আজ থেকে প্রায় বছর ষোলো আগের কথা, দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবানে ২০০৭ টি-২০ বিশ্বকাপের ম্যাচে মুখোমুখি ভারত-ইংল্যান্ড। ১৯তম ওভারে তরুণ পেসার স্টুয়ার্ট ব্রডের (Stuart Broad) হাতে বল তুলে দেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক পল কলিংউড (Paul Collingwood)। ব্যাট হাতে তখন যুবরাজ সিং (Yuvraj Singh)। খানিক আগেই ইংল্যান্ডের অলরাউন্ডার অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফের সাথে কথার লড়াই হয়েছিলো যুবরাজের। ফুটতে থাকা ভারতীয় বাঁ-হাতি ব্যাটার ব্রডের প্রথম বলটা উড়িয়ে দেন মাঠের বাইরে। এরপর দুই-তিন-চার-পাঁচ-ছয়, ওভারের সবক’টি বলেরই ঠাঁই হয় গ্যালারিতে। মাঠে উপস্থিত প্রত্যেকের চোখে তখন বিস্ময়। টি-২০ বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথম কেউ একই ওভারে সবকটি বলে ছক্কা হাঁকানোর রেকর্ড করেন। সেই ম্যাচে ১২ বলে অর্ধশতক করে রেকর্ডের সিংহাসনে বসেছিলেন যুবরাজ, আর হতাশায় ডুবেছিলেন তরুণ পেসার ব্রড (Stuart Broad)।
Read More: টিম ইন্ডিয়ার মিডল অর্ডার সমস্যার সমাধান জানালেন সলমন বাট, তুললেন এই অভিজ্ঞ ব্যাটারকে ফেরানোর দাবী !!
বাধার পাহাড় পেরিয়ে কিংবদন্তি স্টুয়ার্ট ব্রড-
ডারবানের সেই ম্যাচ ভারতীয় ক্রিকেটের জন্য গর্বের হলেও ব্রডের (Stuart Broad) কাছে অভিশপ্ত বলা চলে। ছয় ছক্কার সেই অভিঘাত কাটিয়ে তাঁর ক্রিকেট কেরিয়ার আদৌ ডানা মেলতে পারবে কিনা, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠতে শুরু হয়েছিলো ২০০৭-এ। ভেঙে পড়লেন প্রাক্তন ইংল্যান্ড ক্রিকেটার ক্রিস ব্রডের পুত্র হারিয়ে যান নি ক্রিকেট থেকে। ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে ফিরে এসেছেন মাঠে। যে টি-২০ বিশ্বকাপ তাঁর পায়ের তলা থেকে মাটি কেড়ে নিয়েছিলো, সেই টি-২০ বিশ্বকাপেই পরবর্তীতে ইংল্যান্ডের অধিনায়কত্বও করেছেন ব্রড (Stuart Broad)। টেস্ট ক্রিকেটে নিজেকে উন্নীত করেছেন কিংবদন্তির পর্যায়ে। যে অ্যাসেজ’কে ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটমহল চারিত্রিক দৃঢ়তার সবচেয়ে বড় পরীক্ষা বলে থাকে, তাতে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী হয়েছেন দেশের হয়ে। ৩৭ বছর বয়সে এসে কেরিয়ারকে বিদায় জানানোর মুহূর্তে ব্রডের মুখে ফের শোনা গেলো সেই ছয় ছক্কার স্মৃতি।
