গতকাল ছিলো বিরাট কোহলির (Virat Kohli) জন্মদিন। ৩৫ বছরে পা দিয়ে রেকর্ডের চূড়ায় পৌঁছলেন ভারতীয় ব্যাটিং তারকা। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে বিশ্বকাপের ম্যাচে দুর্দান্ত শতরান করেন তিনি। তৃতীয় ভারতীয় হিসেবে জন্মদিনে শতরান পেলেন তিনি। একই সাথে ৪৯তম ওডিআই শতক করে ভাগ বসালেন শচীন তেন্ডুলকরের (Sachin Tendulkar) রেকর্ডে। ৪৫২ ম্যাচে ৪৯টি শতরান করেছিলেন ‘মাস্টার ব্লাস্টার’। বিরাট সেই রেকর্ড স্পর্শ করলেন মাত্র ২৭৭ ম্যাচ খেলেই। শচীনের সাথে একই আসনে বসে ঘোরের মধ্যে রয়েছেন বিরাট (Virat Kohli)। খেলা শেষে ম্যাচের সেরার পুরষ্কার নিতে এসে তিনি জানান , “এখনও পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারছি না। আমার ‘নায়ক’-এর রেকর্ড ছুঁতে পারে আমার কাছে অবশ্যই ‘স্পেশ্যাল।’ ব্যাটিং–এর বিষয়ে উনি একদম নিখুঁত। আমার কাছে এটা খুবই একটা আবেগপূর্ণ একটা মুহূর্ত।
অনুজের সাফল্যে খুশি হয়েছেন শচীন’ও (Sachin Tendulkar)। সোশ্যাল মিডিয়ায় বিরাটিকে শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি লিখেছেন, “৪৯ থেকে ৫০ (বছর বয়সে) পৌঁছতে আমার লেগেছে ৩৬৫ দিন। বিরাট আশা করি তুমি ৪৯ থেকে ৫০ (শতরানে) আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই পৌঁছে যাবে।” বিরাট কোহলি নাকি শচীন তেন্ডুলকর-দুই ভিন্ন যুগের দুই ব্যাটিং তারকা মধ্যে দক্ষতার নিরিখে এগিয়ে কে? গত কয়েক বছর ধরেই তুলনা চলে আসছে। কোহলির (Virat Kohli) গতকালের সাফল্যের পর ফের একবার দুজনের শক্তি দুর্বলতার তুল্যমূল্য বিচারে নেমেছেন বিশেষজ্ঞ’রা। নিছক পরিসংখ্যানকে দূরে রেখে দুজনের ক্রিকেট কেরিয়ারকে যদি বিশ্লেষণ করা যায় তাহলে দেখা যাবে তাঁদের মধ্যে মিল যত রয়েছে, ঠিক ততটাই রয়েছে পার্থক্য।
Read More: World Cup 2023: “বেটে কো হাত লাগানে সে পেহলে বাপ সে বাত কার…”, দক্ষিণ আফ্রিকার জঘন্য হারের পর ভাইরাল হচ্ছে শাহরুখ খানের ভিডিও !!
