World Cup 2023: ভারতের মাটিতে বিশ্বকাপ (ICC World Cup 2023) খেলতে এসে ঘোর বিপর্যয়ের মুখে পাকিস্তান শিবির। প্রথম দুই ম্যাচে জয় এসেছিলো। নেদারল্যান্ডস এবং শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে জিতে পয়েন্ট তালিকার উপরের দিকে জায়গা করে নিয়েছিলো পাক দল। সমর্থকেরা ১৯৯২-এর পর ফের একবার বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের মাটি থেকে বিশ্বকাপ (ICC World Cup 2023) জিতে ফেরার সম্ভাবনা উদ্বেল করে তুলেছিলো পাক ক্রিকেটের অনুরাগীদের। তবে এরপর বিশ্বকাপ যত এগিয়েছে একের পর এক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে বাবর আজমদের (Babar Azam)। শুরুটা হয়েছিলো আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে ভারতের বিরুদ্ধে ৭ উইকেটের ব্যবধানে বড় হার দিয়ে। এই একটা পরাজয় শাহীন-শাদাবদের মনোবলে যে আঘাত করেছে, তার রেশ কাটিয়ে এখনও উঠতে পারে নি পাকিস্তান দল।
বিশ্বকাপের চতুর্থ ম্যাচে পাকিস্তানের প্রতিপক্ষ ছিলো অস্ট্রেলিয়া। বেঙ্গালুরুর ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে পাক বোলিং তারকাদের নিয়ে রীতিমত ছেলেখেলা করতে দেখা গিয়েছিলো ডেভিড ওয়ার্নার, মিচেল মার্শদের। দুই ওপেনারের জোড়া শতকের সুবাদে অস্ট্রেলিয়া তুলে নেয় ৩৬৯ রান। জবাবে পাকিস্তান ৩০৫ রানের বেশী এগোতে পারে নি। টানা হারের গ্লানি ঝেড়ে ফেলতে আফগানিস্তান ম্যাচকেই ‘পাখির চোখ’ করেছিলেন বাবর আজম’রা (Babar Azam)। দিনকয়েক আগে আফগানদের একদিনের সিরিজে ৩-০ হারিয়েছিলেন তাঁরা। অধিকাংশ বিশেষজ্ঞও বাজি ধরেছিলেন পাকিস্তানের পক্ষেই। কিন্তু চেন্নাইয়ের চিপকের মাঠে দুঃসময় কাটে নি পাকিস্তানের। রশিদ খান (Rashid Khan), মুজিব উর রহমান, রহমানুল্লাহ গুরবাজরাও ৮ উইকেটে হারিয়ে দেন বাবর-বাহিনীকে। টানা তিন ম্যাচ হেরে সমালোচনায় বিদ্ধ পাকিস্তান দল। তাঁদের দিকে কটাক্ষের বাণ ছুঁড়লেন ভারতীয় প্রাক্তনী বীরেন্দ্র শেহবাগ’ও (Virender Sehwag)।
Read More: World Cup 2023: “মুখ দেখে মনে হয় আট কিলো বিরিয়ানি…’, আফগানদের কাছে ম্যাচ হারায় বাবার আজমদের একহাত নিলেন ওয়াসিম আক্রম !!
ইতিহাস গড়লো আফগানিস্তান-
২০১৯ সালের বিশ্বকাপে (ICC World Cup) পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জয়ের খুব কাছাকাছি এসেও খালি হাতে ফিরতে হয়েছিলো আফগানিস্তানকে। ইমাদ ওয়াসিমের ব্যাটে দুই বল বাকি থাকতে জয় তুলে নিয়েছিলো পাক শিবির। এবার আর তীরে এসে তরী ডোবার গল্পের পুনরাবৃত্তি দেখা যায় নি। বরং আগাগোড়া দাপট বজায় রেখে ম্যাচ ছিনিয়ে নিয়েছেন মহম্মদ নবি (Mohammad Nabi), আজমাতুল্লাহ ওমরজাই, হাসমাতুল্লাহ শাহিদীরা (Hashmatullah Shahidi)। চিপকের স্পিন সহায়ক পিচে চার স্পিনারকে ব্যবহার করে আফগান শিবির। ম্যাচে তফাৎ গড়ে দিলো কোচ জোনাথন ট্রটের এই সিদ্ধান্তই। অভিষেকে অনবদ্য বোলিং করেন নূর আহমেদ (Noor Ahmed)। বছর আঠারোর স্পিনার ৪৯ রানের বিনিময়ে আউট করেন আবদুল্লাহ শফিক, বাবর আজম এবং মহম্মদ রিজওয়ানকে।
