Virat Kohli

টিম ইন্ডিয়া আসন্ন টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০২৪-এর (T20 World Cup 2024) জন্য প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। অভিজ্ঞ আধিনায়ক রোহিত শর্মা দলের নেতৃত্বে এই মেগা টুর্নামেন্টে নামতে চলেছে ভারতীয় ব্রিগেড। গত মাসেই রোহিতের অধিনায়ক থাকার ঘোষণা করেছিল বিসিসিআই। এই টুর্নামেন্টের জন্য এখনও স্কোয়াড ঘোষণা করা হয়নি। তারই মধ্যে বিরাট কোহলিকে (Virat Kohli) নিয়ে খবর এসেছে যে তিনি আসন্ন বিশ্বকাপে দলে জায়গা পাবেন না। বিরাটের আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০২৪ খেলা নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠছে। অনেকে মনে করেন কোহলির টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলা উচিত, আবার অনেকে মনে করেন তার জায়গায় তরুণদের সুযোগ দেওয়া উচিত।

বোর্ডের তরফ থেকে অবশ্য পরিস্কার করে দেওয়া হয়েছে, টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে জায়গা পেতে হলে আসন্ন আইপিএলে (IPL 2024) ভালো পারফরমেন্স করে দেখাতেই হবে। বিরাটও এই নিয়মের বাইরে নন। তবে সত্যিই কি বিরাটের কেরিয়ারের এই প্রান্তে এসে নতুন করে কিছু কি প্রমাণ করার আছে বিরাটের? অনেকেই যুক্তি দিতে পারেন, সূর্যকুমার যাদবের মতো ৩৬০ ডিগ্রির খেলোয়াড় নন তিনি। আবার অনেকেই বলতে পারেন হার্দিক পান্ডিয়ার মতো বড় শট খেলতে অক্ষম বিরাট। তা সত্ত্বেও এটা এখনও বলা যাবে কিং কোহলি এখনও ভারতীয় দলের সেরা ব্যাটসম্যান এবং এই টি টোয়েন্টি ফর্ম্যাটের সেরা ম্যাচ উইনার।

বিরাট হলেন আসল ‘চেজ মাস্টার’

Virat Kohli
Virat Kohli | Image: Getty Images

বিরাট কোহলিকে (Virat Kohli) চেজ মাস্টারের তকমা দেওয়ার পিছনে অনেক কারণ রয়েছে। কোন লক্ষ্যের পিছনে তিনি যখন ছুটতে শুরু করেন তখন তাকে থামানো বেশ কঠিন কাজ হয় বিপক্ষ বোলারদের জন্য। সেই ইঙ্গিত দিয়েই রান তাড়া করার সময় তার গড় হল ৭১.৮৫। সেই রান করার সময় তার স্ট্রাইক রেট থাকে ১৩৭। এই রান তাড়া করার নিরিখে সেরা ১০টি দেশের মধ্যে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হলেন সূর্যকুমার যাদব (৫০.১২)। কিন্তু স্ট্রাইকিং রেটে বিরাটের থেকে কিছুটা হলেও এগিয়ে রয়েছেন। রান তাড়া করার সময় কোহলি যখন ব্যাটিং করেছেন তখন ৪৬টি ম্যাচের মধ্যে ভারত ৪০টি ম্যাচ জিতেছে। সেই ম্যাচগুলিতে তার গড় ৮৬.৮৪। এই সময় তার স্ট্রাইক রেট ১৩৬ থেকে বেড়ে ১৩৮-এর কাছাকাছি চলে যায়। এর মধ্যে তিনি ১৮বার অপরাজিত থেকেছেন। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে মেলবোর্নে পাকিস্তানের বিপক্ষে অপরাজিত ৮২ রানের ইনিংস ক্রিকেট ফ্যানদের মনের মধ্যে রয়ে গিয়েছে। তাই বিরাটের মতো ক্রিকেটারকে অবশ্যই দরকার ভারতের।

ইনিংস ধরে রাখতে সিদ্ধহস্ত

Virat Kohli,
Virat Kohli | Image: Getty Images

বিরাট কোহলি টি-টোয়েন্টি ম্যাচের জন্য স্বাভাবিকভাবে ফিট কিনা তা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। অন্যান্য আরও বিস্ফোরক খেলোয়াড় এই ফর্ম্যাটে মারকাটারি ব্যাটিং করেন যা হয়তো বিরাটের ব্যাটিংয়ে সব সময় দেখা যায় না। যাই হোক, কোন সন্দেহ নেই যে রান করার ক্ষেত্রে কোহলিই এখনও ভারতের তারকা সম্ভবত বিশ্বের সেরা। ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম ফর্ম্যাটে ৫০-এর বেশি গড় সহ কোহলি একজন দুর্দান্ত ‘অ্যাঙ্কর’-এর কাজ করতে পারেন। পুরো কুড়ি ওভার ব্যাট করার ক্ষমতা তার মধ্যে রয়েছে। উইকেটের একটা প্রান্ত নিরাপদ রাখতে এবং অন্য প্রান্তের ব্যাটসম্যানকে পুরোপরি আক্রমনাত্মক মেজাজে খেলার সুযোগ করে দিতে সক্ষম তিনি। আর তার পাশাপাশি এমন একটি বিশ্বকাপের জন্য যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিছু কঠিন উইকেট এবং কিছু অজানা পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে ভারতীয় দল, সেখানে বিরাটের মতো বিশ্বের সেরা অ্যাঙ্করের সাথে লড়াই করা একটি কঠিন কাজ হবে বিপক্ষ বোলারদের জন্য।

আরেকটি বিষয় যা নিয়ে জোর আলোচনা হয় তা হল বাউন্ডারি মারতে অক্ষম বিরাট। তবে পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে এমনটা কিন্ত সত্যি নয়। তিনি প্রতি ৬.১ বলে একটি চার বা ছয় মারেন এই ফর্ম্যাটে। একই বিষয়ে রোহিতের অনুরূপ সংখ্যা হল ৬.৩। একমাত্র ৩.৯ পরিসংখ্যান নিয়ে বিরাটের থেকে বাউন্ডারি মারার ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে সূর্যকুমার যাদব। বিগত কয়েকটি বিশ্বকাপের আসরে ভারতের খালি হাতে ফেরার মূল কারণ মোটেও শুধুমাত্র বিরাট কোহলি নন। ভারতের টপ এবং মিডল অর্ডারের খারাপ ফর্মের কারণে গোটা দলকে ফ্লপ হতে হয়েছে।

দলের প্রয়োজনে বদল ব্যাটিং স্টাইলে

Virat Kohli,
Virat Kohli | Image: Getty Images

টি টোয়েন্টির ১১৭টি ইনিংসের মধ্যে কোহলি ৭৮ বার ৩ নম্বরে ব্যাট করেছেন। তিনি যদি টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলেন, তাতে পরিবর্তনের কোন সম্ভাবনা নেই। তবে তিনি টি টোয়েন্টিতেও ইনিংস ওপেন করতে পারেন যেমনটি তিনি রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের হয়ে আইপিএলে করেছেন। কোহলি চাইলে দলে ফিট হওয়ার তৃতীয় বিকল্প ফিনিশার হিসেবেও কাজ করতে পারে। ডেথ ওভারে ফাস্ট বোলারদের মোকাবিলা করার তার ক্ষমতা আশ্চর্যজনক। এর প্রমাণ ১৬-২০ ওভারে তার ২০০+ স্ট্রাইক রেট। ভারত যদি মাঝের ওভারে আরও আক্রমণাত্মক খেলোয়াড় নেওয়ার চিন্তাভাব কোহলিকে এই ভূমিকা পালনের জন্য বিশেষভাবে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। তাই শুধুমাত্র আইপিএলের পারফরমেন্সের ওপর ভর করে তাকে বিশ্বকাপের দলে জায়গা করে দেওয়া হবে, এই ভাবনাটাই সম্পূর্ণ ভুল। খোদ বিরাটই এই সম্প্রতি বলেছেন, “অনেক মানুষ মনে করেন আমার টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট খারাপ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমি মোটেও তা অনুভব করি না। আমি মনে করি আমি আবার আমার সেরা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলছি। আমি গ্যাপ খুঁজে শট মারি যা বাউন্ডারি পেতে সাহায্য করে এবং পরিস্থিতি আমাকে অনুমতি দিলে শেষ পর্যন্ত বড় শটগুলিও খেলতে পারি।” এর থেকে এটাই পরিস্কার, দেশের জার্সি গায়ে বিশ্বকাপ খেলতে কতটা মরিয়া তিনি।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *