ঘুরে দাঁড়ানোর প্রচেষ্টায় শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট। ওডিআই ও টি-২০ বিশ্বকাপে মুখ থুবড়ে পড়েছিলো তারা। সনৎ জয়সূর্য কোচের পদে বসার পর ধীরে ধীরে অন্ধকারকে পিছনে ফেলে আলোয় ফিরছে তারা। ঘরের মাঠে ভারতের মত শক্তিশালী দেশকে ওডিআই সিরিজে হারিয়েছে লঙ্কাবাহিনী। নিউজিল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করেছে টেস্টে। উইলিয়ামসন, রচিন রবীন্দ্রদের আগাগোড়া চাপে রেখেছেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজ, দীনেশ চাণ্ডিমাল’রা। ইংল্যান্ডের মাটিতে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে টেস্ট ম্যাচও জিতেছে তারা। কামিন্দু মেন্ডিসের মত প্রতিভার আত্মপ্রকাশ হয়েছে শ্রীলঙ্কায়। যাঁকে প্রজন্মের অন্যতম সেরা প্রতিভা বলতেও দ্বিধা করছেন না বিশেষজ্ঞরা। ইতিবাচক বেশ কিছু জিনিসের পাশাপাশি নেতিবাচককেও এড়ানো যাচ্ছে না। প্রত্যাবর্তনের পথ খুঁজতে থাকা লঙ্কান ক্রিকেট কলুষিত হলো গড়াপেটার কাদায়।
Read More: আর্থিক তছরুপের দায়ে অভিযুক্ত টিম ইন্ডিয়া অধিনায়ক, হতে পারে হাজতবাস !!
গড়াপেটার জন্য নির্বাসিত লঙ্কান তারকা-
চলতি বছরের অগস্ট মাসেই আইসিসি’র ‘কোড অফ কন্ডাক্ট’-এর ২.৪.৪ ও ২.৪.৭ ধারা ভাঙার অভিযোগ উঠেছিলো শ্রীলঙ্কার স্পিনার প্রবীন জয়বিক্রমার (Praveen Jayawickrama) বিরুদ্ধে। সেই অপরাধের ভিত্তিতে আজ তাঁর শাস্তি ঘোষণা করেছে বিশ্ব ক্রিকেট নিয়ামক সংস্থা আইসিসি। ঘটনার সূত্রপাত ২০২১ সালে। জাফনা কিংসের হয়ে লঙ্কান প্রিমিয়ার লীগে অংশ নিয়েছিলেন জয়বিক্রমা। তাঁর দল ট্রফি জিতলেও একটির বেশী ম্যাচে খেলার সুযোগ পান নি তিনি। টুর্নামেন্টের এই সংস্করণেই অনৈতিক কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠা তাঁর বিরুদ্ধে। আইসিসি’র তরফে জানানো হয় যে ম্যাচ গড়াপেটার প্রস্তাব পাওয়া সত্ত্বেও সঠিক সময়ের মধ্যে তা দুর্নীতিদমন শাখার কাছে রিপোর্ট করেন নি তিনি । অন্যান্য ক্রিকেটারদের ম্যাচ-ফিক্সিং-এ অংশ নেওয়ার জন্য প্রভাবিত করার প্রস্তাব পেয়েছিলেন তিনি। দুর্নীতিদমন সংস্থার নজরে আনেন নি সেই বিষয়টিও।
জয়বিক্রমার (Praveen Jayawickrama) বিরুদ্ধে অভিযোগের তালিকা আরও লম্বা। তদন্তের গতিরোধ করার জন্য মেসেজ’ও ডিলিট করেছিলেন তিনি। ৬ অগস্ট আইসিসি জানিয়েছিলো যে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য দুই সপ্তাহ দেওয়া হবে তাঁকে। সেই সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও জয়বিক্রমার পক্ষে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করা সম্ভব হয় নি। বরং নিজের অপরাধ স্বীকার করে নেন তিনি। তাঁর স্বীকারোক্তির পরে জয়বিক্রমাকে সব ধরণের ক্রিকেট থেকে এক বছরের জন্য নির্বাসিত করেছে বিশ্ব ক্রিকেট নিয়ামক সংস্থা। তবে যেহেতু তিনি দোষ স্বীকার করে নিয়েছেন, সেহেতু এই এক বছরের মধ্যে শেষের ছয় মাস তাঁকে ‘সাসপেন্ডেড সেন্টেন্স’ দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ সেই সময়টুকু নির্বাসনে কাটাতে হবে না শ্রীলঙ্কান তারকা’কে। অতীতে গড়াপেটার কারণে শাস্তি পেয়েও ক্রিকেটের মূলস্রোতে ফিরেছেন মহম্মদ আমিরের মত ক্রিকেটার। জয়বিক্রমা (Praveen Jayawickrama) তা পারেন কিনা সেদিকে নজর থাকবে।
জয়বিক্রমার কেরিয়ার পরিসংখ্যান-
শ্রীলঙ্কার হয়ে ২০২১ সালে পাল্লেকেলে স্টেডিয়ামে টেস্ট অভিষেক হয়েছিলো প্রবীণ জয়বিক্রমার (Praveen Jayawickrama)। ঐ বছরেই ওডিআই ও টি-২০ ক্যাপ হাতে পান তিনি। পাঁচটি টেস্ট, ৫টি ওডিআই ও ৫টি টি-২০তে দেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন বাম হাতি স্পিনার। লাল বলের ফর্ম্যাটে উইকেট নিয়েছেন ২৫টি। ওয়ান ডে’তে তাঁর সাফল্যের সংখ্যা ৫ আর টি-২০তে নিয়েছেন ২ উইকেট। ২০২২ সালে শেষবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছেন তিনি। বছর ২৫-এর তরুণ স্পিনারকে সম্ভাবনাময় আখ্যা দিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা। প্রভাত জয়সূর্যের (Prabath Jayasuriya) সাথে তাঁর স্পিন জুটি ঘরের মাঠে লঙ্কানদের তুরুপের তাস হয়ে উঠতে পারত বলেও মতামত দিয়েছে অনেকে, কিন্তু ম্যাক্স ফিক্সিং-এর অপরাধে জড়িয়ে আপাতত তাঁর কেরিয়ারের মুখেই পড়েছে প্রশ্নচিহ্ন।