PSL: ভারত-পাক সংঘর্ষের ফলে বিপাকে উপমহাদেশের ক্রিকেট। আইপিএল এক সপ্তাহের জন্য স্থগিত রাখা হয়েছে। অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত হয়ে গিয়েছে পিএসএল’ও (PSL)। প্রথমে পাকিস্তান থেকে সংযুক্ত আরব আমিরশাহীতে টুর্নামেন্ট সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলো পিসিবি। প্রাথমিক সম্মতিও দিয়েছিলো আমিরশাহী ক্রিকেট সংস্থা। কিন্তু পরে পিছিয়ে আসে তারা। ফলে টুর্নামেন্ট আপাতত বন্ধ করা ছাড়া উপায় ছিলো পাক ক্রিকেট বোর্ডের সামনে। ভারতের অপারেশন সিন্দুরের পর থেকেই বন্ধ পাকিস্তানের আকাশসীমা। কোনো সংস্থার যাত্রীবাহী বিমানই প্রবেশ করছে না পাকিস্তানের আকাশে। বন্ধ বিমানবন্দরগুলিও। এমতাবস্থায় যে দুঃসহ অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে পিএসএল (PSL) খেলতে আসা বিদেশী তারকাদের, সে সম্পর্কে মুখ খুললেন বাংলাদেশের রিশাদ হোসেন (Rishad Hossain)।
Read More: ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে আগেই এবার চেন্নাইয়ের এই তারকা নিলেন অবসর !!
আতঙ্কে ছিলেন বিদেশীরা, জানালেন রিশাদ-

পেশওয়ার জালমি বনাম করাচী কিংস ম্যাচের আগে রাওয়ালপিণ্ডি স্টেডিয়ামের একাংশ ভেঙে পড়েছিলো ভারতীয় ড্রোনের আঘাতে। নিরাপত্তাজনিত কারণে প্রথমে শহর বদলের সিদ্ধান্ত নেয় পিসিবি। ঠিক হয় যে PSL ম্যাচগুলি করাচীতে স্থানান্তরিত করা হবে। শেষমেশ অবশ্য সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করা যায় নি। ভেস্তে যায় দুবাইয়ের পরিকল্পনাও। তবে বিদেশী খেলোয়াড়দের বিশেষ বিমানে দুবাই পৌঁছে দেওয়া হয়। সেখান থেকে নিজের দেশের বিমান ধরেন তাঁরা। ভারত-পাক সংঘর্ষের মাঝে পাকিস্তানে আটকে পড়া ক্রিকেটাররা ঠিক কতটা আতঙ্কে ছিলেন তাঁর একটি ধারণা দিয়েছেন রিশাদ হোসেন। তিনি জানান, “স্যাম বিলিংস, ড্যারিল মিচেল, কুশল পেরেরা, ডেভিড উইসে, টিম কারানরা খুব ভয় পেয়েছিলো। দুবাই ল্যান্ড হওয়ার পর মিচেল আমায় বলেছে যে ও আর কখনও পাকিস্তানে আসবে না।”
লাহোর কালান্দার্স দলের হয়ে পিএসলে (PSL) খেলতে গিয়েছিলেন রিশাদ। শুরুর কয়েকটি ম্যাচে বল হাতে নজরও কেড়েছিলেন। কিন্তু শেষমেশ অভিজ্ঞতা বিশেষ সুখের হলো না। আতঙ্কে কেঁদে ফেলেছিলেন ইংল্যান্ডের টম কারান, জানিয়েছেন রিশাদ। বাংলাদেশের অলরাউন্ডার বলেন, “ও (টম কারান) বিমানবন্দরে গিয়ে দেখে সেটি বন্ধ। ও এতটা ভেঙে পড়েছিলো যে দুই-তিনজনকে লেগেছিলো ওকে সান্ত্বনা দিতে।” তবে নিরাপদে তাঁরা দুবাই পৌঁছেছেন বলেও জানিয়েছেন রিশাদ। “ঈশ্বরকে ধন্যবাদ যে আমরা কঠিন পরিস্থিতিতে পিছনে ফেলে দুবাই পৌঁছতে পেরেছি। এখন অনেক ভালো লাগছে। দুবাইতে অবতরণের পরেই জানতে পারি যে আমরা টেক-অফ করার ২০ মিনিট পরেই বিমানবন্দরে মিসাইল আছড়ে পড়েছে। খবরটা যেমন আতঙ্কের ছিলো তেমনই হৃদয়বিদারক’ও। দুবাই পৌঁছনোর পর অনেকটা স্বস্তি পাচ্ছি,” সংযোজন তাঁর।
যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন পাকিস্তানের-

গত মঙ্গলবার রাতে অপারেশন সিন্দুর শুরু করেছিলো ভারতীয় সেনাবাহিনী। ২২ এপ্রিলের পহলগাঁও হত্যাকাণ্ডের প্রত্যাঘাত হিসেবে পাকিস্তান ও পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের নয়টি জঙ্গিঘাঁটি উড়িয়ে দেওয়া হয়। এরপর থেকেই দুই তরফে শুরু হয় গোলাগুলির লড়াই। ভারত লাহোর, করাচী, রাওয়ালপিণ্ডির মত শহরে একের পর এক ড্রোন হামলা চালালেও পাকিস্তানের ক্ষেপনাস্ত্রের অধিকাংশই বাধাপ্রাপ্ত হয় ভারতীয় সেনার এস-৪০০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের সৌজন্যে। সীমান্ত এলাকায় মর্টার, শেলিং-এর ফলে কয়েকজন নিরীহ ভারতবাসী অবশ্য প্রাণ হারিয়েছেন। মরিয়া হয়ে দিল্লী লক্ষ্য করে ফতেহ-২ ক্ষেপনাস্ত্র ছুঁড়েছিলো পাক বাহিনী। গতকাল ভোররাতে হরিয়ানার শিরসায় তা রোখে ভারত। এরপর পালটা আক্রমণে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছিলো পাক বায়ুসেনার একাধিক এয়ারবেস। শেষমেশ যুদ্ধবিরতির আবেদন করে কোনঠাসা পাকিস্তান।
ভারতীয় বিদেশসচিব বিক্রম মিস্রি গতকাল সন্ধ্যেবেলা সংবাদমাধ্যমকে জানান যে দুপুর ৩:৩৫-এ ভারতীয় ডিজিএমও (ডায়রেক্টর জেনারেল অফ মিলিটারি অপারেশনসকে) ফোন করেন পাকিস্তানের ডিজিমিও। দ্বিপাক্ষিক আলোচনার পর জল, স্থল ও আকাশপথে সামরিক অভিযান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় দুই দেশই। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ট্যুইটবার্তায় জানান যে আমেরিকার মধ্যস্থতাতেই যুদ্ধবিরতিতে রাজী হয়েছে দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশ। ঠিক ছিলো ১২ মে দুপুর ১২টার সময় ফের বৈঠক করবেন দুই দেশের ডিজিএমও। সংঘর্ষবিরতির খবরে স্বস্তি পেয়েছিলেন সাধারণ মানুষ। কিন্তু শান্তিচুক্তি টেকে নি বেশীক্ষণ। আজ রাতেই জম্মু, রাজস্থান, পাঞ্জাবের আকাশে দেখা গিয়েছে পাক ড্রোন। অতর্কিত আক্রমণে প্রাণ হারিয়েছেন বিএসএফের এক আধিকারিক। গতকাল রাতে ফের একটি সাংবাদিক সম্মেলনে বিক্রম মিস্রি জানিয়েছেন যে পাল্টা জবাব দেওয়া ইতিমধ্যেই শুরু করেছে ভারতীয় সেনাও।