CT 2025: ১৯৯৬ সালে শেষবার আইসিসি আয়োজিত কোনো প্রতিযোগিতা আয়োজিত হয়েছিলো পাকিস্তানে। পরবর্তী সুযোগের জন্য তাদের অপেক্ষা করতে হলো প্রায় তিন দশক। বহু বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে শেষমেশ ২০২৫-এর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে শিকে ছেঁড়ে পাক ক্রিকেট সংস্থার ভাগ্যে। প্রস্তুতিতে কোনো ফাঁক রাখেন নি মহসীন নকভি’রা। ঢেলে সাজানো হয়েছে পরিকাঠামো। শুধুমাত্র চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির জন্য ১২৬০ কোটি টাকা খরচ করে লাহোর, করাচী ও রাওয়ালপিন্ডির মাঠের সংস্কার করেছে পিসিবি। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় চলেছে কাজ। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ঘিরে পাক ক্রিকেটজনতার মধ্যেও তুঙ্গে ছিলো আগ্রহ। দলে দলে মাঠ ভরিয়েছেন দর্শকেরা। ঘরের মাঠে ট্রফি জিতুন বাবর-রিজওয়ানরা, প্রার্থনা করেছলেন তাঁরা। কিন্তু যাবতীয় উৎসাহ, উদ্দীপনায় যেন জল ঢেলেছে ‘হোম টিম’-এর পারফর্ম্যান্সই। প্রথমে নিউজিল্যান্ড ও পরে ভারতের বিরুদ্ধে বড় ব্যবধানে হেরে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিয়েছে পাকিস্তান।
Read More: KL রাহুলের ক্যারিয়ার শেষ করতে উঠে পড়ে লেগেছেন গৌতম গম্ভীর, ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে করছেন ছেলেখেলা !!
ছিটকে গেলো পাকিস্তান-

২০১৭’তে ক্রিকেটদুনিয়াকে খানিক চমকে দিয়েই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতে নিয়েছিলো পাকিস্তান। ওভালে ‘ফেভারিট’ ভারতকে তারা উড়িয়ে দিয়েছিলো ১৮০ রানের বিরাট ব্যবধানে। কিন্তু আট বছর পর নিজেদের দেশের মাঠে খেতাব রক্ষা করতে নেমে মুখ থুবড়ে পড়তে হলো ‘মেন ইন গ্রিন’কে। করাচীতে ১৯ ফেব্রুয়ারি উদ্বোধনী ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি হয়েছিলো তারা (PAK vs NZ)। ৩২১ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে রক্ষণাত্মক পাক শিবির ২৬০-এর বেশী এগোতে পারে নি। ৯০ বলে ৬৪ রানের মন্থর ইনিংস খেলে সমালোচনার মুখে পড়েন বাবর আজম (Babar Azam)। সলমন আলি আঘা ও খুশদিল শাহ চেষ্টা করেছিলেন পাকিস্তানকে লড়াইতে ফেরানোর। কিন্তু ততক্ষণে দেরী হয়ে গিয়েছিলো অনেকটাই। প্রথম ম্যাচে হার খাদের কিনারে ঠেলে দিয়েছিলো আয়োজক দেশকে। ভারতের বিরুদ্ধে ম্যাচটি হয়ে দাঁড়িয়েছিলো ‘ডু অর ডাই।’ কিন্তু সেখানেও হতাশই করে পাকিস্তান।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে (CT 2025) অংশগ্রহণকারী দেশগুলির মধ্যে একমাত্র ভারতই অসম্মত হয়েছে পাকিস্তানে গিয়ে ক্রিকেট খেলতে। তাই তাদের ম্যাচগুলি স্থানান্তরিত করা হয়েছে দুবাইতে। করাচীর পর মধ্যপ্রাচ্যের মাঠেও গত রবিবার ছন্দ খুঁজে পায় নি পাক বাহিনী। প্রথম ব্যাটিং করতে নেমে বুমরাহ-বিহীন ভারতের বিরুদ্ধে ২৪১ তোলে তারা। জবাবে ৪৫ বল বাকি থাকতেই লক্ষ্যে পৌঁছে যায় ‘মেন ইন ব্লু।’ আরও একবার পাকিস্তানের ত্রাস হয়ে উঠতে দেখা যায় বিরাট কোহলিকে (Virat Kohli)। ১১১ বলে ১০০* করেন তিনি। অর্ধশতক করেন শ্রেয়স আইয়ারও (Shreyas Iyer)। পরপর দুই ম্যাচে পরাজয় টুর্নামেন্ট থেকে কার্যত ছিটকেই দিয়েছিলো আয়োজক দেশকে। অঙ্কের হিসেবে বেঁচে ছিলো ক্ষীণ আশা। কিন্তু গতকাল রাওয়ালপিন্ডিতে নিউজিল্যান্ড একপেশে ম্যাচে বাংলাদেশকে (BAN vs NZ) হারাতে নিভলো সেই প্রদীপটুকুও। ট্রফি জয়ের স্বপ্ন চুরমার হলো পাকিস্তানের।
সান্ত্বনার খোঁজে বাবর-রিজওয়ানরা-

২০২৩-এর বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বের বাধা টপকাতে পারে নি পাকিস্তান। ২০২৪-এর টি-২০ বিশ্বকাপেও দেখা গিয়েছিলো একই চিত্র। অবস্থার কোনো রকম উন্নতি হলো না ২০২৫-এর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও (CT 2025)। এহেন অন্ধকার অধ্যায় ওয়াঘার ওপারের ক্রিকেটে আগে কখনও এসেছে কিনা মনে করতে পারছেন না বিশেষজ্ঞরা। চূড়ান্ত সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে বাবর-রিজওয়ানদের (Muhammad Rizwan)। তোপের মুখে পাক ক্রিকেট সংস্থাও। একটি টিভি শো’তে প্রাক্তনী শোয়েব আখতার বলেছেন, “টিম ম্যানেজমেন্টের মত ক্রিকেটাররাও দিশাহারা।” ওয়াসিম আক্রমকে (Wasim Akram) বলতে শোনা গিয়েছে, “এই দল নিয়ে আমি আশা দেখছি না।” এই থমথমে আবহেই আগামী ২৭ তারিখ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির (CT 2025) শেষ ম্যাচে বাংলাদেশের মুখোমুখি হচ্ছে পাকিস্তান শিবির। শেষ চারের টিকিট হাতছাড়া হয়েছে ইতিমধ্যেই। রাওয়ালপিন্ডিতে নিয়মরক্ষার ম্যাচে টাইগারদের হারাতে পারলে হয়ত খানিক মুখরক্ষা হবে তাদের।