শ্রীলঙ্কার পর নিউজিল্যান্ড। আরও একবার প্রতিপক্ষকে বিন্দুমাত্র সুযোগ না দিয়ে ঘরের মাঠে একদিনের সিরিজ জিতে নিলো ভারতীয় দল। গতকাল ইন্দোরের হোলকার স্টেডিয়ামে কিউইদের ৯০ রানে হারায় ‘টিম ইন্ডিয়া।’ টসে জিতে প্রথমে প্রতিপক্ষকে ব্যাটিং করার আমন্ত্রণ জানান নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক টম ল্যাথাম। ভারতীয় ওপেনারদের দাপটে শুরু থেকেই হতদ্যম অবস্থায় ছিলেন কিউই বোলাররা। রোহিত শর্মা (Rohit Sharma) এবং শুভমান গিলের (Shubman Gill) জোড়া শতরান এবং শেষলগ্নে হার্দিক পান্ডিয়ার ঝোড়ো অর্ধশতকের সৌজন্যে প্রথম ইনিংসের শেষে ৩৮৫ রানে পৌঁছায় ভারতীয় দল। রান তাড়া করতে নেমে নিউজিল্যান্ডের হয়ে লড়াই করেন ওপেনার ডেভন কনওয়ে (Devon Conway)। তাঁর ১০০ বলে ১৩৮ রানের ইনিংস সত্ত্বেও ২৯৫ রানেই গুটিয়ে যায় ব্ল্যাক ক্যাপস দলের ইনিংস। শার্দূল-কুলদীপ-চাহালদের নিয়ন্ত্রিত বোলিং-এর জবাব খুঁজে পান নি কিউই ব্যাটাররা। গত বছরের শেষের দিকে জোড়া একদিনের সিরিজ হেরে সমালোচনার মুখে পড়েছিলো ভারতীয় দল। দেশের মাটিতে পরপর দুই শক্তিশালী প্রতিপক্ষকে হোয়াইটওয়াশ করে হৃত সন্মান পুনরুদ্ধার করলেন বিরাট কোহলি (Virat Kohli), রোহিত শর্মা’রা। সাথে সাথে ভারতের আগুনে ফর্ম’কে স্বীকৃতি জানালো বিশ্ব ক্রিকেট নিয়ামক সংস্থা আইসিসি’ও। একদিনের ক্রিকেটে বিশ্ব ক্রমতালিকায় শীর্ষে উঠে এলো ভারতীয় দল।
শীর্ষে থেকেই ভারতে এসেছিলো নিউজিল্যান্ড-

ভারতের বিরুদ্ধে সিরিজ খোয়ানোর পাশাপাশি বিশ্বর্যাঙ্কিং-এ নিজেদের জায়গাও হারালো নিউজিল্যান্ড। এক নম্বর দল হিসেবেই ভারতের মাটিতে পা দিয়েছিলেন ডেভন কনওয়ে, মাইকেল ব্রেসওয়েলরা। উপমহাদেশের আরেক ক্রিকেটীয় শক্তি পাকিস্তানকে তাদের ঘরের মাঠে ২-১ ফলে একদিনের সিরিজে পরাজিত করে ভারতে এসেছিলো নিউজিল্যান্ড। করাচীতে প্রথম একদিনের ম্যাচ্ব বাবর আজমদের (Babar Azam) বিরুদ্ধে হেরেছিলো কিউইরা। প্রথমে ব্যাট করে ২৫৫ রান তোলে নিউজিল্যান্ড। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ফখর জামান, মহম্মদ রিজওয়ান (Mohammad Rizwan) এবং বাবর আজমের অর্ধশতকের সৌজন্যে সহজেই ম্যাচ জিতে নেয় পাকিস্তান। এর পরের দুটি ম্যাচে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় নিউজিল্যান্ড। কনওয়ে (Devon Conway) এবং উইলিয়ামসনের ব্যাটিং দাপটে দ্বিতীয় ম্যাচে জয় আসে ৭৯ রানে। আর তৃতীয় ম্যাচে করাচীর মাঠে ২ উইকেটে পাকিস্তানকে হারান ব্ল্যাক ক্যাপসরা। পয়লা নম্বর দল হিসেবে ভারতীয় উপমহাদেশে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠাই লক্ষ্য ছিলো নিউজিল্যান্ডের। ওয়াঘা সীমান্তের ওপারে কিউইদের রথ দুর্দান্ত গতিতে ছুটলেও ভারতে এসে মুখ থুবড়ে পড়লো তা।
র্যাঙ্কিং-এর মগডালে টিম ইন্ডিয়া-

নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে একটিও ম্যাচ হারা চলবে না, তবেই শীর্ষস্থানে যাওয়া যাবে। সমীকরণ মাথায় রেখেই সিরিজ শুরু করেছিলেন রোহিত শর্মারা। প্রথম ম্যাচে হায়দ্রাবাদের রাজীব গান্ধী আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুভমান গিলের (Shubman Gill) দ্বিশতরানের সুবাদে জিতে নেয় ভারত। মাইকেল ব্রেসওয়েলের (Micheal Bracewell) লড়াই ব্যর্থ করে ১২ রানে জেতে ‘টিম ইন্ডিয়া।’ দ্বিতীয় ম্যাচে রায়পুরে ভারতের বোলিং-এর সামনে কেঁপে যান কিউইরা। তাদের ছুঁড়ে দেওয়া ১০৯ রানের লক্ষ্য পেরোতে মাত্র ২০.১ ওভার নেন ‘মেন ইন ব্লু’ ব্যাটার’রা। টানা দুই ম্যাচ হেরেই নিজেদের এক নম্বর জায়গা খুইয়েছিলো নিউজিল্যান্ড। এক নম্বরে স্থান করে নেয় ইংল্যান্ড। ভারত-নিউজিল্যান্ড এবং ইংল্যান্ডের পয়েন্ট সমান হলেও ম্যাচ সংখ্যার বিচারে এগিয়েছিলেন জস বাটলার’রা (Jos Buttler)। অঙ্কের জটিল সমীকরণ পিছনে ফেলে ইন্দোরে তৃতীয় ম্যাচ জিতে নিয়ে প্রথম স্থানটি নিজেদের করে নিলো ‘টিম ইন্ডিয়া।’ আর নিউজিল্যান্ডের জায়গা হলো চতুর্থ স্থানে। র্যাঙ্কিং নিয়ে দল বিশেষ ভাবিত নয়, ম্যাচ শেষে জানিয়েছেন অধিনায়ক রোহিত (Rohit Sharma)। তবে বিশ্বকাপের আগে এই কৃতিত্ব নিঃসন্দেহে দলের আত্মবিশ্বাস বাড়াবে। একদিনের ক্রিকেটের পাশাপাশি টেস্টেও পয়লা নম্বরে যাওয়ার হাতছানি রয়েছে ভারতের সামনে। বর্তমানে টেস্ট র্যাঙ্কিং-এ শীর্ষে অস্ট্রেলিয়া। অজিদের বিপক্ষে আগামী মাসে টেস্ট সিরিজ খেলবে ভারত। বড় ব্যবধানে বর্ডার-গাওস্কর ট্রফি জিতলে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালের দরজা তো খুলবেই, একইসাথে প্যাট কামিন্স (Pat Cummins),মার্নাস লাবুশেনদের (Marnus Labuschagne) সরিয়ে দীর্ঘতম ফর্ম্যাটের র্যাঙ্কিং-এর চূড়ায় তেরঙ্গা পতাকা ওড়াতে পারবে ‘টিম ইন্ডিয়া।’