ভারতীয় ক্রিকেটের সব থেকে চর্চিত চরিত্র হলেন সৌরভ গাঙ্গুলী (Sourav Ganguly)। একদা এক সময় দলকে বিপর্যয়ের হাত থেকে টিম ইন্ডিয়াকে বাঁচানো সৌরভ গাঙ্গুলীকে নিয়েই তৈরি হয়েছে একের পর এক বিতর্ক। শুধু যে খেলা চলাকালীন তাকে নিয়ে বিতর্ক হয়েছে এমনটা নয়, বেশ কিছুদিন আগেই আইপিএল এর মঞ্চে বিরাট কোহলির (Virat Kohli) সঙ্গে হ্যান্ডশেক বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। এমনকি বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন বিরাটের চাকরিও চলে যায়। এর পাশাপাশি, নানা বিতর্কে জড়ান তিনি। তবে ক্যাপ্টেন সৌরভ ছিল ভারতের ইমোশন, তার জন্যই ভারতীয় দল দেশের বাইরে মুখ তুলে তাকাতে শিখেছিল। আসলে ২০০০ সালের অধিনায়ক হিসেবে যখন সৌরভ দায়িত্ব পান, তখন ভারতীয় দলের অবস্থা একেবারেই করুন ছিল। সেখান থেকে দলকে টেনে তুলে আনেন বাংলার এই সন্তান, তবে মাঠের মধ্যে কিংবা মাঠের বাইরে তিনি বেশ কয়েকবার বিতর্কে জড়িয়েছেন। লর্ডসের মাঠে গিয়ে সৌরভের জামা ঘোরানো আজকে ও ক্রিকেট ইতিহাসে অন্যতম চর্চিত এক ঘটনা। আসলে কখনোই চুপ থাকতে দেখা যায়নি সৌরভকে, সব সময় প্রতিপক্ষকে উত্তর দিয়েছেন তিনি, যে জন্যই তৈরি হয়েছে নানা বিতর্ক।
Read More: Top 3: ৩ ঘটনা যখন মেজাজ হারিয়েছেন ক্যাপ্টেন কুল, মাঠেই করেছিলেন হাঙ্গামা !!
১. গ্রেগ চ্যাপেল বনাম সৌরভ গাঙ্গুলির দ্বন্দ্ব
গ্রেগ চ্যাপেল (Greg Chappell) ও সৌরভ গাঙ্গুলীর (Sourav Ganguly) বিতর্ক ভারতের ক্রিকেটের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় একটি অধ্যায়। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় স্বয়ং গুরু গ্রেগকে টিম ইন্ডিয়ার কোচ করে এনেছিলেন। পরে, গ্রেগের সঙ্গেই ঝগড়া হয় সৌরভের, যার মাশুলও গুনতে হয় তাকে। মূলত, সৌরভের অফ ফর্ম দেখে তাকে দল থেকে বার করেন গ্রেগ, অধিনায়কত্বের পাশাপাশি দলে জায়গাও হারান সৌরভ। দীর্ঘ সময় ধরে টিম ইন্ডিয়ার বাইরেও চলে যান সৌরভ। যদিও পরবর্তী কালে রাহুল দ্রাবিড়কে (Rahul Dravid) ক্যাপ্টেন করলে আবার টিম ইন্ডিয়ার খারাপ অবস্থা শুরু হয়, প্রথম কয়েকটি সিরিজ জেতার পরে ২০০৭ বিশ্বকাপে দলের গঠন একেবারে বদলে দেন গ্রেগ, যার কারণে ২০০৩’এর ফাইনালিস্টরা বাংলাদেশের কাছেও পরাজিত হয়েছিল। যদিও পরবর্তী কালে দুরন্ত কামব্যাক করেন সৌরভ গাঙ্গুলী, তবে ২০০৮ সালেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়ে দেন সৌরভ।
২. সবুজ পিচে খেলতে ভয়
একসময় শোনা যেত ভারতীয় দলের অন্যতম সেরা অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলি নাকি সবুজ পিচে খেলতেই চাইতেন না। ঠিক এমনই অভিযোগ করেছিলেন প্রাক্তন টিম ইন্ডিয়ার কোচ গ্রেগ চ্যাপেলও। তিনি মন্তব্য করে প্রকাশ্যে আনেন এই তথ্য। এমনকি প্রাক্তন অজি ওপেনার অ্যাডাম গিলক্রিস্ট (Adam Gilchrist) এবং ম্যাথু হেডেন একই অভিযোগ আনেন। ২০০৪ সালে খেলা একটি টেস্টে নাকি সৌরভ পিচ প্রদক্ষিন করার পরেই না খেলার সদ্ধান্ত নেন। পাশাপাশি প্রাক্তন ভারতীয় কোচ গ্রেগ চ্যাপেল সৌরভ কে নিয়ে অভিযোগ করেছিলেন যে, দলের সংকটকালে ও পিচে ঘাস দেখলে চোটের বাহানা খুঁজতে থাকতো। আসলে, অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ চলাকালীন একটি ম্যাচে হঠাৎই না খেলার সিদ্ধান্ত নেন সৌরভ, সেদিন পিচ ছিল সবুজ আর সেদিন চোটের বাহানা খোঁজেন গাঙ্গুলী, গুরু গ্রেগের মতে এই চোট ছিল তার বাহানা মাত্র।
৩. টসের জন্য ক্যাপ্টেনদের অপেক্ষা করানো
সৌরভের বিরুদ্ধে বিপরীত দলের ক্যাপ্টেনরা সব থেকে বেশি অভিযোগ আনতেন। তাদেরকে মাঠের মধ্যে দাঁড় করিয়ে রাখার জন্য এ কথা অনেক দেশের ক্যাপ্টেন এই স্বীকার করেছেন যে নির্দিষ্ট সময়ে টস করতে আসতেন না সৌরভ। সর্বপ্রথম এই অভিযোগ শোনা যায় ২০০১ সালের বিখ্যাত ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া (IND vs AUS) টেস্ট সিরিজ চলার সময় যে সময় ভারতে ভ্রমণকারী অস্ট্রেলিয়া দলের অধিনায়ক স্টিভ ওয়াকে (Steve Waugh) মাঝপিচেই অপেক্ষা করতে হয়েছিল। তিনি ছাড়াও, নাসের হুসেন আবার আইপিএলে রাজস্থান রয়্যালসের অধিনায়ক শেন ওয়ার্নকেও (Shane Warne) অপেক্ষা করতে হয়েছিল সৌরভের জন্য । আসলে ক্রিকেট যেমন মাঠে খেলা হয় ঠিক তেমনি ক্রিকেট হল একপ্রকার মাইন্ড গেম এবং সৌরভ এ মাইন্ড গেম খেলতে বেশ পছন্দই করতেন। এমনটা করার কারণ হিসেবে সৌরভ জানিয়েছিলেন যে, তিনি ইচ্ছা করেই অজি অধিনায়ক স্টিভ ওয়াকে দেরি করিয়েছিলেন কারণ ভারতে আসার আগে ওয়া ভারত জয়ের কথা মিডিয়াতে বলে বেড়িয়ে ছিলেন সেটি সৌরভের পছন্দ না হওয়ায় তিনি প্রথমবারের জন্য এমন কাজ করেছিলেন ।