মার্চে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে শেষ একদিনের ক্রিকেটে ব্যাট হাতে নেমেছিলেন বিরাট কোহলি (Virat Kohli)। এরপর টেস্ট বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল্ খেলেছেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধেও খেলেছেন ক্রিকেটের দীর্ঘতম ফর্ম্যাটে। কিন্তু মাঠে নামা হয় নি সাদা বলের খেলায়। উইন্ডিজের বিপক্ষে একদিনের সিরিজে ভারতীয় স্কোয়াডে থাকলেও একটি ম্যাচেও ব্যাটিং করার সুযোগ পান নি তিনি। প্রথম ম্যাচে তাঁকে ব্যাটিং অর্ডারের নীচের দিকে ঠেলে দেন কোচ দ্রাবিড়। মার দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ম্যাচে তরুণ ক্রিকেটারদের সুযোগ দিয়ে দেখতে চেয়েছিলো টিম ম্যানেজমেন্ট। ফলে রিজার্ভ বেঞ্চেই সময় কেটেছিলো কোহলির (Virat Kohli)। ব্যাটার নয়, বরং বেশ কয়েকবার ‘ওয়াটার বয়’-এর ভূমিকায় দেখা গিয়েছিলো তাঁকে।
সামনেই রয়েছে এশিয়া কাপ (Asia Cup) এবং একদিনের বিশ্বকাপের (ICC World Cup) মত দুই বড় প্রতিযোগিতা। তার আগে কোহলির একদিনের খেলায় খানিক ব্যাটিং করা অত্যন্ত জরুরী ছিলো বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। নিজের দেড় দশকের কেরিয়ারে প্রথমবার বিরাট কোহলি (Virat Kohli) ওডিআই ফর্ম্যাটে কোনো সিরিজে দলের সদস্য হয়েও একটি বল খেলতে পারলেন না। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ শুরু হওয়ার আগে তাঁর রান ছিলো ১২৮৯৮। অনেকেই চেয়েছিলেন ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জেই ১৩০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করুন কোহলি, কিন্তু তা আর হয় নি। প্রিয় তারকাকে নতুন রেকর্ড গড়তে না দেখে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে অনুরাগীদের মধ্যে। অনেকেই নিশানা করেছেন কোচ ও টিম ম্যানেজমেন্টকে। তবে তাঁদের আশ্বস্ত করলেন আরেক ভারতীয় প্রাক্তনী রবিন উথাপ্পা (Robin Uthappa)। কোহলির ক্রিকেট নিয়ে মুখ খুললেন তিনি।
Read More: এশিয়া কাপের আগে এই খেলোয়াড়কে ব্যান করলো বোর্ড, করতে পারবে না বিদেশ যাত্রা !!
রেকর্ড নয়, জয়ই লক্ষ্য বিরাটের, বলছেন উথাপ্পা-
২০০৮ সালে অনুর্দ্ধ-১৯ বিশ্বকাপে অধিনায়ক হিসেবে ভারতীয় দলকে ট্রফি দিয়েছিলেন বিরাট কোহলি (Virat Kohli)। তখন থেকেই ক্রিকেটদুনিয়ার ফোকাসে রয়েছেন তিনি। ২০০৮-এই সিনিয়র দলের হয়ে অভিষেক হয় তাঁর। এরপর ক্রিকেটের তিন ফর্ম্যাটেই একের পর এক রেকর্ড গড়েছেন তিনি। ‘বিস্ময় প্রতিভা’ থেকে হয়ে উঠেছেন কিংবদন্তি। অনুরাগীরা ভালোবেসে নাম দিয়েছেন, ‘কিং কোহলি।’ বর্তমানে তাঁর আন্তর্জাতিক শতরানের সংখ্যা ৭৬। সর্বকালের সেরা শচীন তেন্ডুলকরের (Sachin Tendulkar) থেকে শতরানের নিরিখে ২৪ পা পিছনে রয়েছেন তিনি। একদিনের ক্রিকেটে অবশ্য দূরত্বটা খুবই নগণ্য। শচীনের ৪৯ শতরানের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছেন কোহলি। তাঁর সংগ্রহে রয়েছে ৪৬ শতক। নিজের ‘আইডল’কে ছাপিয়ে যাওয়ার খুব কাছাকাছি থাকলেও বিরাট আদৌ তা নিয়ে ভাবিত নয় বলেই মন্তব্য করলেন রবিন উথাপ্পা (Robin Uthappa)। বরং তাঁর কাছে আগে দেশ এবং দল।
সম্প্রতি টাইমস অফ ইন্ডিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে উথাপ্পা (Robin Uthappa) বলেছেন, “এখন আর রেকর্ড ভাঙা নিয়ে বিরাট বিশেষ চিন্তিত নয়। আমরা, ওর অনুরাগীরাই কেবল এই নিয়ে চিন্তিত। শতরান হোক বা না হোক, ও বরং ভারতের হয়ে ম্যাচ জেতাই পছন্দ করবে।” এগিয়ে আসছে এশিয়া কাপ (Asia Cup) এবং একদিনের বিশ্বকাপ। দুই প্রতিযোগিতায় ভারতের ‘তুরুপের তাস’ বিরাট হতে পারেন বলে মনে করেন উথাপ্পা (Robin Uthappa)। বলেন, “এশিয়া কাপ, বিশ্বকাপ বা কবে ও মাইলস্টোন স্পর্শ করলো, তাতে কিছু আসে যায় না ওর কেরিয়ারে, কারণ ওর একমাত্র লক্ষ্য ভারতের হয়ে ম্যাচ জেতা। ব্যক্তিগত শতরান নয়।”
বিরাট কোহলির কেরিয়ার পরিসংখ্যান-
২০০৮ সালে সিনিয়র ভারতীয় দলের হয়ে প্রথম মাঠে নেমেছিলেন বিরাট কোহলি (Virat Kohli)। এরপর প্রায় দেড় দশক কেটে গেলেও বাইশ গজে তাঁর বিক্রম কমে নি বিন্দুমাত্র। মাঝে ২০১৯ থেকে ২০২২-এর মাঝামাঝি সময় অবধি ব্যাট হাতে বেশ কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু তারপর প্রত্যাবর্তন ঘটিয়েছেন চ্যাম্পিয়নের মতই। এখনও অবধি তিনি দেশের হয়ে ১১১টি টেস্ট ম্যাচে ৮৬৭৬ রান করেছেন। শতরান ২৯টি এবং অর্ধশতকের সংখ্যাও ২৯। ব্যাটিং গড় ৪৯.৩। একদিনের ক্রিকেটে বিশ্বের সর্বকালের সেরাদের তালিকায় নিঃসন্দেহে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। ২৭৫ ম্যাচ খেলে তাঁর সংগ্রহ ১২৮৯৮ রান। শতরানের সংখ্যা ৪৬টি এবং অর্ধশতক ৬৫টি। ব্যাটিং গড় ৫৭.৩২।
কুড়ি-বিশের ক্রিকেটেও বিরাট (Virat Kohli) অপ্রতিরোধ্য। তাঁর চেয়ে বেশী রান আন্তর্জাতিক টি-২০ ক্রিকেটে করেন নি কেউই। বর্তমানে ১১৫ ম্যাচে তাঁর রান সংখ্যা ৪০০৮। ব্যাটিং গড় ৫২.৭৪। ক্রিকেটের ক্ষুদ্রতম ফর্ম্যাটে ৩৭টি অর্ধ-শতরান করেছেন তিনি। ২০২২-এর এশিয়া কাপে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে এসেছে তাঁর একমাত্র আন্তর্জাতিক টি-২০ শতক। আইপিএলের মঞ্চেও সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক বিরাট কোহলি। ২৩৭ ম্যাচে তাঁর রান সংখ্যা ৭২৬৩। করেছেন ৭টি শতরান এবং ৫০টি অর্ধশতক। এক আইপিএল মরসুমে সর্বোচ্চ ৯৭৬ রানের রেকর্ডটির মালিকও রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর (RCB) বিরাটই।