রবি শাস্ত্রীর কূটপরামর্শে শ্রীলঙ্কার জন্য় নাগপুর এবং দিল্লিতেও সবুজ উইকেটের জাল বিছিয়েছে ভারত 1

সেদিন আর নেই। দেশের মাটিতে খেলা হলেই স্পিন সহায়ক উইকেটে খেলতে হবে ম্য়াচ জেতার সংখ্য়া বাড়াতে। ভারতীয় ক্রিকেট এখন তার দৃষ্টি বিদেশের মাটিতে সিরিজ জেতার দিকে দিতে চাইছে। টেস্ট ও একদিনের ক্রিকেটে ভারত এখন একনম্বর দল। আগামী দশ বছর ভারত ক্রিকেট বিশ্বকে শাসন করবে বলে ক্রিকেট লেজেন্ডরা তাঁদের মত রেখেছেন। আর সেই লক্ষ্য়ে ভারতীয় বোর্ড তার দলকে আরও মজবুত করার প্রথম পদক্ষেপ চলতি শ্রীলঙ্কা সিরিজ থেকেই শুরু করে দিয়েছে।

শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে তিন ম্য়াচের টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্য়াচে ইডেনের উইকেটে ঘাস দেখে চমকে গিয়েছিলেন ক্রিকেট সমালোচকরা। বৃষ্টি বিঘ্নিত কলকাতা টেস্ট শেষ হওয়ার পর সবাই পিচের তারিফ করেছেন। তাছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকা যাওয়ার আগে ভালো প্র্য়াক্টিস পেলো ভারত – এই কথাও শোনা গিয়েছে। আগামী শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) থেকে নাগপুরে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট ম্য়াচ শুরু হবে। তারপর তৃতীয় টেস্ট দিল্লিতে ২ ডিসেম্বর থেকে।

দক্ষিণ আফ্রিকা যাওয়ার আগে বিরাটদের ভালো করে তৈরি করে দিতে বদ্ধপরিকর বিসিসিআই। বোর্ডের বিশ্বস্ত সূত্রের খবর, নাগপুর ও দিল্লিতেও গ্রিন টপ অপেক্ষা করছে ভারত ও শ্রীলঙ্কার জন্য়। ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসে ফাস্ট বোলারদের জন্য় এক নতুন অধ্য়ায় রচনা করতে চলেছে এই সিরিজ। আগামী বছরের ৫ জানুয়ারি থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজে অংশ নেবে ভারত। তার আগে এই সুযোগটাকে কোনওভাবেই অপচয় করতে রাজি নয় বিসিসিআই।

অস্ট্রেলিয়া যখন সেপ্টেম্বরে ভারতে সীমিত ওভারের সিরিজ খেলতে এসেছিল, সেই সময়ই জাতীয় দলের হেডকোচ রবি শাস্ত্রী বিসিসিআইয়ের আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলেন টেস্ট সিরিজ সবুজ উইকেটে খেলানোর ব্য়াপারে। বিরাটের গুরুদ্রোণের বক্তব্য় ছিল, শ্রীলঙ্কা সিরিজটাকে দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের প্রস্তুতি হিসেবে কাজে লাগাতে হবে ভারতীয় দলকে। সবুজ উইকেটের পাশাপাশি শক্ত ও বাউন্সে ভরা উইকেট তৈরির পরামর্শ দেন শাস্ত্রী।

নাগপুরের পিচে ঘাস রয়েছে এবং তা রেখে দেওয়া হবে বলে জানা গিয়েছে। যা খবর তাতে এটা পরিষ্কার, ম্য়াচের প্রথম তিনদিন স্পিনারদের কোনও কারিকুরি কাজে আসবে না। ম্য়াচের শেষ দুদিন স্পিনাররা ফায়দা তুলতে পারবেন। অর্থাৎ যে দল আগে ব্য়াট করে পেস বোলিং সহায়ক পিচে বড়স্কোর গড়তে পারবে, তারা বিপক্ষ দলকে চাপে ফেলতে পারবে শেষ দুদিন। কারণ, উইকেট যত ধীরগতির হয়ে আসবে, ততই ফায়দা নেবেন স্পিনাররা এবং রান তোলা ততই কঠিন হয়ে আসবে। আবার বাউন্সে ভরা পিচে খেলার অর্থ হলো দুদলের ফিল্ডারদের বেশ কসরৎ করতে হবে। ফলে, বিসিসিআই জাতীয় দলের সুযোগ পাওয়ার জন্য় ফিটনেস টেস্টের যে বাধ্য়তামূলক শর্ত আরোপ করেছে, এক্ষেত্রে তা একেবারে যুক্তিসঙ্গত।

ভারতীয় ক্রিকেট দলের টিম ম্য়ানেজমেন্ট থেকে এধরনের বার্তা বোর্ডের কাছে যাওয়ার জন্য় প্রশংসা করতেই হয়।  দেশের মাটিতে টেস্ট ম্য়াচ জেতার জন্য় এতোদিন ন্য়াড়াপিচের পক্ষে ভোট যেত। কারণ, ভারত স্পিনের জন্য় বিখ্য়াত। কিন্তু, বিরাটের টিম ইন্ডিয়া এখন অন্য় মানসিকতায় ভরা। এই টিমটা চ্য়ালেঞ্জ নিতে ভয় পায় না। ভারতের হাতে এখন একঝাঁক পেস বোলার। মহম্মদ সামি, ইশান্ত শর্মা, উমেশ যাদব, ভুবনেশ্বর কুমার, জসপ্রীত বুমরাহ – পাঁচ বিশ্বমানের পেস বোলার একসাথে ভারত কোনওদিন পায়নি। শার্দুল ঠাকুর ও মহম্মদ সিরাজ আগামী দিনের তারকা পেস বোলার হয়ে ওঠার দৌড়ে রয়েছেন। অর্থাৎ ভারতের পেস বিভাগ এখন বেশ ঠাসা। ২০১৮ সালে ভারত দক্ষিণ আফ্রিকা, ইংল্য়ান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ায় খেলতে যাবে। আর ভারত এই তিনটি বিদেশ সফরে ভালো খেলে নিজের আধিপত্য় কায়েম করতে চায়। ভারতীয় ক্রিকেটের ঐতিহ্য় স্পিনকে না ভুলে গেলেও দেশের মাটিতে এবার থেকে সবুজ পিচে খেলা হতে দেখা যাবে আগামী দিনে। এমনটাই ইঙ্গিত মিলেছে।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *