ভারতীয় ক্রিকেটের উপেক্ষিত নায়কদের মধ্যে অন্যতম ঋদ্ধিমান সাহা (Wriddhiman Saha)। ২০১৪ সালে মহেন্দ্র সিং ধোনি টেস্ট থেকে অবসর নেওয়ার পর উইকেটের পিছনে দস্তানা হাতে দাঁড়ানোর গুরুদায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন ঋদ্ধি। উপমহাদেশের ঘূর্ণি উইকেট হোক অথবা দক্ষিণ আফ্রিকা বা অস্ট্রেলিয়ার পেস, বাউন্স সমৃদ্ধ বাইশ গজ, সব জায়গাতেই সমান সাবলীল ছিলেন তিনি। শূন্যে শরীর ছুঁড়ে অবিশ্বাস্য সব ক্যাচ দস্তানাবন্দী করা হোক অথবা ঝড়ের বেগে স্টাম্পিং-ঋদ্ধিমানের (Wriddhiman Saha) ‘ফ্যান’ হয়েছেন অশ্বিন থেকে বিরাট কোহলি,সকলেই। কেবল উইকেটরক্ষক নয়, ব্যাটার হিসেবেও তিনি যে বিশ্বমানের তাও বারবার প্রমাণ করেছেন বাঙালি তারকা। কখনও আইপিএলের ফাইনালে করেছেন শতরান, কখনও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পেরিয়েছেন তিন অঙ্কের মাইলস্টোন। এমনকি এক ঝলমলে ইনিংসের বিবরণ রইলো এই প্রতিবেদনে।
Read More: IND vs AUS 4th Test: ট্র্যাভিস হেড বধের ছক কষেছেন আকাশ দীপ, মেনে চললে সাফল্য পাবে ভারত !!
টি-২০তে বিধ্বংসী শতরান ঋদ্ধি’র-
২০১৯ সালের সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফিতে (SMAT) বাংলার জার্সিতে মাঠে নেমেছিলেন ঋদ্ধিমান সাহা (Wriddhiman Saha)। গ্রুপ-ডি’র ম্যাচে প্রতিপক্ষ ছিলো অরুণাচল প্রদেশ। কটকের বারাবাটি স্টেডিয়ামে সেদিন ‘সুপারম্যান’ অবতারেই দেখা গিয়েছিলো ঋদ্ধিমান’কে। টসে জিতে প্রথমে ব্যাটিং-এর সিদ্ধান্ত নেয় বাংলা। ঋত্বিক রায় চৌধুরীর সাথে ওপেন করতে নেমেছিলেন শিলিগুড়ির ক্রিকেটার। চতুর্থ ওভারের গোড়াতেই প্রথম উইকেট খুইয়ে বসেছিলো বাংলা দল। এরপর ফিরে যান অধিনায়ক মনোজ তিওয়ারিও। জোড়া ধাক্কা’ও ঋদ্ধির (Wriddhiman Saha) মনোসংযোগে কোনো রকম চিড় ধরাতে পারে নি সেদিন। উত্তর-পূর্বের রাজ্যের বিপক্ষে রীতিমত ধ্বংসযজ্ঞ চালান তিনি। প্রথমে জুটি গড়েছিলেন অভিমন্যু ঈশ্বরণের (Abhimanyu Easwaran) সাথে। পরে দুর্দান্ত ক্যামিও ইনিংস খেলে ঋদ্ধিকে সঙ্গ দেন বিবেক সিং-ও।
১৬টি বাউন্ডারি মারেন ঋদ্ধিমান সাহা (Wriddhiman Saha)। বারাবাটির গ্যালারিতে বল আছড়ে ফেলেন চার বার। অখিলেশ সাহানি’র বলে যখন অঙ্কিত সিং-এর হাতে ধরা পড়েন ম্যাচের ২০তম ওভারে, ততক্ষণে তাঁর নামের পাশে লেখা হয়ে গিয়েছে ১২৯ রান। মাত্র ৬২ বলে ২০৮.০৬ স্ট্রাইক রেটে ইনিংসটি খেলেন ঋদ্ধি (Wriddhiman Saha)। এটি তাঁর কেরিয়ারের দ্বিতীয় টি-২০ শতরান ছিলো। বাংলার হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান করেন বিবেক সিং। মাত্র ১৮ বলে ৪৯ রান আসে তাঁর ব্যাট থেকে। নির্ধারিত ২০ ওভারে বাংলা তোলে ৬ উইকেটের বিনিময়ে ২৩৪ রান। অরুণাচলের পক্ষে এই ম্যাচে জয় ছিনিয়ে নেওয়া কার্যত অসম্ভব ছিলো। ২০ ওভারে ৪ উইকেটের বিনিময়ে ১২৭-এর রানের বেশী এগোতে পারে নি তারা। ১০৭ রানের বিশাল ব্যবধানে জয় ছিনিয়ে নেয় বাংলাই। সায়ন ঘোষ ও অয়ন ভট্টাচার্য্য একটি করে উইকেট পান।
দেখুন ম্যাচের স্কোরকার্ড-
ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছেন ঋদ্ধিমান-
২০০৭ সালে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছিলো ঋদ্ধিমান সাহা’র (Wriddhiman Saha)। ২০১০ সালে খেলেন প্রথম টেস্ট ম্যাচ। সতেরো বছর পর বাইশ গজের সাথে সম্পর্কে ইতি টানলেন তিনি। রাহুল দ্রাবিড় কোচ হয়ে আসার পর জাতীয় দলের দরজা বন্ধ হয়েছিলো তাঁর সামনে। আইপিএল ও ঘরোয়া ক্রিকেট খেলছিলেন তিনি। সরে দাঁড়ালেন সেখান থেকেও। বাংলার কর্মকর্তাদের সাথে মনোমালিন্যের কারণে পাড়ি দিয়েছিলেন ত্রিপুরায়। কিন্তু ২০২৪ মরসুমের আগে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ও অন্যান্য সিএবি কর্তাদের সাথে আলোচনার পর ঘরে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন ঋদ্ধি (Wriddhiman Saha)। এই মরসুমে রঞ্জি খেলেই ক্রিকেটকে পুরোপুরি বিদায় জানিয়েছেন শিলিগুড়ির পাপালি। ৪০ টেস্টে ২৯.৪১ গড় ও ৩ শতরান-সহ ১৩৫৩ রান রয়েছে তাঁর। ৯টি ওডিআই’ও খেলেছেন ভারতের হয়ে। আইপিএল জিতেছেন চেন্নাই ও গুজরাতের হয়ে।