World Cup 2023: মাসখানেক আগেও আইসিসি র্যাঙ্কিং-এ শীর্ষস্থানে ছিলো পাকিস্তান দল। কিন্তু এশিয়া কাপের শেষ চারে ভারতের বিরুদ্ধে ২২৮ রানের ব্যবধানে একটা পরাজয়ই পাক ক্রিকেটের ইমারতের ভিত ধসিয়ে দিয়েছে যেন। এরপর থেকে লাগাতার ঘুরে দাঁড়ানোর রাস্তা খুঁজে চলেছে তারা। এশিয়া কাপ থেকে বিদায় নিতে হয়েছিলো ফাইনালের আগেই। বিশ্বকাপে (ICC World Cup 2023) এসে প্রথম দুই ম্যাচে নেদারল্যান্ডস এবং শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে খানিক গুছিয়ে নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন বটে বাবর আজম, শাহীন আফ্রিদি’রা। কিন্তু পরের দুই ম্যাচে ভারত এবং অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে পরাজয় আভাস দিয়েছিলো যে মাঝদরিয়ায় তরী দুলছে ফের। আজ চেন্নাইয়ের বাইশ গজে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৮ উইকেটের ব্যবধানে হার পাক ক্রিকেটের ভরাডুবি একপ্রকার নিশ্চিত করে দিলো।
দুই পড়শি দেশের লড়াইতে আজ টস জিতেছিলো পাকিস্তানই। প্রথমে ব্যাটিং বেছে নেন বাবর আজম। ফের ব্যর্থ ইমাম উল হক। প্রথম উইকেট খোয়ানোর পর রুখে দাঁড়ান আবদুল্লাহ শফিক এবং অধিনায়ক বাবর। তাদের জোড়া অর্ধশতক পাকিস্তান ইনিংসকে লড়াইয়ের মঞ্চ গড়ে দেয়। মিডল অর্ডারে রিজওয়ান, সাউদ শাকিল উল্লেখযোগ্য রান না পেলেও কার্যকরী ভূমিকা নিলেন ইফতিকার আহমেদ এবং শাদাব খান। তাঁদের ক্যামিও পাক দলকে পৌঁছে দেয় ২৮২তে। চেন্নাইতে এই রান তাড়া করা সহজ ছিলো না। তবে চ্যালেঞ্জ দুই হাতে স্বীকার করেছিলেন দুই ওপেনার ইব্রাহিম জাদ্রান এবং রহমানুল্লাহ গুরবাজ। দুটো অসাধারণ ইনিংস খেলে তাঁরা যখন ফেরেন, তখন আফগানদের দ্বিতীয় জয় একপ্রকার নিশ্চিত। রহমত শাহ এবং হাসমাতুল্লাহ শাহিদীর ব্যাটে নির্বিবাদে লক্ষ্যে পৌঁছে গেলো আফগানিস্তান। ডুরান্ড লাইনের এক পাশের জনতা যখন মাতলেন উৎসবে, তখন অন্যপাশে নামলো শ্মশানের নিস্তব্ধতা।
Read More: World Cup 2023, SA vs BAN: দক্ষিণ আফ্রিকা বনাম বাংলাদেশ ম্যাচে ‘ধূলিঝড়ের’ আশঙ্কা, কেমন থাকতে চলেছে আবহাওয়া ? জানুন বিস্তারিত !!
রান পেলেন বাবর, আলো জ্বাললেন নূর-

ফখর জমানকে এক ম্যাচ খেলিয়েই বাদ দিয়েছে পাকিস্তান। ইমাম উল হক’কে আর কতদিন বয়ে নিয়ে যাওয়া হবে? আজকের ম্যাচের পর প্রশ্ন না উঠলেই অবাক হতে হবে। একমাত্র অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে বেঙ্গালুরুর পাটা উইকেটে অর্ধশতক বাদে কোনো সাফল্য চলতি বিশ্বকাপে পান নি তিনি। আজও ২২ বলে ১৭ রান করে ফিরলেন আজমাতুল্লাহ ওমরজাইয়ের বলে নবীন উল হকের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে। ওপেনিং সঙ্গীর ব্যর্থতার দিনে আবদুল্লাহ শফিক অবশ্য ফর্ম ধরে রাখলেন। চলতি বিশ্বকাপে বেশ কয়েকটি বড় ইনিংস আগেই খেলেছেন। আজ ফের অর্ধশতক করেন তিনি। অহেতুক ঝুঁকি নিতে দেখা যায় নি তাঁকে। চিপকের বাইশ গজে ঘূর্ণি যে লুকিয়ে আছে তা অনুধাবন করে রশিদ, মুজিব, নবিদের বিপক্ষে ধীরে চলো নীতি নিতে দেখা গেলো তাঁকে। ৭৫ বলে কার্যকরী ৫৮ রানের ইনিংস খেলেন তিনি।