শফিক (Abdullah Shafique), বাবরের অর্ধশতক, ইফতিকার (Iftikar Ahmed) ও শাদাব খানের ঝোড়ো ক্যামিও পাকিস্তানকে পৌঁছে দিয়েছিলো ২৮২ রানে। তাড়া করতে নেমে পাকিস্তানের তারকাখচিত বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে বুক চিতিয়ে লড়তে দেখা গেলো রহমানুল্লাহ গুরবাজ এবং ইব্রাহিম জাদ্রানকে। গুরবাজের (Rahmanullah Gurbaz) ৬৫ এবং জাদ্রানের (Ibrahim Zadran) ৮৭ রানের ইনিংস আফগানিস্তানের জয়ের ভিত গড়ে দেয়। দুই ওপেনার ফিরে যাওয়ার পর ইনিংসের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন রহমত শাহ এবং অধিনায়ক হাসমাতুল্লাহ শাহিদী। রহমত শাহ (Rahmat Shah) অপরাজিত থাকেন ৭৭ রান করে, শাহিদীর ব্যাট থেকে আসে ৪৬* রান। ইংল্যান্ডকে হারিয়ে চলতি বিশ্বকাপে প্রথম জয় পেয়েছিলো আফগানিস্তান। গতকাল পাকিস্তানকে হারিয়ে টুর্নামেন্টের ‘জায়ান্ট কিলার’ হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করলো তারা।
পাকিস্তান শিবিরকে বিদ্রুপ শেহবাগের-
বিশ্বকাপ (ICC World Cup 2023) শুরুর আগে পাকিস্তান দলকে অনেকেই সম্ভাব্য খেতাবজয়ীদের তালিকায় রেখেছিলেন। সেখান থেকে বর্তমানে তারা দাঁড়িয়ে বিদায়ের মুখে। টুর্নামেন্ট এখন সব মাঝপথে। আর সেমিফাইনালের রুটম্যাপ খুঁজে পেতে এখন থেকেই জটিল অঙ্কের হিসেব কষা শুরু করতে হচ্ছে পাক সমর্থকদের। হতশ্রী পারফর্ম্যান্সের জন্য ঘরে-বাইরে সমালোচনার মুখে পড়েছেন ক্রিকেটাররা। পাকিস্তানের একটি টেলিভিশন চ্যানেলের সাক্ষাৎকারে প্রাক্তন ক্রিকেটার ওয়াসিম আক্রম (Wasim Akram) প্রশ্ন তুলেছেন ক্রিকেটারদের ফিটনেস নিয়ে। ফিল্ডিং গাফিলতির দিকে ইঙ্গিত করে তিনি জানান, “দুই বছর ধরে দলে কোনো ফিটনেস পরীক্ষা হয় না। কয়েকজনকে দেখে মনে হচ্ছে দিনে আট কিলো করে খাসির মাংস খায়, নিহারী খায়।” ঐ একই অনুষ্ঠানে বাবর আজমের নেতৃত্বকেও তুলোধোনা করতে দেখা গিয়েছে মঈন খান, শোয়েব মালিকদের।
পাকিস্তানের পারফর্ম্যান্সে খুশি নন ভারতীয় প্রাক্তনী বীরেন্দ্র শেহবাগ’ও (Virender Sehwag)। নিজের ট্যুইটার হ্যান্ডেলে গতকাল ম্যাচ শেষে একটি পোস্ট করেন তিনি। ‘নজফগড়ের নবাব’-এর মতে ব্যর্থতার দায় পাক শিবিরেরই। তিনি লিখেছেন, “পাকিস্তান দল কখন কি করবে তা বলা যায় না। তবে যেভাবে আগের হারগুলোর পর ওদের তরফ থেকে হাবিজাবি অজুহাত দেওয়া হচ্ছিলো, তাতে বলা যায় যে এমনটা (আফগানিস্তানের বিপক্ষে পরাজয়) হওয়ারই ছিলো। নিজেদের দুর্বলতাগুলোর দিকে খেয়ালই করে নি ওরা…” একই সাথে আফগানিস্তান দলকে শুভেচ্ছা জানাতেও ভোলেন নি বীরু। লেখেন, “…আফগানিস্তান ক্রিকেটের জন্য কি গর্বের একটা দিন। ওরা এর আগে বহুবার কাছাকাছি এসেছিলো, কিন্তু এইবার লক্ষ্য ছুঁতে পেরেছে।”
দেখে নিন শেহবাগের পোস্ট’টি-
Pakistan is an unpredictable side but the way they have been making lame excuses for their earlier defeats, this was certainly on the cards. Just did not focus on their many weaknesses. What a proud day for Afghanisitan, came close many times but today crossed the line. #AFGvsPAK pic.twitter.com/axdkdSZVFo
— Virender Sehwag (@virendersehwag) October 23, 2023