TOP 3: ভারতের ক্রিকেটে শচীনোত্তর যুগের পোস্টার বয় খুঁজতে হলে প্রথম যে নামটা মাথায় আসবে তা অবশ্যই বিরাট কোহলি (Virat Kohli)। ২০০৮ সালে অধিনায়ক হিসেবে অনুর্দ্ধ-১৯ বিশ্বকাপ জিতিয়েছিলেন বিরাট। তখন থেকেই ক্রিকেটমহলের নজরে রয়েছেন তিনি। প্রতিভাবান এক যুবা হিসেবে শুরু করার পর আস্তে আস্তে ডালপালা মেলেছে তাঁর ক্রিকেট কেরিয়ার। আজ ভারতীয় ক্রিকেটের কিংবদন্তীর পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছেন তিনি। ভারতীয় দলের চরম দুর্দিনেও ক্রিজে বিরাট (Virat Kohli) থাকা মানে আশা বেঁচে থাকে দেশবাসীর মনে। একার কাঁধে কত যে ম্যাচে ‘টিম ইন্ডিয়া’কে জিতিয়েছেন তার হিসেব কেবল দিতে পারবে পরিসংখ্যানবিদের হিসেবের খাতা। নিজের দীর্ঘ ক্রিকেট জীবনে করেছেন হাজার হাজার রান, বহু রেকর্ড গড়েছেন, নিজের রেকর্ড ভেঙেছেন নিজেই। তিন ফর্ম্যাটেই যে ধারাবাহিকতা নিয়ে ব্যাটিং করেছেন কোহলি, তা তাঁকে বসিয়েছে ক্রিকেটের নতুন ঈশ্বরের আসনে।
Read More: TOP 3: তিনটি এমন ইনিংস, যখন IPL-এ বিরাট কোহলি হয়ে উঠেছিলেন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর ‘মসীহা’ !!
রেকর্ডের পাহাড় গড়েছেন বিরাট কোহলি-

কেরিয়ারে ব্যাট হাতে একের পর এক রেকর্ড গড়েছেন বিরাট কোহলি (Virat Kohli)। এখনও সমানতালে গড়ে চলেছেন নতুন নতুন নজির। একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকদের তালিকায় বর্তমানে বিরাট রয়েছেন চতুর্থ স্থানে তবে যে গতিতে এগোচ্ছেন তিনি, তাতে সামনে থাকা রিকি পন্টিং বা কুমার সাঙ্গাকারাকে যে দ্রুতই ছাড়িয়ে যাবেন তিনি তা নিয়ে সন্দেহ নেই। ১৮ হাজারের বেশী ওডিআই রানের মালিক শচীন তেন্ডুলকরের (Sachin Tendulkar) আশেপাশে ‘কিং কোহলি’ আদৌ পৌঁছতে পারবেন কিনা তার জবাব অবশ্য দেবে সময়। একই সাথে টি-২০তে সবচেয়ে বেশী রানের মালিক বিরাট। একমাত্র ব্যাটার হিসেবে পেরিয়েছেন ৪০০০ রানের গণ্ডী।
‘কিং কোহলি’র রেকর্ডের বহর এখানেই শেষ নয়। বরং তিনি ক্রিকেটের তিন ফর্ম্যাট মিলিয়ে সবচেয়ে বেশীবার ‘ম্যান অফ দ্য সিরিজের’ পুরষ্কার পেয়েছেন। ভারতীয় অধিনায়ক হিসেবে সবচেয়ে বেশী টেস্ট দ্বিশতকের মালিক’ও বিরাট (Virat Kohli)। শতরানের নিরিখে একদিনের ক্রিকেটে তিনি কেবল এক ধাপ পিছনে শচীন তেন্ডুলকরের থেকে। ‘মাস্টার ব্লাস্টারের’ ৪৯ শতকের রেকর্ড তাঁর থেকে অনেক কম ম্যাচ খেলেই ভেঙে দিতে পারেন বিরাট কোহলি। চতুর্থ ভারতীয় ব্যাটার হিসেবে ক্রিকেটের তিন ফর্ম্যাটেই শতরান করার নজিরও রয়েছে তাঁর। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের পাশাপাশি ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটেও নানাবিধ রেকর্ড রয়েছে তাঁর। আইপিএলের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রানের মালিক কোহলি (Virat Kohli), সাথে সাথে সবচেয়ে বেশী শতরানও তাঁরই।
জমজমাট প্রত্যাবর্তনে জাত চিনিয়েছেন বিরাট-

২০১৯ সালের থেকে শেষ থেকে ২০২২-এর মাঝামাঝি সময়টা খুবই কঠিন ছিলো বিরাট কোহলির (Virat Kohli) জন্য। ব্যাট হাতে আচমকাই রানখরায় ভুগছিলেন তিনি। দেশে হোক বা বিদেশে- সাফল্য আসছিলো না কিছুতেই। মানসিক ভাবেও বেশ ভেঙে পড়েছিলেন তিনি। অনেক বিশেষজ্ঞই বিরাট (Virat Kohli) যুগের অবসান ঘোষণা করে দিয়েছিলেন। পুরনো ছন্দে আর কখনও ফিরতে পারবেন না ভারতের ব্যাটিং তারকা-নিদান দিয়ে দিয়েছিলেন তাঁরা। সকলকে ভুল প্রমাণ করে ২০২২-এর মাঝামাঝি সময় ফের বাইশ গজে বিরাট (Virat Kohli) বিক্রম দেখা যায়। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ‘পিঙ্ক বল টেস্টে’ শতরানের পর আড়াই বছরের অপেক্ষা করতে হয়েছিলো কোহলিকে। অবশেষে ২০২২-এর এশিয়া কাপে আসে শতরান। আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে তাঁর ১২২* রানের ইনিংসটি ইঙ্গিত দেয় শৃঙ্খলমোচনের।
এরপর আর থামানো যায় নি বিরাটকে (Virat Kohli)। ২০২২-এর টি-২০ বিশ্বকাপে ৯৯ গড়ে করেন ২৯৬ রান। হন সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামে আসে ৭২তম আন্তর্জাতিক শতরান। ২০২৩-এও আগুনে ফর্ম জারি রেখেছেন কোহলি (Virat Kohli)। টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে শতরান করেছেন। একদিনের ক্রিকেটে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে দুটি, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ১টি এবং বাংলাদেশের বিরুদ্ধে শতরান করেছেন। ৭০তম আন্তর্জাতিক শতরান থেকে ৭১-এ পৌঁছতে তিন বছর লেগেছিলো কোহলির (Virat Kohli)। অফ ফর্ম কাটিয়ে ফিরে একবছরেই তিনি করে ফেলেছেন ৮টি শতরান। শতক না পেলেও বড় ইনিংস খেলেছেন নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার মত কঠিন প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধেও। নিন্দুকদের যাবতীয় প্রশ্নের জবাব দিয়ে বিরাট ফিরেছেন ‘কিং কোহলি’ অবতারে।
চাপের পরিস্থিতিতে বারবার হয়েছেন দলের ত্রাতা-

বড় খেলোয়াড়রা পারফর্ম করার জন্য বড় মঞ্চকে বেছে নেয়। ক্রীড়াদুনিয়ায় বহুল প্রচলিত এই প্রবাদটি সত্যি বিরাট কোহলির (Virat Kohli)ক্ষেত্রেও। দল যখনই চাপের মুখে পড়েছে বারবার ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছেন তিনি। অবিশ্বাস্য সব ইনিংস খেলে হারের মুখ থেকে ছিনিয়ে এনেছেন জয়। দেশে হোক বা বিদেশে কোহলির আগ্রাসনের সামনে প্রতিপক্ষের বোলিং আক্রমণকে খড়কুটোর মত উড়ে যেতে দেখা গিয়েছে বারবার। গত বছরের ২৩ অক্টোবর। মেলবোর্নের মাঠে মুখোমুখি হয়েছিলো ভারত এবং পাকিস্তান। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে একটা সময় ৩১ রানের মধ্যে ৪ উইকেট হারিয়ে বসেছিলো টিম ইন্ডিয়া। সেই পরিস্থিতি থেকে ৫৩ বলে ৮২* রানের একটি অভাবনীয় ইনিংস খেলে ম্যাচ জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন ‘কিং কোহলি।’
পাকিস্তানের বিরুদ্ধেই কখনও ইডেনে ২০১৬ সালের টি-২০ বিশ্বকাপে ম্যাচ জেতানো অর্ধশতক, আবার কখনও মীরপুরে এশিয়া কাপের ম্যাচে অভাবনীয় ৪৯ রানের ইনিংস এসেছে তাঁর ব্যাটে। বছরের পর বছর কেটে গিয়েছে, কিন্তু চাপের মুখে নিজেকে ছাপিয়ে যাওয়ার ‘বিরাট’ প্রবণতা বদলায় নি একটুও। দিনকয়েক আগেই বিশ্বকাপ অভিযানের প্রথম ম্যাচে ২ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছিলো টিম ইন্ডিয়া, তখন স্টার্ক-কামিন্স-হ্যাজেলউডের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন কোহলিই (Virat Kohli)। ১১৬ বলে ৮৫ রানের ইনিংস খেলে দলকে এনে দেন জয়। দেখতে দেখতে বয়স ৩৫ ছুঁলো কোহলির, কিন্তু কেরিয়ারের শেষ দিন অবধি তিনি যে একই রকম ডাকাবুকো, আগ্রাসী থাকবেন তা সেদিন বুঝিয়ে দিয়েছিলেন তিনি।