টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর কেটে গেছে দেড় যুগ। হাটি হাটি পা পা করতে থাকা দলটি এখন ক্রিকেট মাঠে দৌড়াচ্ছে ক্লান্তিহীনভাবে। বলা হচ্ছিল টাইগার ক্রিকেটের কথা। সাদা পোশাকে অভিষেক হবার পর থেকে হারতে থাকা দলটির একসময় স্বপ্ন ছিল সম্মানের এই লড়াইয়ে কেবল ড্র করা। তবে ঘড়ির কাঁটা ঘুরার সাথে সাথে প্রতিভাবান অনেক ক্রিকেটার তৈরি করে বাংলাদেশ দল এখন পরিণত।
পরিণত এই দলের বিপক্ষে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে লড়ছে সফরকারী জিম্বাবুয়ে। সিলেটের নয়নাভিরাম স্টেডিয়ামের অভিষেক টেস্টে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশ হেরে গেলেও ঢাকা টেস্টে ঘুরে দাঁড়িয়েছে টাইগাররা। ঢাকা টেস্টে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই বড় ধাক্কার সম্মুখীন হওয়া টাইগাররা ২৬ রানেই হারিয়ে ফেলে তিন উইকেট। দলকে বিপর্যয় থেকে টেনে তুলে আনেন টেস্ট স্পেশালিস্ট মুমিনুল হক এবং মিস্টার ডিপেন্ডেবল মুশফিকুর রহিম। মুমিনুল ব্যক্তিগত ১৬১ রানে আউট হলেও মুশফিক তুলে নেন টেস্ট ক্যারিয়ারে তাঁর ব্যক্তিগত দ্বিতীয় ডাবল সেঞ্চুরি।
এবার দেখে নেওয়া যাক ব্যাট হাতে বাংলাদেশের পক্ষে টেস্টে এক ইনিংসে ব্যক্তিগত সর্বাধিক রানের ইনিংস খেলা তিন ব্যাটসম্যানকে।
৩. তামিম ইকবাল
২০১৩ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে রেকর্ড গড়েন মুশফিক। কিন্তু এর প্রায় দুই বছর পর সেই রেকর্ডে হানা দেন সব ফরম্যাটেই বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তামিম ইকবাল। পাকিস্তানের বিপক্ষে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথম টেস্টে খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেন তৎকালীন টেস্ট অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। তবে প্রথম ইনিংসে মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানদের ছোট ছোট ইনিংসে ভর করে বাংলাদেশ সব কয়টি উইকেট হারায় ৩৩২ রানে। জবাবে পাকিস্তান প্রথম ইনিংসে ৬২৮ রান করে বড় লিড পেলে বাংলাদেশ দলও দ্বিতীয় ইনিংসে দেয় মোক্ষম জবাব। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে তামিম এবং ইমরুল কায়েস দেন ধৈর্যের পরীক্ষা। দুজন মিলে ওপেনিং জুটিতে যোগ করেন ৩১২ রান। ইমরুল কায়েস ব্যক্তিগত ১৫০ রানে আউট হলেও তামিম তাঁর ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরেন ১৭টি চার ও ৭টি ছক্কার সাহায্যে ২০৬ রান করে। যা এই তালিকার তিন নম্বর স্থানে জায়গা করে দিয়েছে তাঁকে।
২. সাকিব আল হাসান
২০১৫ সালে বাংলাদেশের নিউজিল্যান্ড সফরে রাখা হয় দুইটি টেস্ট ম্যাচ। দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথম টেস্টে কিউই অধিনায়ক ক্যান উইলিয়ামসন টস জিতে বাংলাদেশ দলকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানালে সেই আমন্ত্রণে সারা দিয়ে ইনিংস উদ্বোধন করতে ব্যাট-প্যাড নিয়ে মাঠে প্রবেশ করেন দুই ব্যাটসম্যান ইমরুল কায়েস এবং তামিম ইকবাল। তবে শুরুতেই দেখা দেয় বিপর্যয় দলীয় মাত্র ১৬ রানে টিম সাউদির বলে ক্যাচ আউট হয়ে ব্যক্তিগত ১ রানে বিদায় নেন কায়েস। অন্যদিকে টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানরা ছোট ছোট জুটি গড়ে স্কোর এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করলেও দলীয় ১৬০ রানে চার উইকেটের পতন ঘটলে মুশফিককে নিয়ে বড় জুটি গড়েন সাকিব আল হাসান। মাটি কামড়ে উইকেটে পড়ে থেকে মুশফিক ফিরে যান ব্যক্তিগত ১৫৯ রানে। তবে সাকিব তুলে নেন তাঁর ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট ডাবল সেঞ্চুরি। ৪১৮ বল মোকাবেলা করে ৩১টি চারের সাহায্যে ২১৭ রান করে নেইল ওয়েগনারের বলে বোল্ড হন সাকিব।
১. মুশফিকুর রহিম
বাংলাদেশের বিপক্ষে পুর্নাঙ্গ সিরিজ খেলতে সফরকারীর ভূমিকায় রয়েছে জিম্বাবুয়ে। সিলেট টেস্টে ১৫১ রানে হেরে গিয়ে কিছুটা ব্যাকফুটে চলে যায় বাংলাদেশ। দ্বিতীয় টেস্টে মিরপুরের উইকেটে রান ফোয়ারা ছোটায় টাইগার ব্যাটসম্যানরা। টস জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নামলে জিম্বাবুয়ের বোলিং তোপে পড়ে টাইগার ব্যাটসম্যানরা। মাত্র ২৬ রানে ৩ উইকেট পড়ে গেলে বড় বিপর্যয়ের শঙ্কা দেখা দেয় টাইগার শিবিরে। তবে অভিজ্ঞতার শতভাগ ঢেলে দিয়ে ব্যাট চালিয়ে যান দুই লিটল মাস্টার মুমিনুল হক ও মুশফিকুর রহিম। দুজন মিলে গড়েন ২৬৬ রানের জুটি। চাতারার বলে বাঁহাতি মুমিনুল ব্যক্তিগত ১৬১ রানে ক্যাচ আউট হলে তাইজুল, মাহমুদউল্লাহ, আরিফুল হককে নিয়ে জুটি গড়েন মুশফিক। ৪১১ বল মোকাবেলা করে ১৮টি চার এবং ১টি ওভার বাউন্ডারির মাধ্যমে অপরাজিত থাকেন ২১৯ রানে। আর ২১৯ রানের এই ইংনিস খেলে তালিকার প্রথম স্থানে জায়গা করে নিয়েছেন মুশফিক।