WTC Final 2023

WTC Final: ‘লন্ডনে লন্ডভন্ড’, ভারতের বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ (WTC) ফাইনালের পারফর্ম্যান্সকে ব্যাখ্যা করতে সম্ভবত এমনটাই বলতেই জটায়ু ওরফে লালমোহন গঙ্গোপাধ্যায়। আরও একটা আইসিসি ফাইনাল, আরও একবার ভারতের ঝুলিতে জুটলো কেবল হতাশা। গত দশ বছর ধরে যে ট্র্যাডিশন সমানে চলে আসছে, তাতে কোনো রকম বদল এলো না এবারও। ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ফাইনালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হার, ২০১৯ সালের একদিনের বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে পরাজয় নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে, ২০২১-এর বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালেও কিউইদের বিপক্ষে এঁটে উঠতে পারে নি ‘মেন ইন ব্লু।’ আর ২০২৩ সালে টেস্টের বিশ্বখেতাব হাতছাড়া হলো অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে। কেবল ইংল্যান্ডের মাটিতেই গত ছয় বছরে চারটি আইসিসি ট্রফি জয়ের সুযোগ ধুলোয় মিশলো ভারতের। ২০১৩’র চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ের পর থেকে যে দীর্ঘ অপেক্ষা শুরু হয়েছিলো, তা আরও দীর্ঘ হলো আজ।

অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে নামার আগে ভারতকেই ‘ফেভারিট’ বলছিলেন অনেক বিশেষজ্ঞ। গত ছয় বছরে টেস্ট ক্রিকেটে ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া টেস্ট সিরিজের ফলাফল দেখলে তা মনে হওয়া স্বাভাবিক। ঘরে-বাইরে দাপট দেখিয়ে টানা চার বার বর্ডার-গাওস্কর ট্রফি জিতেছে ‘টিম ইন্ডিয়া’ই। কিন্তু দ্বিপাক্ষিক সিরিজ আর আইসিসি টুর্নামেন্টের ফাইনাল যে এক নয়, তা আবার প্রমাণ হয়ে গেলো ওভালে। বড় মঞ্চের চাপ সামলাতে পারলেন না ভারতের তারকারা। স্টিভ স্মিথ, প্যাট কামিন্সদের সামনে আগাগোড়া গুটিয়েই রইলেন তাঁরা। বিশ্ব ক্রিকেটের সফলতম দেশ অস্ট্রেলিয়ার মুকুটে যখন আরও একটা সোনালী পালক যুক্ত হলো, তখন ভারতের জন্য ফের জুটলো একরাশ হতাশা। গতবার নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে হারতে হয়েছিলো ৮ উইকেটে, এবার অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ২০৯ রানে হেরে ফের একবার মুখ পুড়লো কোহলি, রোহিত শর্মাদের।

Read More: WTC Final 2023: “এদের কাছে দেশের থেকে এখন আইপিএল বড়…”, অজিদের কাছে নাস্তানাবুদ হওয়া ভারতকে নোংরা ট্রোল সোশ্যাল মিডিয়ায় !!

প্রশ্ন উঠবে ভারতের স্ট্র্যাটেজি নিয়ে-

Travis Head, Steve Smith | WTC Final | Image: Getty Images
Travis Head, Steve Smith | Travis Head, Steve Smith |

সাদাম্পটনে বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে জোড়া স্পিনার খেলিয়ে বিপদে পড়তে হয়েছিলো ভারতীয় দলকে। ওভালে নামার আগেও সম্ভবত সেই ভয় কাজ করছিলো কোচ রাহুল দ্রাবিড়ের মাথায়। প্রথম একাদশ থেকে রবিচন্দ্রণ অশ্বিনকে ছেঁটে ফেলে চার পেসার ও এক স্পিনার হিসেবে রবীন্দ্র জাদেজাকে ব্যবহার করার পথে হেঁটেছিলেন তিনি। বুধবারের সকালে মেঘলা আবহাওয়ায় সেই স্ট্র্যাটেজি কাজও করেছিলো কিছুক্ষণ। শুরুতেই উসমান খোয়াজাকে আউট করেছিলেন মহম্মদ সিরাজ। কিন্তু এরপরই মেঘ কেটে আকাশ পরিষ্কার হওয়া শুরু হয়। সূর্যের আলোয় যত ঝলমলে হয়ে উঠেছে কেনিংটন ওভাল, ততই অন্ধকারে তলিয়ে গিয়েছে ভারতের বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ের স্বপ্ন। টসের সিদ্ধান্ত নিয়েও বিতর্কের অবকাশ থাকবে। ওভালের পরিসংখ্যান বলছে প্রথমে ব্যাটিং করে জয়ের সংখ্যা বেশী। প্রথম ইনিংসের গড় স্কোরও অনেকটাই বেশী। কিন্তু ভারত অধিনায়ক রোহিত বাছলেন বোলিং। গোটা ম্যাচেই ভারতের বিরুদ্ধে গেলো রোহিতের এই সিদ্ধান্ত।

খোয়াজাকে ফিরিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ওপর যে চাপ বাড়িয়েছিলেন সিরাজ, তা ধরে রাখতে পারলেন না বোলাররা। প্রথমে ডেভিড ওয়ার্নার এবং পরে স্টিভ স্মিথ ও ট্র্যাভিস হেড ভারতকে ব্যাকফুটে ঠেলে দিলেন ওভালে। ২৮৫ রানের বিশাল পার্টনারশিপ গড়েন স্মিথ ও হেড। ভারতের বিরুদ্ধে জ্বলে ওঠার ট্র্যাডিশন বজায় রাখলেন স্মিথ। ৩১তম টেস্ট সেঞ্চুরি করলেন তিনি। ওভালে এই নিয়ে চার টেস্টে তাঁর তৃতীয় শতরান। ১২১ রানের ইনিংস খেলেন প্রাক্তন অজি অধিনায়ক। স্মিথ যেখানে স্থিতধী ছিলেন সেখানে ঝোড়ো ইনিংস খেলেন হেড। ১৬৩ রান করেন তিনি। মূলত এই দুজনের ব্যাটে ভর দিয়েই ৪৬৯ রান স্কোরবোর্ডে তোলে অস্ট্রেলিয়া। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ভারতের তারকাখচিত টপ-অর্ডার গুঁড়িয়ে যায় অস্ট্রেলীয় বোলিং-এর সামনে। শুভমান গিল, রোহিত শর্মা, চেতেশ্বর পূজারা, বিরাট কোহলি-রান পান নি কেউই। জাদেজার ৪৮, অজিঙ্কা রাহানের ৮৯ এবং শার্দুল ঠাকুরের ৫১ রানের সুবাদে ২৯৬ অবধি পৌঁছায় টিম ইন্ডিয়া। প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার লিড ছিলো ১৭৩।

পঞ্চম দিনে প্রথম সেশনেই শেষ ভারতের প্রতিরোধ-

Virat Kohli, Scott Boland | WTC Final | Image: Getty Images
Virat Kohli, Scott Boland | Image: Getty Images

তৃতীয় ইনিংসে ভারতের বোলাররা অপেক্ষাকৃত ভালো বোলিং করলেন ওভালে। অ্যালেক্স ক্যারি (৬৬*), মার্নাস লাবুশেন (৪১) এবং মিচেল স্টার্কের (৪১) সৌজন্যে ২৭০ রান স্কোরবোর্ডে যোগ করে ডিক্লেয়ার করে অস্ট্রেলিয়া। জয়ের জন্য ভারতের দরকার ছিলো ৪৪৪ রান। ওভালের ইতিহাস বলে ২৬৩’র বেশী রান চতুর্থ ইনিংসে তাড়া করে জয়ের নজির নেই এই মাঠে। ইতিহাস বদলের সুযোগ ছিলো ভারতের সামনে। রোহিত শর্মা এবং শুভমান গিল শুরুটা দ্রুতলয়ে করলেও দুর্ভাগ্য তাড়া করে ভারতকে। বিতর্কিত এক ক্যাচে ১৮ রানের মাথায় আউট হন শুভমান। নাথান লিয়ঁর বলে উইকেট খোয়ান রোহিত’ও (৪৩)। ম্যাচে সব মিলিয়ে ৫ উইকেট নিলেন লিয়ঁ। ভারতের অশ্বিনকে বাইরে রাখার সিদ্ধান্তে প্রশ্ন তুলে দিয়ে গেলো তাঁর পারফর্ম্যান্স। চতুর্থ দিনের শেষে পূজারাকেও হারায় ভারত। ৪৪ রানের মাথায় ব্যাট করছিলেন কোহলি, ২০ রানে অপরাজিত ছিলেন রাহানে। ‘টিম ইন্ডিয়া’র ভাগ্য টিকে ছিলো এই দুজনের ব্যাটেই।

রাহানে-কোহলি জুটিকে ভাঙতে পঞ্চম দিনের সকালে বিশেষ খাটনি করতে হয় নি অস্ট্রেলিয়াকে। স্কট বোল্যান্ডের বাইরে যাওয়া বলে ড্রাইভ মারতে গিয়ে ফের উইকেট ছুঁড়ে দিয়ে আসেন কোহলি। ৪৯ রান করে স্টিভ স্মিথের হাতে ধরা পড়েন তিনি। এরপর থেকে ভারতীয় ব্যাটারদের যাওয়া-আসা চলতেই লাগলো ওভালে। রবীন্দ্র জাদেজা বোল্যান্ডের ওভারেই আউট হলেন শূন্য রান করে। কে এস ভরতকে নিয়ে লড়ছিলেন রাহানে। দ্বিতীয় ইনিংসে স্টার্কের শিকার হলেন তিনি। ৪৬ রানের বেশী এগোলো না তাঁর ইনিংস। রাহানে ফিরতেই হার একপ্রকার নিশ্চিত হয়েই গিয়েছিলো। শার্দূল (০), উমেশ যাদব (১) কোনো প্রতিরোধই গড়ে তুলতে পারেন নি। ২৩ রান করে লিয়ঁ’র শিকার হলেন কে এস ভরত। লিয়ঁ’র বলে বোল্যান্ডের হাতে সিরাজ ধরা পড়তেই শেষ ভারতের স্বপ্ন। ২৩৪ রানে শেষ হলো ইনিংস। ৭ উইকেট পড়লো মাত্র ৭০ রানে। এই হারাকিরির দায় কার? যেখানে লিয়ঁ ভারতকে দুরমুশ করলেন দ্বিতীয় ইনিংসে ৪১ রানের বিনিময়ে ৪ উইকেট নিয়ে সেখানে বিশ্বের এক নম্বর বোলার অশ্বিন কেনো বাইরে? ভারতের হারে প্রশ্ন উঠবে নিশ্চিত। অক্টোবর-নভেম্বর মাসে রয়েছে বিশ্বকাপ। তার আগে মানসিকতার পরিবর্তন না হলে দেশের মাটিতেও যে কাপস্বপ্ন অধরাই থেকে যাবে তা একপ্রকার বলে দেওয়াই যায় ওভালে ভারতের পারফর্ম্যান্স দেখে।

Also Read: WTC Final 2023: “ও মাঠে ফ্লায়িং কিস দিতেই ভালো পারে…”, ওভালে ব্যাট হাতে ফের ব্যর্থ বিরাটকে চরম ট্রোল নেটিজেনদের !!

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *