টেস্ট সিরিজের পর একদিনের সিরিজও হাতছাড়া হলো শ্রীলঙ্কার। এখন যা অবস্থা, তাতে ২০১৯ বিশ্বকাপে সরাসরি খেলার যোগ্য়তাও হারাতে চলেছে ১৯৯৬-এর বিশ্ব চ্য়াম্পিয়নরা। কারণ, বিশ্বকাপে খেলার যোগ্য়তা সরাসরি অর্জন করতে হলে চলতি একদিনের সিরিজে ভারতকে দু’টি ম্য়াচে হারাতেই হবে তাদের। সিরিজ খোয়ালেও হাতে এখনও দু’টি ম্য়াচ রয়েছে। আর সেই দু’টি ম্য়াচে শ্রীলঙ্কা জিতবে, এই মুহূর্তে তা অলিক কল্পনা ছাড়া আর কিছুই মনে হচ্ছে না। ভারতীয় ক্রিকেটের কাছে টানা পাঁচটি ম্য়াচে হেরেছে শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটে। অরবিন্দ ডি’সিলভা, অর্জুনা রণতুঙ্গা ও সনৎ জয়সূর্য’র মতো ক্রিকেট তারকারা এই টিমে এক সময় খেলে গেছেন বলে বিশ্বাসই করা যায় না। শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটে স্টার সুলভ লুক কোনও তারকা ক্রিকেটারের মধ্য়ে কোনওদিনই ছিল না, এটা সত্য়ি কথা। শ্রীলঙ্কা এমন একটা দল, যেখানে কোন দিন কে খেলে দেবেন বলা মুশকিল। কিন্তু, এভাবে পর্যদুস্ত হতে শ্রীলঙ্কান টিমকে কোনওদিন কেউ দেখেছেন বলে হলফ করে বলতে পারবেন না। তবে, মাহেলা জয়বর্ধনে ও কুমার সাঙ্গাকারা মতো দুই স্টার ক্রিকেটার পরপর অবসর নেওয়ায় শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটের মান একেবারে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। বাংলাদেশ, জিম্বাবোয়ের থেকেও দুর্বল লাগছে এই দলটাকে। আর শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটের এই দুর্দিনে সাঙ্গাকারার মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেটারই দলকে খাদের কিনারা থেকে টেনে তুলতে পারেন বলে ধারণা ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলির। দাদার মতে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট বোর্ডের উচিত কুমার সাঙ্গাকারার কাছে অনুরোধ করা, যাতে তিনি অবসর ভেঙে ফের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শ্রীলঙ্কার জার্সি গায়ে চাপিয়ে নেন।
শ্রীলঙ্কান টিম এখন ট্রানজিশন পিরিয়ডের মধ্য়ে দিয়ে যাচ্ছে। অতীতে অস্ট্রেলিয়া ও ভারতকেও এরকম পরিস্থিতির মধ্য়ে দিয়ে যেতে হয়েছে বড় বড় তারকা ক্রিকেটাররা একসঙ্গে অবসর নেওয়ার পর। তবে, এতটা করুণ হাল কোনওদিন দেখতে হয়নি বিশ্ব ক্রিকেটের দুই সুপার পাওয়ারকে। তুলনায় বর্তমান শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটের হাল সেদিক থেকে অনেক খারাপ। দলটা যেন একেবারে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শুরুর দিকে আনকোরাদের পর্যায়ে চলে গিয়েছে। জয়বর্ধনে ও সাঙ্গাকারার মতো দুই স্তম্ভ অবসর নেওয়ায় ভিতটাই একেবারে ভেঙে পড়েছে। ২০১৭ সালটা শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটের কালো তালিকায় জায়গা করে নেবে। বছরের শুরুতেই দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে টেস্ট ও একদিনের সিরিজে হোয়াইটওয়াশ। তারপর সামান্য় ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টার পর আবার মুখ থুবড়ে পড়া। বাংলাদেশের মতো দলকেও হোম সিরিজে হারাতে ব্য়র্থ শ্রীলঙ্কা। চ্য়াম্পিসয়ন্স ট্রফি থেকে গ্রুপ পর্বে বিদায় নেওয়ার পর জিম্বাবোয়েতে গিয়ে কঙ্কাল বেরিয়ে পড়ে দলটার। আর ভারতের বিরুদ্ধে খেলতে নামার পর থেকে চোট-আঘাতে একের পর এক ক্রিকেটার অনিশ্চিত হয়ে পড়া অভ্য়াসে পরিণত হয়ে গিয়েছে। ভারতের কাছে টেস্ট সিরিজের পর একদিনের সিরিজেও হোয়াইটওয়াশ হওয়া শ্রেফ সময়ের অপেক্ষা। আর ২০১৯ সালের বিশ্বকাপ ভবিতব্য় – শ্রীলঙ্কাকে বিশ্বকাপে খেলতে হলে প্রতিযোগিতা শুরুর আগে কোয়ালিফায়ারে খেলে যোগ্য়তা অর্জন করতে হবে।
২০১৯ বিশ্বকাপের আগে হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে এবং দলটাকে আবার গড়ে তুলতে হলে শ্রীলঙ্কা বোর্ডকে সাঙ্গাকারাকে ফিরিয়ে আনতে উদ্য়োগী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন দাদা। তাঁর মতে অন্তত, এক বছর সাঙ্গাকারাকে প্রয়োজন শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটের। একটি বেসরকারি সংবাদমাধ্য়মের হিন্দি সাংবাদিক তাঁর ট্য়ুইটে সৌরভের এই বক্তব্য় তুলে ধরেন।
উল্লেখ্য়, ২০১৫ সালে আন্তর্তাক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার পর শ্রীলঙ্কার প্রাক্তন অধিনায়ক এখন ক্লাব ও ফ্র্য়াঞ্চাইজি ক্রিকেটে খেলা চালিয়ে যাচ্ছেন। এবছর ইংল্য়ান্ডে কাউন্টি চ্য়াম্পিয়নশিপে সাতটি ম্য়াচে ছ’টি শতরান ও দু’টি অর্ধশতরান করেন। চলতি ক্য়ারিবায়ান লিগে টি-২০ ক্রিকেটেও বেশ ভালো পারফর্ম করছেন সাঙ্গা।
শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটের এই হাল দেখে দাদা মস্করা করে যা বললেন, দেখলে হাসি চাপতে পারবেন না!
