T20 World Cup: গত বছরের নভেম্বর মাসের ৭ তারিখ, ওডিআই বিশ্বকাপের (ICC World Cup) মঞ্চে প্রবল প্রতাপশালী অস্ট্রেলিয়ার (AUS) বিরুদ্ধে জয়ের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়েছিলো আফগানিস্তান (AFG)। টুর্নামেন্টের সবচেয়ে বড় ‘অঘটন’-এর প্রহর গোণা শুরু করে দিয়েছিলো ওয়াংখেড়ে। ২৯২ রানের লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে নেমে একটা সময় অজিদের স্কোরবোর্ড বলছিলো ৭ উইকেটের বিনিময়ে ৯১। অতি বড় অস্ট্রেলীয় সমর্থক’ও সম্ভবত সেদিন ভাবেন নি যে দুই পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়বেন তাঁর প্রিয় দল। কিন্তু যাবতীয় হিসেবনিকেশ উলটে এক অবিশ্বাস্য ২০১* রানের ইনিংস খেলে আফগানিস্তানের স্বপ্ন ভেঙেছিলেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল (Glenn Maxwell)। অজি অলরাউন্ডারের বিক্রমে ম্যাচ খোয়ানো আফগান বাহিনী ছিটকে যায় সেমিফাইনালের দৌড় থেকেও।
কাট টু ২০২৪-এর ২৩-এ জুন। সেন্ট ভিনসেন্টের মাঠে মুখোমুখি সেই অস্ট্রেলিয়া ও আফগানিস্তানই। টি-২০ বিশ্বকাপের (T20 World Cup) সুপার এইটের ম্যাচ জিতলেই সেমিফাইনালে নিশ্চিত অজি শিবির। আর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে জয় প্রয়োজন আফগানদের। বড় মঞ্চে আরও একবার রশিদ খান (Rashid Khan), মহম্মদ নবি’দের (Mohammad Nabi) বিরুদ্ধে সমস্যার মুখে পড়তে দেখা গেলো ২০২১-এর কুড়ি-বিশের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের। গত বছর মুম্বইয়ের মাঠে যে ভুলচুক করেছিলো উপমহাদেশীয় ক্রিকেটের নবতম শক্তি, এবার ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের মাঠে আর তা করে নি তারা। আরও একবার প্রতিরোধের পাহাড় হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন ম্যাক্সওয়েল’ই (Glenn Maxwell), কিন্তু নবীন উল হক-গুলবদিন নাইবের (Gulbadin Naib) সাঁড়াশি আক্রমণের চাপে শেষমেশ মুখ থুবড়ে পড়লো অজি শৌর্যের মিনার। ২১ রানে জিতে মাঠ ছাড়লো আফগানিস্তান।
Read More: “সবথেকে বড় অঘটন…” বিশ্বকাপের মঞ্চে অস্ট্রেলিয়াকে হারতেই সমাজ মাধ্যমে ট্রেন্ডিং আফগানিস্তান !!
অর্ধশতক গুরবাজের, কামিন্সের ঝুলিতে দ্বিতীয় হ্যাট্রিক-
ভারতের বিরুদ্ধে টি-২০ বিশ্বকাপের (T20 World Cup) সুপার এইট পর্বের প্রথম ম্যাচে হেরেছিলো আফগানিস্তান। সেমিফাইনালের আশা বাঁচিয়ে রাখতে হলে আজ জয় দরকার ছিলো তাদের। টসে হেরে প্রথম ব্যাট করতে নেমে বেশ সাবধানী ভঙ্গিতে শুরুটা করেছিলেন ইব্রাহিম জাদ্রান (Ibrahim Zadran) ও রহনানুল্লাহ গুরবাজ। গ্রুপ পর্বে প্রথম দুই ম্যাচে বড় রান করার পর খানিক নীচের দিকে নেমেছিলো গুরবাজের (Rahmanullah Gurbaz) ফর্মের গ্রাফ। কিন্তু আজ ‘মাস্ট উইন’ ম্যাচে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ালেন তিনি। ইব্রাহিমকে সাথে নিয়ে শক্ত ভিতের উপর দাঁড় করান ইনিংসকে। টুর্নামেন্টের তৃতীয় অর্ধশতক আজ এলো তাঁর ব্যাট থেকে। ১৬তম ওভারের পঞ্চম বলে যখন মার্কাস স্টয়নিসের বলে ডেভিড ওয়ার্নারের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরছেন সাজঘরে, দলের স্কোরবোর্ডে তখন ১১৮। ৪৯ বলে ৬০ করেন তিনি।
