হরমনপ্রীত কউর। নামটা এখন আর অচেনা নয়। উত্তর দিকের পাঞ্জাবের মোগা থেকে আজ নামটা সারা ভারতের কোনায় কোনায় ছড়িয়ে পড়েছে। তিন দিনের মধ্যেই একেবারে মেগাস্টার বনে যাওয়া। ট্যুইটারে শুভেচ্ছার জোয়ারে সামিল তাবড় তাবড় সেলিব্রিটি আর লেজেন্ডরা। বাড়িতে বাবা হরমন্দর সিং ভুল্লার ফোন ধরে ধরে হাঁফিয়ে যাচ্ছেন। একেবারেই ফুরসৎ নেই যে। বাড়ির মেয়ের এমন কারনামাতে মোগার ওই ভুল্লার হাউস এখন রীতিমতো খবরের শিরোনামে। চেনা-অচেনা, সবাই ফোন করে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। মহিলা ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়দের নিয়ে এত শোরগোল আগে হয়েছে কি না জানা নেই। তবে, বৃহস্পতিবার যেভাবে সেমিফাইনালে ডিফেন্ডিং চ্য়াম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে প্রায় একাহাতে দুরমুশ করে ভারতকে ফাইনালে তুললেন, তারপর একশো ত্রিশ কোটি ভারতবাসীর ভালোবাসাটা সত্য়ি সত্য়ি পাওয়ারই ছিল। আর তাই মিডিয়ার চোখে এখন হটকেক ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট দলের এই আটাশ বছরের অলরাউন্ডারটি। ফ্য়ানেদের নাগালের মধ্য়ে পৌঁছে দিতে হবে হরমনের খবর। ইন্টারনেটের যুগে সাইবার ভাষায় – লেটেস্ট আপডেট।
১১৫ বলে ১৭১ রান। যার মধ্য়ে শেষের ১২০ রান এসেছে মাত্র ৫১ বলে। মানেটা এই দাঁড়ায় অর্ধশতরানের পর বিধ্বংসী মেজাজ ধরেন হরমন। শতরানে পৌঁছোন ৯০ বলে। সেঞ্চুরির পর থেকে ধরলে বাকি ৭১ রান এসেছে মাত্র ২৫ বলে। ওদিন যাঁরা আইসিসি মহিলা বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলা দেখেছিলেন, তাঁরা বলছেন, হরমনের খেলা দেখে একজনের কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল বারবার। নজফগড়ের নবাবকে মনে আছে? মনে আছে, কীভাবে মাঠে নেমেই পিটিয়ে ছাতু করত বোলারদের? কাওকেই রেয়াত করত না। আর হরমনপ্রীতের খেলাতেও নাকি সেই মওতাতটা রয়েছে। গরমজোশিওয়ালাভাব। হরমন নিজেও বীরেন্দ্র সেহওয়াগের ফ্য়ান। ওরকম হ্য়ান্ড অ্যান্ড আই কোঅর্ডিনেশনের খেলাটাকে রপ্ত করেছেন। মানে বলের ওপর শেষ সময় পর্যন্ত নজর রাখো আর ব্য়াটে বল চলে সজোরে মারো। বাদবাকি কাজটা কব্জির জোর সেরে দেবে। শুধু কোনদিকে বলটা মেরে পাঠাতে চাইছো, সেদিকে পাঠালেই হলো। কাগজে সেহওয়াগকে নিয়ে খবর বেরোলে, তা কাটিং করে রাখাও অভ্য়াস ছিল। নজফগড়ের নবাব আউট হয়ে গেলে টিভিও বন্ধ করে দিতেন। বীরু খেলা ছেড়ে দিলেও মহিলা ক্রিকেটে সেই মারকুটে ধারাটা নিয়ে এসেছেন পাঞ্জাবের এই মহিলা ক্রিকেটারটি।
মহিলা ক্রিকেটের বিরাট কোহলি, এবি ডি ভিলিয়ার্স, ক্রিস গেইল বলা হচ্ছে এখন তাঁকে, কিন্তু হরমনের আইডলের নাম শুনলে চমকে যেতে হবে। বর্তমানে তিনি ভারতীয় পুরুয ক্রিকেট দলের সদস্য। একেবারেই মারকুটে ব্য়াটসম্য়ান নন। দ্রাবিড়ীয় ঘরানার টেকনিকাল ক্রিকেটে বিশ্বাসী। তিনি ভারতীয় টেস্ট দলের সহ-অধিনায়ক অজিঙ্কা রাহানে। শুনতে অবাক লাগলেও, এটাই সত্যি। রাহানের টেকনিকের ফ্য়ান হরমন। আইডলকে নিয়ে একটা পুরনো গল্পও শোনালেন। একবার রাহানেকে তাঁর কোচ বলেছিলেন কোনওরকম শট না খেলে, ধেয়ে আসা বল কাঁধের নিচে নামিয়ে যেতে। আর তা একনাগাড়ে দু-ঘণ্টা ধরে প্র্য়াক্টিস করে যান অজিঙ্কা। তখন থেকেই মুম্বইয়ের ব্য়াটসম্য়ানটির ফ্য়ান ভারতীয় মহিলা দলের নতুন তারকা।
উল্লেখ্য়, রবিবার ইংল্য়ান্ডের লর্ডসে আইসিসি মহিলা ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনালে ভারত ও ইংল্য়ান্ড মুখোমুখি হবে।