২০২৩-এর ওয়ান ডে বিশ্বকাপের পর গোড়ালির চোটে ক্রিকেটের বাইশ গজ থেকে ছিটকে গিয়েছিলেন মহম্মদ শামি (Mohammed Shami)। বাধ্য হয়েই লন্ডনে গিয়ে অস্ত্রোপচার করাতে হয়েছিলো তাঁকে। এক বছরের বিরতির পর গত নভেম্বর মাসে ঘরোয়া ক্রিকেটের আসরে প্রত্যাবর্তন ঘটান তিনি। জাতীয় দলের জার্সি গায়ে চাপাতে সময় লাগে আরও মাস দুয়েক। শেষমেশ ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টিম ইন্ডিয়ার হয়ে বোলিং রান-আপে দেখা গিয়েছিলো শামি’কে (Mohammed Shami)। প্রত্যাবর্তনের রূপকথা জারি ছিলো চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও (CT 2025)। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে ৫ উইকেট নেন তিনি। টুর্নামেন্টে মোট ৯ উইকেট নিয়ে ভারতের খেতাব জয়ে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন বাংলার পেস তারকা। অন্ধকার থেকে তাঁর আলোয় ফেরা, একাধিক অনবদ্য পারফর্ম্যান্স-সংবাদপত্রের হেডলাইন হতে পারত অনেক কিছুই। কিন্তু বাস্তবে দেখা গিয়েছে উলটো ছবি। শামি’র রোজা রাখা নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক।
Read More: “ভারত পাকিস্তানকে শুধু দর্জি হিসেবে মনে রাখবে..”, পিসিবিকে কটাক্ষ পাক সঞ্চালকের !!
‘রোজা’ বিতর্কে উত্তপ্ত পরিস্থিতি-

৪ মার্চ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইলাম চলাকালীন শামি’কে (Mohammed Shami) দেখা যায় ইলেক্ট্রোলাইটস পান করতে। ইসলাম ধর্মাবলম্বী হয়েও কেন রমজান মাসে সূর্যাস্তের আগে উপ্বাস ভেঙেছেন? প্রশ্ন তুলে সরব হয় কট্টরপন্থী মুসলিম সমাজ। দেশ আগে না ধর্ম, এই নিয়েও শুরু হয় জোর তরজা। আগুনে ঘি ঢেলেছিলেন অল ইন্ডিয়া মুসমিল জামাত সংস্থার সভাপতি মৌলানা সাহাবুদ্দিন রাজভি বরেলভি। বলেন, “ইসলাম ধর্মমতে রোজা বাধ্যতামূলক। সকল সুস্থ পুরুষ ও মহিলাকে এটা মেনে চলতেই হয়। ইচ্ছাকৃত যদি কেউ উপবাস না করেন তাহলে সেটা বড়সড় পাপ। ধর্মীয় দায়িত্ব হওয়া সত্ত্বেও উপবাস না করে শামি ‘পাপ’ করেছেন। শরিয়ার চোখে উনি ‘অপরাধী।’” ক্রিকেট তারকাকে যেভাবে ‘অপরাধী’ বা ‘পাপী’ বলে দাগিয়ে দিয়েছিলেন তিনি, তার তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় দেশ জুড়ে। নানা ক্ষেত্রের বিদ্বজনের এগিয়ে এসেছিলেন শামি’র সমর্থনে।
কবি, গীতিকার ও চিত্রনাট্যকার জাভেদ আখতার শামি’র (Mohammed Shami) পাশে দাঁড়িয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন, “শামি সাহেব, দুবাইয়ের তপ্ত দুপুরে তোমার জল পান করা নিয়ে যেসব ধর্মান্ধ মূর্খদের সমস্যা রয়েছে তাদের তুমি বিন্দুমাত্র পাত্তা দিও না। এই বিষয়ে ওদের কথা বলার কোনো এক্তিয়ারই নেই…” প্রাক্তন ক্রিকেটার হরভজন সিং-ও খেলা ও ধর্ম’কে এক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিচার না করতে অনুরোধ করেন। শামি সমর্থন পেয়েছেন মুসলিম সমাজেরই অন্য অংশের থেকে। অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের সদস্য মৌলানা খালিদ রশিদ ফিরাঙ্গি মাহিল এক সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট জানান, “মহম্মদ শামি বাইরে রয়েছেন। উনি চাইলে উপবাস নাও রাখতে পারেন। তার জন্য ওনার দিকে কারও আঙুল তোলার কোনো এক্তিয়ার নেই।” ভারতের জাতীয় কংগ্রেস দলের মুখপাত্র ডক্টর শামা মহম্মদ’ও ANI-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন একই কথা।
ভুয়ো ভিডিও ভাইরাল সোশ্যাল মিডিয়ায়-

‘রোজা’ বিতর্কে যখন সরগরম সোশ্যাল মিডিয়া তখনই সামনে এসেছে অন্য একটি ভিডিও। সেখানে উপবাস ভঙ্গের জন্য টিম ম্যানেজমেন্টের দিকে আঙুল তুলেছেন শামি (Mohammed Shami)। ভিডিওতে তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে “ঐ দিন আমি “ ঐ দিন রোজা ভেঙে ছিলাম। মুসলিম ভাই-বোনেরা আমায় ভুল বুঝবেন না দয়া করে। এটা আমি ইচ্ছা করে করি নি। আমায় জোর করা হয়েছে। না হলে এরা আমার কেরিয়ার নষ্ট করে দিত। আমি আবার আমার মুসলিম ভাই-বোনদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।” ভারতীয় দলে কেউ কখনও ধর্মাচারণে বাধা পেয়েছেন, এমন অভিযোগ ইতিপূর্বে কখনও ওঠে নি। ‘ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার’ খবর সামনে আসায় তাই নড়েচড়ে বসেছিলেন সকলে। নেটমাধ্যমে রীতিমত ঝড় তুলেছিলো শামি’র ভিডিও। তার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য আসরে নামে Factly নামে একটি সংস্থা।
প্রথমে গুগল কি ওয়ার্ড সার্চ করে Factly। কোনো তথ্য না মেলায় ক্রিকেটারের ব্যক্তিগত সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইল ঘেঁটে দেখে তারা। সেখানেও হদিশ মেলে নি এমন কোনো ভিডিও’র।এরপর সেই রিভার্স কি প্রেম থেকে ইমেজ সার্চ করে মহম্মদ শামি’র (Mohammed Shami) ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইলে একটি ভিডিও উদ্ধার করে সংস্থা। ‘ক্ষমা’ চাওয়ার ভিডিওতে যে পোশাকে দেখা গিয়েছে ক্রিকেট তারকা’কে, ইন্সটাগ্রামের পোস্টটির সাথে মিলে যায় তা। শুধু রদবদল চোখে পড়ে অডিও’তে। ২০২৪ সালের ১১ এপ্রিলের ঐ পোস্টে সকলকে ঈদের শুভেচ্ছা জানাতে শোনা গিয়েছে শামি’কে (Mohammed Shami)। বলেছেন, “ঈদের মিষ্টি উপভোগ করুন। আজ ঈদ। খুব সুন্দর করে পালন করুন।” কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কারিকুরিতে সেই ‘নির্বিষ’ ভিডিওকেই সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদ ছড়ানোর কাজে ব্যবহার করেছেন কোনো অসাধু ব্যক্তি, উঠে এসেছে Factly’র তদন্তে।