ভারতীয় দল এই মুহূর্তে রয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজে। সেখানে ক্রিকেটের তিন ফর্ম্যাটেই ক্যারিবিয়ান দলের মুখোমুখি হবে তারা। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের পর শুরু হবে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি। জাতীয় দল যেখানে ক্রিকেটের মেগা মঞ্চের অনুশীলনে ব্যস্ত, সেখানে থেমে নেই দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটও। চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে হয়ে গেলো দলীপ ট্রফির (Duleep Trophy) ফাইনাল। মুখোমুখি হয়েছিলো পশ্চিমাঞ্চল এবং দক্ষিণাঞ্চল। প্রথম সেমিফাইনালে আলুরের মাঠে সেন্ট্রাল জোন বা মধ্যাঞ্চলকে হারিয়ে দলীপ ট্রফির ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছিলো পশ্চিমাঞ্চল। আর দ্বিতীয় সেমিফাইনালে নর্থ জোন বা উত্তরাঞ্চলের বিরুদ্ধে ২ উইকেটে জিতে খেতাবী লড়াইতে সামিল হয়েছিলো দক্ষিণাঞ্চল।
পৃথ্বী শ (Prithvi Shaw), সরফরাজ খান (Sarfaraz Khan), চেতেশ্বর পূজারা (Cheteshwar Pujara), সূর্যকুমার যাদবদের মত তারকারা ছিলেন পশ্চিমাঞ্চলে। পিছিয়ে ছিলো না সাউথ জোনও। হনুমা বিহারীর নেতৃত্বাধীন দলে সামিল ছিলেন মায়াঙ্ক আগরওয়াল, রিকি ভুঁই, তিলক বর্মার মত ঘরোয়া ক্রিকেটের পরিচিত নামেরা। গত পাঁচ দিন ব্যাটে-বলে তুল্যমুল্য লড়াই শেষে স্বস্তির হাসি হাসলো দক্ষিণাঞ্চলই। বিদ্ব্যাৎ কাভেরাপ্পা (Vidhwath Kaverappa), বিজয়কুমার বৈশাখদের (Vijaykumar Vyshak) বোলিং আগ্রাসনের সামনে পদানত হতেই হলো পশ্চিমাঞ্চলের তারকাখচিত ব্যাটিং লাইন আপ’কে। তবে তারা হারলেও নজর কেড়ে নিলেন ওয়েস্ট জোনের বাঁ-হাতি অর্থোডক্স স্পিনার ধর্মেন্দ্রসিং জাদেজা (Dharmendrasinh Jadeja)। দুই ইনিংস মিলিয়ে মোট ৭ উইকেট নিয়ে প্রায় একার কৃতিত্বে ম্যাচের উত্তেজনা বজায় রেখেছিলেন তিনি। কিন্তু চতুর্থ ইনিংসে ব্যাটারদের ব্যর্থতায় দলীপ ট্রফি (Duleep Trophy) হারতে হয় পশ্চিমাঞ্চলকে।
Read More: Asian Games 2022: “আমার একটাই স্বপ্ন…” ভারতকে নেতৃত্ব দেওয়া নিয়ে মুখ খুললেন ঋতুরাজ গায়কোয়াড় !!