বিরাট এবং শচীন, মিল যেখানে-
পাকিস্তানের মাঠে শচীন যখন প্রথমবার দেশের জার্সি গায়ে মাঠে নেমেছিলেন, বিরাট কোহলির (Virat Kohli) বয়স তখন সবে এক বছর। নব্বইয়ের দশক বা নতুন শতাব্দীর শুরুতে ভারতের ক্রিকেট যখন পুরোপুরি শচীনময়, তখন আর পাঁচটা কিশোরের মতই বিরাটও মনে মনে ‘মাস্টার ব্লাস্টার’কে মেনে নিয়েছিলেন আইডল হিসেবে। সম্ভবত সেই কারণেই দুই প্রজন্মের দুই তারকার মধ্যে বিস্তর মিল রয়েছে। প্রধান মিল অবশ্যই তাঁদের রানের খিদেতে। আড়াই দশকের কেরিয়ারে ভারতের জার্সিতে তিন ফর্ম্যাট মিলিয়ে ৬৬৭টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন শচীন। করেছেন ৩৪৩৫৭ রান। দেড় দশকে বিরাটের রানসংখ্যা ৫১৫ ম্যাচে ২৬৩১০। শচীনের সঙ্গে শতকের সংখ্যার নিরিখেও পাল্লা দিচ্ছেন বিরাট। ‘মাস্টার ব্লাস্টার’ যেখানে করেছেন ১০০টি শতরান, সেখানে ‘মডার্ন মাস্টার’ কোহলির শতরান ৭৯টি।
দুনিয়ার যে কোনো প্রান্তে যে কোনো পরিস্থিতিতে সফল হওয়ার উদগ্র বাসনা বাকিদের থেকে আলাদা করেছে শচীন (Sachin Tendulkar) এবং বিরাট’কে। এই ঐশ্বরিক ক্ষমতা বলেই শচীন সিডনির মাঠে ২৪১ রানের ইনিংস খেলতে পারেন একটিও কভার ড্রাইভ না মেরে অথবা শারজাহ’র মাঠে খেলতে পারেন ‘মরুঝড়ের ইনিংস।’ পিছিয়ে নেই বিরাট’ও। ২০১৪ সালে ইংল্যান্ডে চূড়ান্ত ব্যর্থ হয়েছিলেন। এরপরের সফরে স্যুইং সমস্যা কাটিয়ে ভারতের সেরা ব্যাটার হয়েছিলেন তিনিই। হোবার্টে অবিশ্বাস্য শতরান করে হারিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কাকে। পাকিস্তানের দেওয়া ৩৩০ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১৪৮ বলে যখন করেন ১৮৩ রান, তখন দীর্ঘসময় নন-স্ট্রাইকার প্রান্তে যে মানুষটা ছিলেন, তাঁর নাম-শচীন তেন্ডুলকর। উত্তরসূরির হাতে ব্যাটিং সাম্রাজ্য সঁপে তিনি তখন বিদায়ের পথে।
দুই তারকার মধ্যে রয়েছে বিস্তর ফারাকও-
ক্রিকেট মাঠে মেজাজ হারাতে শচীন তেন্ডুলকরকে (Sachin Tendulkar) বড় একটা দেখা যায় নি কখনও। ধীরস্থির, নম্র স্বভাবের ক্রিকেট সাধক হিসেবেই ২৪ বছর ধরে দুনিয়ার সামনে হাজির হয়েছেন তিনি। প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় তো এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন যে শচীনকে স্লেজিং করতে কখনও রাজী করানো যেত না। মাঠে খানিক অন্তর্মুখী হওয়ার পাশাপাশি ব্যক্তিগত জীবনকে লোকচক্ষুর আড়ালে রাখাই পছন্দের শচীনের। তিনি খ্যাতির মধ্যগগনে থাকা অবস্থাতেও কখনও সংবাদপত্রের পাতায় জায়গা করে নেয় নি তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের কোনো টুকরো ছবি।
বিরাট (Virat Kohli) আবার সম্পূর্ণ বিপরীত। জয়ের লক্ষ্যে প্রয়োজনে প্রতিপক্ষের চোখে চোখ রাখতে দ্বিধা করেন না। বাইশ গজে গুটিয়ে থাকা মানে নিশ্চিত পরাজয়, তা ভালোভাবেই জানেন কোহলি। তাই প্রয়োজনে আগ্রাসনের আগুনে প্রতিপক্ষকে ঝলসে দিতে দ্বিধা করেন না তিনি। বিরাট যখন নেতৃত্ব পান ২০১৪ সালে, তখনও বেশ টালমাটাল অবস্থা ছিলো ভারতীয় ক্রিকেটে। ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া সফরে নাস্তানাবুদ হতে হয়েছিলো। সেখান থেকে লাল বলের ফর্ম্যাটে দলকে ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করে কোহলির (Virat Kohli) আগ্রাসী নেতৃত্ব’ই। মাঠের বাইরেও অনেক খুল্লমখুল্লা তিনি। শতক সম্পূর্ণ করে দর্শকাসনে বসে থাকা স্ত্রী অনুষ্কার (Anuska Sharma) দিকে উড়ন্ত চুম্বন ছুঁড়ে দিতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করেন না তিনি।