অবশেষে রানের মুখ দেখলেন বাবর আজম’ও। চলতি বিশ্বকাপে গত চার ম্যাচে মাত্র ৮৩ রান করেছিলেন তিনি। ভারতের বিপক্ষে একটি ৫০ রানের ইনিংস ছাড়া উল্লেখযোগ্য রান ছিলো না ব্যাটে। আজ চেন্নাইয়ের কঠিন পিচে ইনিংসের ভার দীর্ঘ সময় নিজের কাঁধে নিতে দেখা গেলো বাবরকে। অর্ধশতক পেরোনোর পরেও বেশ সাবলীল লাগছিলো তাঁকে। ভারতের মাটিতে পাক অধিনায়কের শতরান যখন নিশ্চিত মনে হচ্ছে, তখনই ৭৪ রানের মাথায় ফিরতে হয় তাঁকে। রিজওয়ান (৮), সাউদ শাকিল (২৫) বড় রান পান নি। লোয়ার মিডল অর্ডারে পাক ব্যাটিং-এর মানরক্ষা করেন শাদাব খান এবং ইফতিকার আহমেদ। আজ মহম্মদ নাওয়াজের জায়গায় ফিরেছলেন শাদাব। করেন ৪০। ঝোড়ো ২৭ বলে ৪০ করেন ইফতিকার’ও। বিশ্বকাপ অভিষেকে নজর কাড়লেন আফগান স্পিনার নূর আহমেদ। ৪৯ রানের বিনিময়ে ৩ উইকেট নেন তিনি। ২ উইকেট নবীন উল হকের।
ব্যাটিং বিক্রমে বাজিমাত আফগানদের-

সময়টা ২০১৯। বিশ্বকাপের আসরে লীডসের মাঠে পাকিস্তানের বিপক্ষে একটা সময় জয়ের খুব কাছাকাছি ছিলো আফগানিস্তান। ইতিহাসের সন্ধিক্ষণে থাকা আফগান জনতা আনন্দে মেতে ওঠার প্রস্তুতি সেরে ফেলেছিলেন। কিন্তু অধিনায়ক গুলবদন নাইবের একটা ওভারের কিছু ভুলচুকেই জয় হাতছাড়া হয় সেইবার। দুই বল বাকি থাকতে রান তাড়া করে ফেলে পাক দল। চার বছর পর সেই আক্ষেপ মিটিয়ে নিলেন রশিদ খান, মহম্মদ নবি’রা। গত বার রান রুখতে পারেন নি। এবার রান তাড়া করে জয় ছিনিয়ে নিলেন তাঁরা। ২৮৩ রান তাড়া করতে নেমে শাহীন-হারিস-হাসানদের বোলিং আক্রমণকে শুরুতেই ব্যাকফুটে পাঠানোর কাজটা করতে দেখা গিয়েছিলো রহমানুল্লাহ গুরবাজ এবং ইব্রাহিম জাদ্রানকে। গুরবাজ চলতি বিশ্বকাপে বেশ ধারাবাহিক। সাময়িক ব্যর্থতা ঝেড়ে ফেলে আজ ছন্দে জাদ্রান’ও।
১৩০ রানের ওপেনিং জুটি আজ গড়ে আফগানিস্তান। ৫৩ বলে ৬৫ রান করে যখন ফিরলেন রহমানুল্লাহ গুরবাজ, তখনও জয় থেকে ১৫৩ রান দূরে আফগানিস্তান। পাকিস্তানকে ম্যাচে ফেরার বিন্দুমাত্র সুযোগ দিলেন রহমত শাহ এবং ইব্রাহিম জাদ্রান। নতুন জুটি গড়ে সাফল্যের লক্ষ্যে এগোলেন দুজনে। একসময় মনে হচ্ছিলো প্রথম আফগান ব্যাটার হিসেবে বিশ্বকাপ শতরানের মাইলস্টোন ছুঁয়ে ফেলবেন ইব্রাহিম। কিন্তু ৮৭ রানে থামেন তিনি। হাসমাতুল্লাহ শাহিদীর স্ট্রাইক রেট নিয়ে বিস্তর কথা হচ্ছিলো, আজ দ্রুত রান তোলায় মন দেন তিনিও। শেষমেশ এক ওভার বাকি থাকতেই অসম্ভবকে সম্ভব করে তোলে রহমত শাহ-হাসমাতুল্লাহ শাহিদী জুটি। গত বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আফগানিস্তানকে ডুবিয়েছিলেন অধিনায়ক গুলবদন নাইব। এবার শাহীন আফ্রিদিকে স্কোয়্যার লেগ বাউন্ডারিতে ঠেলে ইতিহাস লিখলেন যিনি, তিনি ২০২৩ বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের অধিনায়ক- হাসমাতুল্লাহ শাহিদী। তিনি অপরাজিত রইলেন ৪৮ রান করে। রহমত শাহ করেন ৭৭ রান।