ICC World Cup 2023: অপেক্ষার আর মাত্র কয়েকমাসের। তারপরেই বিশ্ব ক্রিকেটের সর্বোচ্চ প্রতিযোগিতার আসর বসতে চলেছে ভারতের মাটিতে। ২০১১’র পর আবার ২০২৩ সালে ভারতে বসবে একদিনের ক্রিকেট বিশ্বকাপের (ICC World Cup) আসর। এর আগে তিনবার (১৯৮৭,১৯৯৬ এবং ২০১১) ভারত আয়োজন করেছে বিশ্বকাপ। কিন্তু প্রতিবারই পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা বা বাংলাদেশের মত উপমহাদেশের অন্যান্য ক্রিকেটখেলিয়ে দেশের সাথে ভাগ করে নিতে হয়েছে দায়িত্ব। এইবারই প্রথম একক দায়িত্ব পেয়েছে বিসিসিআই। ভারতেই হবে সমগ্র বিশ্বকাপ। এই সুযোগের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে চায় ভারতীয় বোর্ড। ২০১১ সালে ভারতে শেষ যেবার বিশ্বকাপ হয়েছিলো, সেইবার ট্রফি ঢুকেছিলো টিম ইন্ডিয়ার ক্যাবিনেটেই। ২৮ বছরের অপেক্ষার পর বিশ্বখেতাবের গায়ে লেখা হয়েছিলো ভারতের নাম। বারো বছর পর ওয়াংখেড়ের সেই সোনালী রাত আবার ফেরাতে চায় ‘মেন ইন ব্লু।’
খেতাবের লক্ষ্যে ভারতের লড়াই সহজ হবে না। দশ দলীয় প্রতিযোগিতায় রয়েছে একাধিক ফেভারিট। প্রতিযোগিতার ইতিহাসে সফলতম দল অস্ট্রেলিয়া যেমন রয়েছে, তেমনই নিজেদের খেতাব ধরে রাখার চেষ্টায় থাকবে ২০১৯-এর জয়ী দল ইংল্যান্ডও। বরাবরের মতই ‘ডার্ক হর্স’ হতে পারে পাকিস্তান এবং নিউজিল্যান্ড। দশ দলের মধ্যে ৮ দল এখনই চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে। মূলপর্বে বাকি দুই দল কারা, তা জানা যাবে জিম্বাবুয়েতে আয়োজিত কোয়ালিফাইং টুর্নামেন্টের পরে। এখনও অবধি সরকারী ভাবে ক্রীড়াসূচী সামনে না এলেও জানা যাচ্ছে ৫ অক্টোবর আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে সূচনা হতে পারে বিশ্বকাপের। আর ১৯ নভেম্বর ফাইনালও হবে আহমেদাবাদেই। মোট ১২ শহরে খেলা হতে পারে বলে জানা যাচ্ছে। তালিকায় রয়েছে-মুম্বই, দিল্লী, রাজকোট, হায়দ্রাবাদ, কলকাতা, চেন্নাই, দিল্লী, আহমেদাবাদ, ধর্মশালা, গুয়াহাটি, লক্ষ্ণৌ এবং ইন্দোর। সময় যত এগিয়ে আসছে ততই বিশ্বকাপকে ঘিরে বাড়ছে জল্পনাও। সেরার দৌড়ে এগিয়ে কারা, কারা বা রয়েছে একটু পিছিয়ে, তা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণও শুরু হয়ে গিয়েছে এর মধ্যেই। বিশ্বকাপের পরিণতি নিয়ে পাক প্রাক্তনী মিসবাহ-উল-হকের (Misbah-ul-Haq) মন্তব্য সাড়া ফেলেছে সমর্থকদের মধ্যে।
Read More: World Cup 2023: সামনে এলো বিশ্বকাপের ক্রীড়াসূচি, প্রথম ম্যাচেই ভারতের জন্য অপেক্ষা করছে কঠিন চ্যালেঞ্জ !!
আহমেদাবাদে বিশ্বকাপের মেগা ম্যাচ-
বিশ্বকাপ এলেই অধীর আগ্রহ নিয়ে বিশ্ববাসী যে ম্যাচটির দিকে তাকিয়ে থাকেন তা অবশ্যই ভারত বনাম পাকিস্তান। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই দেশ যখনই মুখোমুখি হয় তখনই ছিটকে বেরোয় স্ফুলিঙ্গ। আর তা যদি হয় বিশ্বকাপের মত মঞ্চে তাহলে তো আর কথাই নেই। ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপে প্রথমবার মুখোমুখি হয়েছিলো দুই দল। এরপর থেকে বিশ্বকাপের প্রতিটি সংস্করণেই একে অন্যের মুখোমুখি হয়েছে দুই দল। ভারতকে একদিনের বিশ্বকাপের ম্যাচে কখনও হারাতে পারে নি পাকিস্তান। ফলাফল ‘টিম ইন্ডিয়া’র পক্ষে ৭-০। ২০২৩ সালেও সেই ট্র্যাডিশন অক্ষত রাখার প্রচেষ্টাই করবেন রোহিত শর্মা (Rohit Sharma), বিরাট কোহলিরা (Virat Kohli)। এখনও অবধি চূড়ান্ত সূচী সামনে না এলেও বিসিসিআই-এর তরফে যে খসড়া সূচী পাঠানো হয়েছে আইসিসি’র কাছে অনুমোদনের জন্য, তা অনুযায়ী ভারত বনাম পাকিস্তান মহারণ হতে পারে ১৫ অক্টোবর। লড়াইয়ের মঞ্চ হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডীয়ামকে। রবিবারের ছুটির দিনে বিশ্বের সবচেয়ে বেশী দর্শকবিশিষ্ট নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামের একটি আসনও খালি থাকবে না বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ১ লাখ ৩২ হাজার মানুষ সেদিন মাঠে বসে কোহলি বনাম বাবর আজমের (Babar Azam) লড়াই উপভোগ করতে পারেন।
ভারতের সম্ভাব্য বিশ্বকাপ সূচী দেখুন-
Date | Match | Venue |
০৮/১০/২০২৩ | ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া | চেন্নাই |
১১/১০/২০২৩ | ভারত বনাম আফগানিস্তান | দিল্লী |
১৫/১০/২০২৩* | ভারত বনাম পাকিস্তান* | আহমেদাবাদ* |
১৯/১০/২০২৩ | ভারত বনাম বাংলাদেশ | পুণে |
২২/১০/২০২৩ | ভারত বনাম নিউজিল্যান্ড | ধর্মশালা |
২৯/১০/২০২৩ | ভারত বনাম ইংল্যান্ড | লক্ষ্ণৌ |
০২/১১/২০২৩ | ভারত বনাম কোয়ালিফায়ার ১ | মুম্বই |
০৫/১১/২০২৩ | ভারত বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা | কলকাতা |
১১/১১/২০২৩ | ভারত বনাম কোয়ালিফায়ার ২ | বেঙ্গালুরু |
বিশ্বকাপ ফাইনালে মুখোমুখি ভারত-পাক, বলছেন মিসবাহ-
বর্তমানে ভারত বনাম পাকিস্তান লড়াই চলছে বাইশ গজের বাইরে ক্রিকেট কূটনীতির টেবিলেও। বিতর্কের কেন্দ্রে ২০২৩ সালের এশিয়া কাপ। এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (ACC) ক্যালেন্ডার অনুযায়ী এশিয়া কাপ এই বছর আয়োজিত হওয়ার কথা ছিলো পাকিস্তানে। কিন্তু সুরক্ষার প্রশ্নে পাকিস্তানে যাওইয়ার ব্যাপারে আপত্তি জানিয়েছে বিসিসিআই। সচিব জয় শাহ (Jay Shah) সাফ জানিয়ে দিয়েছেন যে ওয়াঘা সীমান্তের পশ্চিম পারে পা রাখবেন না রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলিরা। সেই নিয়ে চলছে দীর্ঘ টালবাহানা। এশিয়া কাপ আয়োজন থেকে সরতে রাজী নয় পাকিস্তান। ভারতও সরছে না নিজেদের অবস্থান থেকে। বহু বৈঠক, আলোচনা হলেও কোনো সমাধানসূত্র মেলে নি। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান নাজম শেঠি (Najam Sethi) এর আগে জানিয়েছিলেন যে ভারত যদি পাকিস্তানে এশিয়া কাপ খেলতে না যায় তাহলে পাকিস্তানও ভারতে আসবে না বিশ্বকাপ খেলতে।
তবে বিশ্বকাপ বয়কট করলে আইসিসি’র রোষ যে অপেক্ষা করে রয়েছে তা সম্ভবত বুঝেছে পাকিস্তান। ফলে বয়কটের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার পথে তাঁরা। শাহীদ আফ্রিদির (Shahid Afridi) মত অনেক প্রাক্তনী এর আগেই জানিয়েছিলেন যে ভারতে গিয়ে ভালো পারফর্ম করেই ভারতকে জবার দেওয়ার কথা ভাবা উচিৎ পাকিস্তানের। পড়শি দেশের ক্রিকেটমহল যে বয়কট নয়, বরং বাবর আজমদের (Babar Azam) ভারতে এসে বিশ্বকাপে অংশ নেওয়ারই পক্ষপাতী তা বোঝা গেলো প্রাক্তন পাকিস্তানী অধিনায়ক মিসবাহ-উল-হকের (Misbah-ul-Haq) কথা। খেলোয়াড় জীবনে মিসবাহ ভারতের বিরুদ্ধে ২০০৭ সালের টি-২০ বিশ্বকাপ ফাইনালে হেরেছেন। ২০১১ সালের বিশ্বকাপ সেমিফাইনালেও হেরেছেন মোহালির মাঠে। বর্তমানে বাইশ গজকে বিদায় জানিয়ে বিশেষজ্ঞের ভূমিকায় রয়েছেন তিনি। নিউজ ২৪ স্পোর্টসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মিসবাহ (Misbah-ul-Haq) বলেন পাকিস্তান ভারতের মাটিতে বিশ্বকাপের ফাইনালে পৌঁছবে। আর প্রতিপক্ষ হিসেবে খেতাবী লড়াইতে পাবে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতকে।