েকজন ক্রিকেটার…” ভারত হারতেই বিরাট কোহলির দিকে আঙুল তুললেন গৌতম গম্ভীর !! 1

WTC Final: তীরে এসে তরী ডোবার যে ট্র্যাডিশন গত কয়েক বছর চলে আসছে ভারতীয় ক্রিকেটে, তাতে বিন্দুমাত্র বদল দেখা গেলো না এবারও। অস্ট্রেলিয়াকে ঘরের মাঠে বর্ডার-গাওস্কর ট্রফিতে ২-১ হারিয়ে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের (WTC) ফাইনাল খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছিলো ‘টিম ইন্ডিয়া।’ দক্ষিণ লন্ডনের কেনিংটন ওভালে সেই অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধেই মুখ থুবড়ে পড়লো রোহিত শর্মার (Rohit Sharma) দল। বছর দুয়েক আগে সাউদাম্পটনের মাঠে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে ৮ উইকেটে হেরে প্রথমবার টেস্টে বিশ্বসেরা হওয়ার স্বপ্ন চুরমার হয়েছিলো। গতকাল ওভালে ২০৯ রানের লজ্জার হার দিয়ে টেমসের জলে তলিয়ে গেলো ভারতের টেস্ট খেতাব জয়ের যাবতীয় আশা। ম্যাচের আগাগোড়া দাপট বজায় রাখলো অস্ট্রেলিয়া। আর অজিদের বিরুদ্ধে দ্বিপাক্ষিক টেস্ট সিরিজে গত ছয় বছর অপরাজিত থাকা ভারত মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে বিশেষ সুবিধা করে উঠতে পারলো না।

‘টিম ইন্ডিয়া’র হারের পর থেকেই চলছে তাদের গেমপ্ল্যান নিয়ে কাটাছেঁড়া। বৃষ্টিবিঘ্নিত সাউদাম্পটনে জোড়া স্পিনার খেলিয়ে ডুবেছিলো ভারতীয় দল। সম্ভবত সেই কথা মাথায় রেখেই এইবার ওভালে চার পেসারের সাথে একমাত্র স্পিনার হিসেবে রবীন্দ্র জাদেজাকে (Ravindra Jadeja) জায়গা করে দিয়েছিলো ভারত। টেস্ট র‍্যাঙ্কিং-এ এক নম্বর বোলার হওয়া সত্ত্বেও রিজার্ভ বেঞ্চেই জায়গা হয়েছিলো রবিচন্দ্রণ অশ্বিনের (Ravichandran Ashwin)। এই সিদ্ধান্তের প্রভাব ম্যাচে পড়তে দেখা গেলো। যেখানে রবীন্দ্র জাদেজা অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় ইনিংসে পেলেন ৩ উইকেট। ভারতের দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ উইকেট তুলে ছড়ি ঘোরালেন বিপক্ষের নাথান লিয়ঁ (Nathan Lyon), সেখানে অশ্বিনকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত কতটা যুক্তিযুক্ত তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। এছাড়া টসে জিতে বোলিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। সুনীল গাওস্কর, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, রবি শাস্ত্রী-সকলেই দলের খেলার দিকে আঙুল তুলেছেন। টানা দশ বছর আইসিসি প্রতিযোগিতায় ব্যর্থতার দায় মানসিকতার দিকেই চাপাচ্ছেন গৌতম গম্ভীর (Gautam Gambhir)। কোহলি, রোহিতদের ‘ইগো’কে নিশানা করলেন ২০১১ বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক।

Read More: WTC Final 2023: ওভাল টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার কাছে পর্যুদস্ত হওয়ায় ছাঁটাই হতে চলেছেন রাহুল দ্রাবিড়, দল ঢেলে সাজাবে বিসিসিআই !!

গৌতম গম্ভীরের নিশানায় বিরাট কোহলির মত তারকারা-

Gautam Gambhir | WTC Final | Image: Twitter
Gautam Gambhir | Image: Twitter

২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ফাইনালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হার, ২০১৯ সালের একদিনের বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে পরাজয় নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে, ২০২১-এর বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালেও কিউইদের বিপক্ষে এঁটে উঠতে পারে নি ‘মেন ইন ব্লু।’ আর ২০২৩ সালে টেস্টের বিশ্বখেতাব হাতছাড়া হলো অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে। কেবল ইংল্যান্ডের মাটিতেই গত ছয় বছরে চারটি আইসিসি ট্রফি জয়ের সুযোগ ধুলোয় মিশলো ভারতের। ২০১৩’র চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ের পর থেকে যে দীর্ঘ অপেক্ষা শুরু হয়েছিলো, তা আরও দীর্ঘতর হলো ওভালে। বড় প্রতিযোগিতার শেষ ধাপে এসে কেনো বারবার হোঁচট খাচ্ছে ভারতীয় দল? জবাব খুঁজছেন সমর্থকেরা। গতকালের হারের পর ম্যাচের ময়নাতদন্ত করতে বসে দলের মানসিকতাতেই গলদ খুঁজে পেয়েছেন গৌতম গম্ভীর (Gautam Gambhir)।

সংবাদমাধ্যমে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “আমাদের দলের মধ্যে প্যাশনটাই নেই। এই দলটা ব্যক্তিপুজোয় বিশ্বাসী। একজন স্বতন্ত্র ব্যক্তিকে এখানে দলের থেকে উপরে স্থান দেওয়া হয়, কিন্তু ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড,‌ অস্ট্রেলিয়ায় দেখা যায় উল্টোছবি। সেখানে দলই সবার উপরে।” গম্ভীরের (Gautam Gambhir) নিশানায় যে বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মাদের মত ক্রিকেটদুনিয়ার মহাতারকারা, তা বোঝাই যায় তাঁর মন্তব্য থেকে। ম্যাচ চলাকালীন, এমনকি হারের পরেও বিরাট কোহলিকে (Virat Kohli) ইন্সটাগ্রামে বিভিন্ন ইঙ্গিতপূর্ণ স্টোরি শেয়ার করতে দেখা গিয়েছে। ২০৯ রানের হারের পর বিরাট ইন্সটাগ্রামে পোস্ট করেন, “মৌনতাই শক্তির পরিচয়।” মহম্মদ সিরাজ, শুভমান গিলরাও প্রতিক্রিয়া দেওয়ার জন্য বেছে নিয়েছেন ইন্সটাগ্রামকেই।

ব্যাটিং ব্যর্থতায় হারতে হলো WTC ফাইনাল-

Virat Kohli, Scott Boland | WTC Final | Image: Getty Images
Virat Kohli, Scott Boland | Image: Getty Images

ওভালের বাইশ গজে বড় হয়ে দাঁড়ালো ভারতের ব্যাটিং ব্যর্থতা। টসে জিতে প্রথমে অস্ট্রেলিয়াকে ব্যাট করার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন রোহিত শর্মা (Rohit Sharma)। মহম্মদ সিরাজ শুরুতেই উসমান খোয়াজাকে আউট করেন। প্রথম দিনের লাঞ্চের ঠিক আগে এবং পরে ডেভিড ওয়ার্নার এবং মার্নাস লাবুশেনকে ফেরান শার্দুল (Shardul Thakur) ও শামি। কিন্তু এরপরই খেলা ধরে নেন স্টিভ স্মিথ এবং ট্র্যাভিস হেড (Travis Head)। দুজনে মিলে দেড় দিন ব্যাটিং করে যোগ করেন ২৮৫ রান। বাঁ-হাতি হেড ঝোড়ো ব্যাটিং করে ১৬৩ রান করেন। অন্যদিকে টেস্ট কেরিয়ারের ৩১তম শতরান-সহ ১২১ রান করেন স্মিথ (Steve Smith)। এই জুটির সুবাদেই ৪৬৯ রানে পৌঁছে গিয়েছিলো অস্ট্রেলিয়া। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ভারতের টপ অর্ডারে ভাঙন ধরতে বেশী সময় লাগে নি। ১৫ করে ফেরেন রোহিত, ১৩ রান করেন শুভমান গিল (Shubman Gill), ১৪ রান করেন পূজারা এবং কোহলি (Virat Kohli)। রাহানের (Ajinkya Rahane) ৮৯ রানের লড়াকু ইনিংস, জাদেজার ৪৮ এবং শার্দুল ঠাকুরের ৫১ ভারতকে ২৯৬ রানে পৌঁছে দেয়। প্রথম ইনিংসেই ভারত পিছিয়ে ছিলো ১৭৩ রানে।

দ্বিতীয় ইনিংসে ১৭০ তুলে ইনিংস ডিক্লেয়ার করে দেন অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক কামিন্স (Pat Cummins)। তাড়া করতে নেমে ফের একবার ব্যর্থ শুভমান। ১৮ রানের মাথায় বিতর্কিত ক্যাচে ফিরলেন তিনি। ‘সেট’ হয়েও স্যুইপ মারতে গিয়ে উইকেট ছুঁড়ে দিয়ে এলেন রোহিত (Rohit Sharma)। দ্বিতীয় ইনিংসে করলেন ৪৩। ব্যর্থ পূজারাও। ২৮ রানে আউট হলেন তিনি। কোহলি (Virat Kohli) এবং রাহানের ব্যাটে স্বপ্ন বেঁচে ছিলো ভারতের। অহেতুক অনেকখানি বাইরের বলে ড্রাইভ মারতে গিয়ে স্টিভ স্মিথের হাতে ক্যাচ দিলেন তিনি। তাঁর আউট হওয়ার ধরণ নিয়ে রীতিমত রুষ্ট সুনীল গাওস্কর (Sunil Gavaskar)। ৪৯ করেন কোহলি। ৪৬ করে স্টার্কের শিকার রাহানেও (Ajinkya Rahane)। এরপরেই তাসের ঘরের মত ভেঙে পড়ে টিম ইন্ডিয়ার ব্যাটিং। চতুর্থ দিনের শেষে ভারতের স্কোর ছিলো ৩ উইকেটের বিনিময়ে ১৬৪। পঞ্চম দিনের প্রথম সেশনে মাত্র ৭০ রান যোগ করেই শেষ বাকি ইনিংস। ৪৪৪ তাড়া করতে নেমে ব্যাটিং ব্যর্থতায় ২৩৪ রানেই গুটিয়ে যায় তারা।

Also Read: WTC Final: “চুনোপুটিদের সবাই হারাতে পারে, বড় ম্যাচেই বোঝা যায়…”, চাঁচাছোলা ভাষায় ভারতীয় দলকে আক্রমণ করলেন সুনীল গাওস্কর !!

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *