গত জুন মাসে রোহিত শর্মা’র নেতৃত্বাধীন পুরুষ দল টি-২০ ক্রিকেটে বিশ্বসেরার (T20 World Cup) শিরোপা আদায় করে নিয়েছিলো ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে। জমজমাট ফাইনালে তারা হারিয়েছিলো দক্ষিণ আফ্রিকাকে। রোহিত-বিরাটদের সাফল্যকে স্পর্শ করার চ্যালেঞ্জ এবার মেয়েদের সামনে। মধ্যপ্রাচ্যের মাঠে টি-২০ বিশ্বকাপের (T20 World Cup) স্বপ্ন দেখছে ‘উইমেন ইন ব্লু’। দুটি প্রস্তুতি ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও দক্ষিণ আফ্রিকা’র বিরুদ্ধে জয় ছিনিয়ে নিয়েছিলেন হরমনপ্রীত কৌর, রিচা ঘোষ’রা। গতবারের ফাইনালিস্টরা এবার অন্তিম বাধাটুকু পেরোবেন, আশায় ছিলেন ভক্তরাও। কিন্তু টুর্নামেন্ট শুরু হতেই মুখ থুবড়ে পড়লেন তাঁরা। দুবাইতে গতকাল প্রথম ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি হয়েছিলো ভারত। সোফি ডিভাইন, এমেলিয়া কেরদের (Amelia Kerr) বিরুদ্ধে নূন্যতম প্রতিরোধ’ও গড়ে তোলা সম্ভব হলো না টিম ইন্ডিয়ার পক্ষে। গ্রুপ-এ’র ম্যাচে হারতে হলো ৫৮ রানের ব্যবধানে।
Read More: IPL 2025: “হাতছাড়া করা যাবে না কোনোমূল্যেই…” এই তারকাকে নিয়ে বড়সড় ভবিষ্যদ্বাণী আকাশ চোপড়া’র !!
সোফি’র অর্ধশতকে বড় রান নিউজিল্যান্ডের-
টসে জিতে প্রথমে ব্যাটিং-এর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো নিউজিল্যান্ড। প্রথম থেকেই আগ্রাসী ক্রিকেট খেলার নীতি নিয়েছিলেন ব্ল্যাক ক্যাপসরা। দুই ওপেনার সুজি বেটস (Suzie Bates)ও জর্জিয়া প্লিমার (Georgia Plimmer) পাওয়ার প্লে’তে তুলে নেন ৫৫ রান। রেণুকা সিং ঠাকুর (Renuka Singh Thakur) নিয়ন্ত্রিত বোলিং করলেও অপর প্রান্ত থেকে অঢেল রান খরচ করে বসেন পূজা বস্ত্রকার, দীপ্তি শর্মা’রা। শেষমেশ অষ্টম ওভারের চতুর্থ বলে কিউইদের ওপেনিং জুটি ভাঙতে সক্ষম হয় ভারত। ২৪ বলে ২৭ করে অরুন্ধতী রেড্ডি’র শিকার হন সুজি বেটস। নবম ওভারেই আসে দ্বিতীয় সাফল্য। স্পিনার আশা শোভনা’র (Asha Sobhana) বলে উইকেট হারান ছন্দে থাকা জর্জিয়া প্লিমার। মাত্র ২৩ বলে ৩টি চার ও ১টি ছক্কার সাহায্যে ৩৪ রান করে যান তিনি। ৬৭ রানের মাথায় পরপর দুই উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছিলো ভারত।
নিউজিল্যান্ডের হয়ে তিন নম্বরে ব্যাট করতে নামা এমেলিয়া কের’কে নিয়ে গতকাল চললো বিতর্কের ঝড়। ১৪তম ওভারে রান-আউট হন তিনি। কিন্তু আম্পায়াররা জানান উইকেটরক্ষক রিচা ঘোষ স্টাম্প ভাঙার আগেই নাকি ’ডেড’ ঘোষিত হয়েছে বল। ফলে জীবন ফিরে পান এমেলিয়া। এই নিয়ে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়ায় মাঠে। ক্ষোভ প্রকাশ করেন ভারত অধিনায়িকা হরমনপ্রীত, হতাশ দেখায় কোচ অমল মুজুমদারকেও। যদিও ২২ বলে ১৩’র বেশী করতে পারেন নি এমেলিয়া। তাঁকে ফেরান রেণুকা সিং। কিউই ব্যাটিং-এর দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন অভিজ্ঞ সোফি ডিভাইন (Sophie Devine)। ওপেনিং নয়, বরং চার নম্বরে নেমেছিলেন তিনি। ধুন্ধুমার ইনিংস খেলেন তিনি। ৭টি বাউন্ডারির সাহায্যে অপরাজিত থাকেন ৩৬ বলে ৫৭ করে। ব্রুক হ্যালিডে ও ম্যাডি গ্রিণ করেন যথাক্রমে ১৬ ও ৫*। ২০ ওভার শেষে নিউজিল্যান্ডের স্কোর দাঁড়ায় ১৬০/৪।
ব্যাটিং ব্যর্থতায় মুখ পুড়লো টিম ইন্ডিয়ার-
১৬১ রানের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ব্যাট করতে নেমেছিলো ভারত। প্রথম ওভার থেকে আসে ১১ রান। তবে দ্বিতীয় ওভারে ইডেন কারসনের (Eden Carson) হাতে বল তুলে দিয়ে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন কিউই অধিনায়ক সোফি ডিভাইন। ডান হাতি অফব্রেকে প্রথমে উইকেট হারান শেফালী বর্মা। কারসনের হাতেই ক্যাচ তুলে দেন তিনি। করেন ৪ বলে ২। অনভ্যস্ত তিন নম্বরে নেমেছিলেন হরমনপ্রীত কৌর (Harmanpreet Kaur)। স্মৃতি মন্ধানার সাথে তাঁর জুটি ম্যাচ জেতাবে ‘উইমেন ইন ব্লু’কে, আশায় ছিলে ভারতীয় সমর্থকেরা। কিন্তু হতাশই হতে হলো তাঁদের। ব্যর্থতা জুটলো দুজনেরই কপালে। কারসনকেই স্টেপ আউট করে মারতে গিয়ে লং অনে ধরা পড়েন মন্ধানা। ১৩ বলে ১২’র বেশী করতে পারেন নি তিনি। আর হরমনপ্রীত’কে আউট করেন রোজমেরি মেয়ার। লেগ বিফোরের জন্য রিভিউ নিয়েছিলেন তিনি। আম্পায়ারস কল বিরুদ্ধে যায় তাঁর। করেন ১৫।
প্রথম তিন ব্যাটার সাজঘরে ফিরতেই অনেকখানি ব্যাকফুটে চলে গিয়েছিলো ভারত। চাপের মুখে ভেঙে পড়লো মিডল অর্ডার’ও। লিয়া তাহুহু’র বলে উইকেট হারান জেমিমা রড্রিগস। ১১ বলে ১ করে মিড অনে ধরা পড়েন ম্যাডি গ্রিণের হাতে। ১৯ বলে ১৩ করে থামেন রিচা (Richa Ghosh)। অভিজ্ঞ দীপ্তি শর্মা’র সংগ্রহ ১৮ বলে ১৩। লোয়ার অর্ডারের পক্ষে এরপর আর লড়াই চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় নি। রোজমেরি মেয়ার, এমেলিয়া কেরদের সামনে খড়কুটোর মতই উড়ে যান অরুন্ধতী রেড্ডি, শ্রেয়াঙ্কা পাতিল’রা। ৪ ওভারে ১৯ রানের বিনিময়ে ৪ উইকেট নেন মেয়ার, তাহুহু’র সংগ্রহ ৩টি উইকেট। কারসন ও এমেলিয়া কের-এর ঝুলিতে যথাক্রমে ২টি ও ১টি উইকেট। ১৯ ওভারে ১০২ রানেই গুটিয়ে যায় ভারতের ইনিংস। আগামী রবিবার সামনে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তান। মহাম্যাচে নামার আগে ৫৮ রানে এই হার চিন্তায় রাখবে হরমনপ্রীতদের।