২০০৭ সালে যাঁর কেরিয়ার শেষ বলে দাগিয়ে দিয়েছিলেন অনেকে, সেই স্টুয়ার্ট ব্রড (Stuart Broad) তাঁর বর্ণময় কেরিয়ারে ইতি টানতে চলেছেন ৩১ জুলাই ২০২৩, অর্থাৎ ছয় ছক্কার বিভীষিকার প্রায় ষোলো বছর পর। মাঝের সময়টায় ১৬৭ টেস্টে দেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন তিনি। বর্তমানে উইকেটের সংখ্যা ৬০২। সর্বকালের সেরাদের তালিকায় নিঃসন্দেহে জায়গা করে নিয়েছেন উপরের দিকেই। পেসারদের মধ্যে ক্রিকেট ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ টেস্ট উইকেটের মালিক তিনি। মোট উইকেটের নিরিখে টেস্টে পঞ্চম সফলতম বোলার। ব্যাট হাতেও ৩০০০’এর বেশী টেস্ট রান করেছেন। রয়েছে শতরানও। লাল বলের খেলায় ফোকাস করতে বহুদিন আগেই সরে দাঁড়িয়েছিলেন সাদা বলের ফর্ম্যাট থেকে। ১২১ একদিনের ম্যাচে দেশের হয়ে ব্রড (Stuart Broad) নিয়েছেন ১৭৮ উইকেট আর টি-২০তে সংখ্যাটা ৫৬ ম্যাচে ৬৫।
ছয় ছক্কার মানসিক অভিঘাত নিয়ে মুখ খুললেন ব্রড-
ওভালে ২০২৩ সালের অ্যাসেজের শেষ টেস্ট চলাকালীন আচমকাই অবসর ঘোষণা করেছেন স্টুয়ার্ট ব্রড (Stuart Broad)। এখনও নিয়মিত উইকেট তুলছেন তিনি। হারিয়ে যায় নি স্যুইং, তাও সেরা ফর্মে থেকেই মাঠকে বিদায় জানাচ্ছেন তিনি। অবসরের ঠিক আগে সাংবাদিক সম্মেলনে এসেছিলেন ইংল্যান্ডের কিংবদন্তি। উঠলো ছয় ছক্কার প্রসঙ্গ। কোনো রকম রাখঢাক না করেই সেই অভিশপ্ত অধ্যায়ের পাতা ওল্টালেন ব্রড (Stuart Broad)। তিনি বলেন, “হ্যাঁ, অবশ্যই একটা কঠিন দিন ছিলো। কত বয়স তখন আমার? ২১–২২? অনেক কিছু শিখেছিলাম। এটার উপর ভিত্তি করে আমি একটা মানসিক রুটিন তৈরি করেছিলাম পরে। বুঝেছিলাম আন্তর্জাতিক আঙিনার জন্য পারফর্মার হিসেবে আমি যথেষ্ট ছিলাম না সেই সময়। তাড়াহুড়োতে প্রস্তুতি সারতাম। বলের আগে আমার কোনো নির্দিষ্ট রুটিন ছিলো না। কোনো নির্দিষ্ট ফোকাস ছিলো না…”
তবে এই ছয়-ছক্কার অভিজ্ঞতা সাপে বর হয়েছে বলেই মনে করেন ব্রড (Stuart Broad)। জানান, “…এই অভিজ্ঞতা আমায় অনেক দৃঢ় করেছে। যাকে আমি নিজের ‘ওয়ারিয়র মোড’ বলি।” তিনি আরও বলেন, “এটা না হলেই হয়ত ভালো হয়ত। যেহেতু এই ম্যাচটা টুর্নামেন্টে আমাদের ভাগ্য নিয়ন্ত্রক ছিলো না, সেটা আমায় সাহায্য করেছে। এমন নয় যে আমার জন্য দল প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে গিয়েছিলো। কিন্তু এই অভিজ্ঞতা আমায় লড়াই করতে শিখিয়েছে। আমায় এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে। ধাক্কা খাওয়ার পর মাঠে ফিরে আসার ক্ষমতাটুকুই আসল। (বেন) স্টোকসের কেরিয়ারের দিকে তাকালেই সেটা বোঝা যাবে। দীর্ঘসময় ক্রিকেট খেললে কেরিয়ারে ওঠাপড়া থাকবেই। সেসব কাটিয়ে উঠেই সাফল্য সুনিশ্চিত করতে হবে।”
দেখে নিন স্টুয়ার্ট ব্রডের সম্পূর্ণ সাক্ষাৎকারটি-
Stuart Broad talking about being hit for 6 sixes in an over against Yuvraj Singh.pic.twitter.com/TZPUUBuzjP
— Mufaddal Vohra (@mufaddal_vohra) July 30, 2023