বৃষ্টির কোপে ভারত বনাম বাংলাদেশ দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচ। মাঠের অন্দরে উত্তেজনার লেশমাত্র না থাকলেও এই ম্যাচ ঘিরে মাঠের বাইরের পরিস্থিতি বেশ উত্তেজক। নেপথ্যে রবি-উল-ইসলাম ওরফে টাইগার রবি (Tiger Robi) নামে জনৈক বাংলাদেশ সমর্থক। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বাংলাদেশ দলের খেলা দেখতে যান তিনি। বাঘের মতই সাজগোজ করেন, মুখে রং মাখেন নিয়মিত। মাথায় থাকে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের স্টাফড টয়। চেন্নাইতে প্রথম টেস্ট চলাকালীনই রবি অভিযোগ করেছিলেন যে তাঁকে স্থানীয় ভারতীয় সমর্থকেরা বাংলাদেশের পতাকা ওড়াতে দেন। ভারত’কে নিয়ে কিছু আপত্তিজনক মন্তব্য’ও করেন তিনি। দ্বিতীয় টেস্টে আরও গুরুতর অভিযোগ আনেন তিনি। কানপুরের দর্শক নাকি মারধর করেছেন তাঁকে, রবি’র (Tiger Robi) কথায় ঝড় ওঠে ক্রিকেটমহলে।
Read More: IPL 2025: রিটেনশন নিয়ম প্রকাশ করলো বোর্ড, KKR, MI ও SRH-এর ‘বাড়াবাড়ি’ বরদাস্ত করলেন না জয় শাহ’রা !!
সাজানো নাটক বাংলাদেশী ভক্তের-
কানপুরে রবি (Tiger Robi) আচমকাই দাবী করে বসেন যে স্থানীয় দর্শকদের হাতে হেনস্থা হতে হয়েছে তাঁকে। তাঁর কোমরে, পাঁজরে আঘাত করেছেন ভারতীয় সমর্থকেরা। হইচই পড়ে গিয়েছিলো গোটা ঘটনাটি সামনে আসায়। গত বছর ওডিআই বিশ্বকাপ চলাকালীন পুণেতে জনৈক বাংলাদেশী সমর্থককে হেনস্থা করা হয়েছিলো। সেই নিন্দনীয় ঘটনার ভিডিও সামনে আসার পর লজ্জায় মাথায় হেঁট হয়েছিলো ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীদের। রবি’র (Tiger Robi) অভিযোগ’ও প্রথমে সত্যি বলেই ধরে নিয়েছিলেন অনেকে। বিশ্ব দরবারে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় ভারতকেই। মাঠে বিদেশী সমর্থকদের নিরাপত্তা কোথায়? এই মর্মে প্রশাসনকে একপ্রকার তুলোধোনা করা হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। কিন্তু সর্ষের মধ্যেই যে লুকিয়ে রয়েছে ভূত তা প্রকাশ পেতে বেশী সময় লাগে নি।
রবি’কে (Tiger Robi) সঙ্গে সঙ্গেই হাসপাতালে নিয়ে যান মাঠে কর্তব্যরত পুলিশকর্মীরা। চিকিৎসকেরা তাঁর শরীর খতিয়ে দেখে কোনোরকম আঘাতের চিহ্ন পান নি। পরে জানা যায় গরমে ডিহাইড্রেশনে ভুগে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তিনি। সেটাকেই মারধরের ঘটনা বলে চালিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। পুলিশের তরফ থেকে একটি সিসিটিভি ফুটেজ’ও প্রকাশ করা হয়। সেখানে দেখা গিয়েছে একাই হেঁটে আসছেন রবি। আচমকাই পেট চেপে বসে পড়েন রাস্তায়। তাঁর আশেপাশে কেউ ছিলো না তখন। বরং অনেকেই দৌড়ে এসে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন তাঁর দিকে। পরে হাসপাতালে রবি’ও (Tiger Robi) স্বীকার করেন যে কেউ তাঁকে মারধর করেন নি। বর্তমানে ভারতবিরোধী যে আগুন জ্বালানোর চেষ্টা চলছে বাংলাদেশী জনতার মধ্যে, তাতে খানিক ঘি ঢেলে ভাইরাল হতেই সম্ভবত মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছিলেন তিনি।
দেখুন রবি’র স্বীকারোক্তি-
From the tiger’s mouth @RevSportzGlobal pic.twitter.com/DZCS9k07zv
— रोहित जुगलान Rohit Juglan (@rohitjuglan) September 27, 2024
কড়া ব্যবস্থা নিচ্ছে ভারতীয় প্রশাসন-
রবি’র (Tiger Robi) কাণ্ডে চক্ষু চড়কগাছ সকলের। এহেন কাণ্ড যে কোনো ক্রিকেট সমর্থক ঘটাতে পারেন তা বিশ্বাস করতে সমস্যায় পড়ছেন ভারত ও বাংলাদেশ দুই দেশেরই শুভবুদ্ধিসম্পন্ন জনতা। তদন্তে নেমে চমকেছে ভারতীয় প্রশাসন’ও। জানা গিয়েছে ভারতের আসার জন্য বৈধ ভিসা’ই নেই ঐ বাংলাদেশী সুপারফ্যানের। মেডিক্যাল ভিসা নিয়ে ভারতে পা রেখেছিলেন তিনি। চিকিৎসা না করিয়ে প্রথমে চেন্নাই ও পরে কানপুরে খেলা দেখে বেরিয়েছেন তিনি। একইসাথে শারীরিক পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে যে যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত ঐ ব্যক্তি। এই রোগ মারাত্মক রকম ছোঁয়াচে। নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমেই ছড়িয়ে পড়ে এক ব্যক্তি থেকে আরেকজনের মধ্যে। অসুস্থ অবস্থায় তিনি স্টেডিয়ামের মত জনবহুল জায়গায় গেলেন কি উদ্দেশ্যে তা নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন। এছাড়াও গ্যালারিতে একটি সংস্থার বিজ্ঞাপন করার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। যা আইনবিরুদ্ধ।
রবি’র (Tiger Robi) দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। গতকালই কানপুর থেকে দিল্লী নিয়ে যাওয়া হয়েছে তাঁকে। তাঁকে বাংলাদেশ ফেরত পাঠাচ্ছে ভারত সরকার। একইসাথে পাঁচ বছরের জন্য ভারতে প্রবেশের উপরেও জারি হচ্ছে নিষেধাজ্ঞা। দেশে ফিরেও হয়ত স্বস্তি পাবেন না নিজেকে বাংলাদেশ ক্রিকেটের সুপারফ্যান দাবী করা ঐ যুবক। পদ্মাপারের ক্রিকেটমহল থেকেও দাবী উঠেছে বিদেশের মাঠে দেশের নাম ভুলুন্ঠিত করার জন্য রবি’কে শাস্তি দেওয়ার। সব তথ্য খতিয়ে দেখার পর বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডেরও উচিৎ ঐ সমর্থককে মাঠে প্রবেশ করার ক্ষেত্রে দীর্ঘকালীন নির্বাসনে পাঠানো, সওয়াল করেছেন সাংবাদিকদের একটা বড় অংশ। গোটা ঘটনায় দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে ক্রিকেটীয় জটিলতা বাড়ার সম্ভাবনাই দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।