ভারতের মাটিতে টেস্ট খেলার লক্ষ্য নিয়ে পা দিয়েছিলো আফগানিস্তান ক্রিকেট দল (Afghanistan)। নিউজিল্যান্ডের মত হেভিওয়েট প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে গ্রেটার নয়ডার শহীদ বিজয় সিং পথিক স্পোর্টস কমপ্লেক্সের মাঠে লাল বলের ফর্ম্যাটে খেলার কথা ছিলো আফগানদের। কিন্তু সেই স্বপ্ন আর বাস্তবায়িত হলো ন। বাধা হয়ে দাঁড়ালো বৃষ্টি ও নয়ডার মাঠের বেহাল পরিকাঠামো। ভিজে আউটফিল্ড শুকিয়ে তোলার জন্য ড্রায়ার, বৈদ্যুতিন পাখার ব্যবস্থা করেছিলো মাঠ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু যথেষ্ট হয় নি তা। তৃতীয় দিনেও মাঠ খেলার যোগ্য করে ওঠা যায় নি। ফলে ম্যাচকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা ছাড়া রাস্তা খোলা ছিলো না উদ্যোক্তাদের সামনে। ওডিআই ও টি-২০ বিশ্বকাপে সাফল্যের পর দীর্ঘতম ফর্ম্যাটেও ভালো কিছু করতে মুখিয়ে ছিলো আফগানিস্তান (Afghanistan), ম্যাচ ভেস্তে যাওয়ায় রীতিমত হতাশ খেলোয়াড়’রা। এই আবহে তাঁদের সমস্যা আরও বেড়েছে তালিবানের নয়া নীতি সামনে আসার পর।
Read More: বাংলাদেশ টেস্ট থেকে বাদ পড়ছেন রোহিত শর্মা, এই খেলোয়াড়ের হাতে তুলে দেওয়া হলো অধিনায়কত্ব !!
ক্রিকেটের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করছে তালিবান-
গত ২০২১ সালে আমেরিকার সেনা আফগানিস্তান (Afghanistan ) ছাড়ার পর দেশের নিয়ন্ত্রণ হাতে তুলে নিয়েছে তালিবান। ইসলামী শাসনব্যবস্থা কায়েম রয়েছে ভারতের প্রতিবেশী দেশে। ইতিমধ্যেই সঙ্গীত, মেয়েদের স্কুলে যাওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে তারা। এবার তাদের নিশানায় ক্রিকেট। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত একাধিক রিপোর্টে দাবী করা হয়েছে যে বাইশ গজের খেলার প্রতি বিরূপ তালিবান শীর্ষ নেতৃত্বের। ধীরে ধীরে তার উপরেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হতে পারে বলে জানা গিয়েছে। তালিবান নেতা হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা (Hibatullah Akhundzada) জানিয়েছেন যে ক্রিকেট জনসমাজে ভুল বার্তা পৌঁছে দিচ্ছে এবং তা ইসলামী শরিয়া শাসনের পরিপন্থী। সেই কারণে ক্রিকেটকে ধীরে ধীরে দেশে নির্বাসিত করা হতে চলেছে।
সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এই তথ্যগুলি কতদূর সত্যি তা নিয়ে অবশ্য সন্দেহ রয়েছে বিশেষজ্ঞমহলে। অনেকেই বিষয়টিকে তালিবানের অভ্যন্তরে দুই গোষ্ঠীর ঠাণ্ডা লড়াই হিসেবে দেখতে চাইছেন। এক দিকে রয়েছে হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদার (Hibatullah Akhundzada) নেতৃত্বাধীন গোষ্ঠী। অপরপক্ষে রয়েছেন সিরাজুদ্দিন হাক্কানি (Sirajuddin Haqqani) ও তাঁর নিয়ন্ত্রণাধীন গোষ্ঠী। সিরাজুদ্দিনের ভাই আনাস, দেশের ক্রিকেটে বড়সড় বিনিয়োগ করেছেন। দুইপক্ষের দড়ি টানাটানিতে কাঠগড়ায় উঠছে ক্রিকেট। শেষমেশ কোন খাতে গড়ায় ঘটনাপ্রবাহ, নজর থাকবে সেদিকে। তবে আফগানিস্তান ক্রিকেট সংস্থা চেষ্টা চালাচ্ছিলো কাবুলে আন্তর্জাতিক মাণের স্টেডিয়ামে গড়ে তোলার। তালিবানের নিষেধাজ্ঞার পর সেই উদ্যোগ যে বিশে বাঁও জলে পড়বে তা নিয়ে সন্দেহ নেই।
প্রবল সমস্যায় আফগানিস্তান ক্রিকেটাররা-
গত কয়েক বছরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজেদের আলাদা পরিচিত তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিলো আফগানিস্তান দল (Afghanistan)। ওডিআই বিশ্বকাপে তারা হারিয়েছিলো পাকিস্তান, ইংল্যান্ডের মত দল’কে। এই বছরই টি-২০ বিশ্বকাপে তারা নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার মত শক্তিশালী দেশকে হারিয়ে পা রেখেছিলো সেমিফাইনালে। ক্রিকেট নির্বাসনের মুখে পড়লে থমকে যাবে উন্নতি। রশিদ খান (Rashid Khan), মুজির উর রহমান, মহম্মদ নবি’র (Mohammad Nabi) মত তারকা দেশ-বিদেশের ফ্র্যাঞ্চাইজি লীগেও নিয়মিত অংশ নেন। তালিবানী সিদ্ধান্তের পর ক্রিকেট থেকে ছিটকে যেতে পারেন তাঁরাও। ফলে বেশ সমস্যার মুখে তাঁরা। যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানে ক্রিকেটই জনগণকে বাঁধে একতার সুতোয়। টি-২০ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে দল পা রাখার পর কাবুলের রাস্তায় জনসমাগম’ই তার প্রমাণ। জনগণের কাছ থেকে সেই সুযোগটুকুও কেড়ে নিলে কি প্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে তা নিয়েও ভাবিত সকলে।