ব্যাটিং ব্যর্থতায় পিছিয়ে পড়েছিলো ওয়েস্ট-জোন-

দলীপ ট্রফি (Duleep Trophy) ফাইনালে পশ্চিমাঞ্চল অধিনায়ক প্রিয়াঙ্ক পাঞ্চাল (Priyank Panchal) টসে জিতে প্রথমে বোলিং-এর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এই সিদ্ধান্তই পরে ব্যুমেরাং হয়ে ফিরলো তাদের দিকে। প্রথম ইনিংসের ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই রবিকুমার সমর্থ ও মায়াঙ্ক আগরওয়ালের উইকেট হারায় সাউথ জোন। ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন তিলক বর্মা এবং অধিনায়ক হনুমা বিহারী (Hanuma Vihari)। ৮৭ বলে লড়াকু ৪০ রানের ইনিংস খেলেন তিলক। সাথে অভিজ্ঞ বিহারী ১৩০ বলে যোগ করেন ৬৩ রান। তাঁদের ৭৯ রানের পার্টনারশিপের পর ফের একবার ব্যাটিং বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয় দল। শেষমেশ ২১৩ রানে শেষ হয় ইনিংস। প্রথম ইনিংসে সামস মুলানি (Sams Mulani) ৩ উইকেট পান। ২ উইকেট পান ধর্মেন্দ্রসিং জাদেজা (Dharmendrasinh Jadeja)। অর্জন নাগেশওয়ালা, চিন্তন গজাও পান ২টি করে উইকেট।
ব্যাট হাতে সাউথ জোন বোলারদের সামনে বিশেষ সুবিধা করতে পারেন নি পশ্চিমাঞ্চল ব্যাটাররা। প্রিয়াঙ্ক পাঞ্চাল (Priyank Panchal), হার্ভিক দেশাই-রা ফেরেন দ্রুত। সদ্য জাতীয় দল থেকে বাদ পড়া চেতেশ্বর পূজারা (Cheteshwar Pujara) করেন মাত্র ৯ রান। সূর্যকুমার যাদব প্রথম বলে ছক্কা হাঁকিয়েও থামেন মাত্র ৮ রানে। জাতীয় দলের নজরে থাকা সরফরাজ খান (Sarfaraz Khan) করেন ৪ বলে ০ রান। কর্ণাটকের পেসার বিদ্ব্যাৎ কাভেরাপ্পার (Vidhwath Kaverappa) আগুনে বোলিং-এ ছারখার হয় ওয়েস্ট জোনের ব্যাটিং। ১৯ ওভার হাত ঘুরিয়ে ৫৩ রানের বিনিময়ে ৭ উইকেট নেন তিনি। বাকিরা ব্যর্থ হলেও লড়াই চালালেন একা পৃথ্বী শ (Prithvi Shaw)। মুম্বইয়ের তরুণ ব্যাটার করেন ১০১ বলে ৬৫ রান। পশ্চিমাঞ্চলের ইনিংস শেষ হয় ১৪৬ রানে।
জাদেজার লড়াই সত্ত্বেও হার সরফরাজদের-

প্রথম ইনিংসে ৬৭ রানের লিড পায় দক্ষিণাঞ্চল। দ্বিতীয় ইনিংসে তাদের ওপেনিং জুটি ভাঙে মাত্র ৫ রানের মাথায়। চিন্তন গজার বলে ফেরেন রবিকুমার সমর্থ (Ravikumar Samarth)। মায়ঙ্ক আগরওয়াল করেন ৩৫, হনুমা বিহারী করেন ৪২, রিকি ভুঁই ও ওয়াশিংটন সুন্দর করেন ৩৭ রান করে। ছোটো ছোটো পার্টনারশিপ গড়ে ইনিংসকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় ছিলেন দক্ষিণাঞ্চল ব্যাটাররা। তাঁদের সামনে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়ান স্পিনার ধর্মেন্দ্রসিং জাদেজা (Dharmendrasinh Jadeja)। ২২ ওভার ১ বল হাৎ ঘুরিয়ে মাত্র ৪০ রানের বিনিময়ে ৫ ব্যাটারকে সাজঘরে ফেরান তিনি। মূলত তাঁর দাপটেই সাউথ-জোনের ইনিংস শেষ হয় ২৩০ রানে। অর্জন নাগেশওয়ালা এবং অতীত শেঠ (Atit Seth) ২টি করে উইকেট পান। এক উইকেট পান চিন্তন গজা।
২৯৮ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে চতুর্থ ইনিংসের শুরুতেই পৃথ্বী শ-কে (Prithvi Shaw) হারায় ওয়েস্ট-জোন। অধিনায়ক প্রিয়াঙ্ক পাঞ্চাল লড়াই চালিয়ে যান। ৯৫ রান করেন তিনি। হার্ভিক দেশাই, চেতেশ্বর পূজারা, সূর্যকুমার যাদব ফের ব্যর্থ হন। প্রথম ইনিংসে ০ করলেও দ্বিতীয় ইনিংসে সরফরাজ খানের ব্যাট থেকে আসে ৪৮ রান। তবে প্রিয়াঙ্ক (Priyank Panchal) ও সরফরাজের (Sarfaraz Khan) ৮৮ রানের জুটি ভাঙতেই তাসের ঘরের মত ধসে পড়ে পশ্চিমাঞ্চলের ব্যাটিং। ২২২ রানে অল-আউট হয় তারা। বাসুকি কৌশিক (Vasuki Koushik) এবং সাই কিশোর (Sai Kishore) ৪টি করে উইকেট পান। ১টি করে উইকেট ঝুলিতে যায় বিদ্ব্যাৎ কাভেরাপ্পা এবং বিজয়কুমার বৈশাখের। ব্যাটে-বলে দাপট বজায় রেখে ১৪তম দলীপ ট্রফি (Duleep Trophy) ঘরে তুললো দক্ষিণাঞ্চল।