গুরবাজ ফেরার পরেই ভাঙন শুরু হয় আফগানিস্তান ব্যাটিং লাইন আপে। ১২১ রানের মাথায় আউট হন আজমাতুল্লাহ ওমরজাই। অ্যাডাম জাম্পা’র (Adam Zampa) বলে বোল্ড হন তিনি। সেই একই ওভারে অজি লেগস্পিনার ফিরিয়ে দেন ইব্রাহিম জাদ্রানকেও। ৪৯ বলে ৫১ করেন তিনি। এরপর সেন্ট ভিনসেন্টের মাঠে দেখা গেলো প্যাট কামিন্স (Pat Cummins) শো। গত ম্যাচে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে হ্যাট্রিক করেছিলেন তিনি। আজ আফগানিস্তানের বিরুদ্ধেও স্পর্শ করলেন সেই একই কৃতিত্ব। ১৮তম ওভারের শেষ বলে আউট করেছিলেন রশিদ খান’কে (Rashid Khan)। এরপর ২০তম ওভারের প্রথম দুই বলেই তারকা পেসার ফিরিয়ে দেন করিম জানাত ও গুলবদিন নাইব’কে। ৪ বলে ৪ উইকেটও পেতে পারতেন, তবে ওয়ার্নার ক্যাচ ফস্কানোয় মালিঙ্গাকে ছোঁয়া হলো না তাঁর। ৬ উইকেটের বিনিমনে ১৪৮ রানে থামে আফগানিস্তান।
দুর্দান্ত গুলবদিন ও নবীন, স্বপ্নের জয় আফগানদের-
ইনিংসের বিরতিতেও অস্ট্রেলিয়াকেই এগিয়ে রেখেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু বিনা যুদ্ধে সূচাগ্র মেদিনী যে ছাড়তে রাজী নয় আফগানিস্তান তা শুরুতেই বুঝিয়ে দেন নবীন উল হক (Naveen-ul Haq)। ইনিংসের তৃতীয় বলেই বোল্ড হন ট্র্যাভিস হেড। ০ রানের মাথায় প্রথম উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া। তৃতীয় ওভারে ফের আঘাত হানেন নবীন। আফগান পেসারের দ্বিতীয় শিকার অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক মিচেল মার্শ। ১২ রানের বেশী আজ এগোতে পারেন নি তিনি। দুই উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকা অস্ট্রেলিয়াকে আরও ব্যাকফুটে ঠেলে দেয় ডেভিড ওয়ার্নারের উইকেট। আজ ৮ বলে ৩ করেন বাম হাতি ওপেনার। এরপর মার্কাস স্টয়নিসের সাথে জুটি বেঁধেছিলেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল (Glenn Maxwell)। কিন্তু গুলবদিনের বল স্টয়নিসের ব্যাট ছুঁয়ে উইকেটরক্ষক গুরবাজের দস্তানায় জমা পড়তেই আবারও চালকের আসনে বসেন আফগান’রা।
ওয়াংখেড়ের সেই ২০১*-এর স্মৃতি আজও ফিরিয়েছিলেন ম্যাক্সওয়েল (Glenn Maxwell)। আভাস দিয়েছিলেন একা কুম্ভ হয়ে লড়াই করার। এক প্রান্তে টিভ ডেভিড, ম্যাথু ওয়েড’রা যখন দ্রুত ফিরছেন সাজঘরে, তখন অটল, অবিচল ছিলেন ম্যাক্সওয়েল। কিন্তু শেষমেশ হার মানতে হলো তাঁকেও। গুলবদন নাইবের (Gulbadin Naib) বলে ৫৯ রানের মাথায় তিনি ক্যাচ তুলে দেন নূর আহমেদের হাতে। ৪ ওভারে ২০ রানের বিনিময়ে ৪ উইকেট তুলে নিলেন গুলবদিন। প্যাট কামিন্স, অ্যাডাম জাম্পা, জশ হ্যাজেলউডদের পক্ষে অস্ট্রেলিয়াকে বাকি পথটুকু পার করানো সম্ভব হয় নি আজ। ১২৭ রানেই অল-আউট হয় তারা। আজকের ম্যাচে ২ পয়েন্ট নিয়ে টি-২০ বিশ্বকাপের সুপার এইট জমিয়ে দিলো আফগানিস্তান। ভারত ইতিমধ্যেই নিশ্চিত সেমিফাইনালে। দ্বিতীয় দল হিসেবে শেষ চারের টিকিট নিশ্চিত করতে ২৪ তারিখ টিম ইন্ডিয়াকে হারানো ছাড়া গতি নেই অস্ট্রেলিয়ার।