অনেকদিন ধরে চেষ্টা করার পর ভারতীয় দলের প্রথম একাদশে জায়গা নিশ্চিত হয়েছে বাংলার পেস বোলার মহম্মদ সামির। জাতীয় দলে বড় নামের অভাব হোক কিংবা দীর্ঘদিন ধরে তাঁর ক্রিকেট খেলার অভিজ্ঞতার জোর, মহম্মদ সামি নামটা এখন ভারতীয় দলের পেস বিভাগে ভরসা যোগাবার জন্য যথেষ্ট। আর হবে নাই বা কেন? ক্রিকেট মাঠে সময়টা তো আর কম কাটালেন না। তার ওপর প্রতিভা রয়েছে। সম্প্রতি শ্রীলঙ্কার মাটিতে টেস্ট সিরিজে তাঁর পেস বোলিংকে সামলাতে কূল-কিনারা পায়নি লঙ্কান লায়নরা। প্রায় বানের জলে ভেসে যাওয়ার মতো ভেসে গিয়েছেন।

বর্তমান শ্রীলঙ্কা দল তেমন শক্তিশালী না হওয়ায়, আবার একনাগাড়ে ক্রিকেট খেলা হয়ে যাচ্ছিল বলে সীমিত ওভারের সিরিজে সামিকে বিশ্রাম দিয়েছেন নির্বাচকরা। ফলে, তাঁকে দেশে ফিরে আসতে হয়েছে। কিন্তু, নিজের দেশে থাকতে ভয় পাচ্ছেন বাংলার এই পেসার। শুধু এবার নন, সম্প্রতি ঘরে ফিরতেই অনীহা দেখা দিয়েছে সামির মধ্য়ে। সবসময় ভয়ের মধ্য়ে থাকেন তিনি। কারণ, তার ধর্ম। কারণ, এদেশের কিছু মানুষোর গোঁড়া মানসিকতা। আর সেই কারণে পশ্চিমবঙ্গে নিজের বাড়িতে থাকতে একদম নিরাপদ বোধ করেন না সামি। আর সেই চাপ মাথায় নিয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে তাঁকে পারফর্ম করে যেতে হচ্ছে।

সোশ্য়াল মিডিয়াতে যেভাবে তাঁকে এবং তাঁর পরিবারকে নিয়ে উস্কানিমূলক এবং ধর্মকে জড়িয়ে কথা বলা হচ্ছে, তাতে খুব চিন্তিত সামি। ভারতীয় দলের হয়ে বিদেশ সফরে যাওয়ার সময় পরিবারকে দেশে একা ফেলে যেতে মন কেমন করছে তাঁর। এই বুঝি কিছু হয়ে যায়। সামির পরিবারকে হুমকিও দেওয়া হয়েছে, ধর্মের বিরুদ্ধে যেন কোনও কাজ না করেন তিনি ও তাঁর পরিবার। ভয় পেয়ে সামি তিনজনের বিরুদ্ধে এইআইআর রুজু করেছেন।
সম্প্রতি তাঁর মেয়ের জন্মদিন উপলক্ষ্য়ে স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে ট্য়ুইটারে একটি ছবি পোস্ট করেছিলেন স্বামী। তারপর থেকেই ঘটনার সূত্রপাত। মুসলিম ধর্মাবলম্বী হওয়ায় তাঁকে ও তাঁর পরিবারকে লক্ষ্য় করে আপত্তিজনক মন্তব্য় শুরু হয়ে যায়। একজন আবার গোঁড়া মানসিকতার পরিচয় দিয়ে সামির উদ্দেশে মন্তব্য় করেছে, ”আপনার স্ত্রীকে হিজাব না পরে ছবিতে দেখে খুব দুঃখিত হলাম। প্রিয় সামি স্য়ার পাপ ছোটো না বড়, এটা না দেখে একবার ভাবুন, কাকে অবমাননা করছেন আপনি।”

নিজের প্রতিবেশীদেরও এইরকম মুহূর্তে পাশে পাননি সামি। আর সেই কারণে পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে আরও চিন্তায় আছেন তিনি। এব্য়াপারে তিনি বলেন, ”পুলিশ তার কাজ করছে। কিন্তু, এই ঘটনা সামনে আসার পর আমার প্রতিবেশীরা বা স্থানীয় প্রশাসনের কেউ আমায় ও আমার পরিবারকে শান্তনা দিতে আসেনি। আমি খুব ভয়ে আছি। আমার নিজের ও আমার পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তায় আছি। বেশিদিন এখানে থাকতে পারব না। আমি বিদেশ সফরে গেলে আমার পরিবারকে একা থাকতে হয়।” সামি আরও বলেন, ”ওরা আমাকে আর আমার স্ত্রীকে ভয় দেখিয়েছে। আমার মেয়েকে কাঁদিয়েছে। কি করে আমি ওদের ক্ষমা করব? আমি ওদের ক্ষমা করব না। আমি খুব ব্য়থিত এবং আশ্চর্য হয়েছি এই ঘটনায়। আমি বা আমার স্ত্রী কেউই এখানে থাকতে চাই না। কিন্তু, পালিয়ে যাবো না। কারণ, আমরা ভিতু নই।”