এই মুহূর্তে দেশের ক্রিকেট জনতার অন্যতম প্রিয় খেলোয়াড় রিঙ্কু সিং (Rinku Singh)। দারিদ্রকে পিছনে ফেলে যেভাবে সাফল্যের সরণিতে স্থায়ী জায়গা করে নিয়েছেন রিঙ্কু, তা অনুপ্রাণিত করেছে অনেককেই। সামান্য এলিপিজি সিলিন্ডার বিক্রেতার সন্তান তিনি। অর্থের প্রয়োজনে একটা সময় ঝাড়ুদারের কাজও করতে হয়েছে তাঁকে। কিন্তু সেখানেই আটকে না থেকে, ব্যাটকেই মুক্তিদাতা হিসেবে চিনে নিয়েছেন তিনি। গত কয়েক মরসুম ধরে কলকাতা নাইট রাইডার্স (KKR) দলে থাকলেও মেলে নি নিয়মিত সুযোগ। অবশেষে ২০২৩ সালে এসে রিঙ্কুর (Rinku Singh) প্রতিভার সাথে সঠিকভাবে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন সমর্থকেরা। একের পর এক ম্যাচে অবিশ্বাস্য ইনিংস খেলে নাইট জনতার নয়নের মণি হয়ে উঠেছেন তিনি।
২০২২ সালে লক্ষ্ণৌ সুপারজায়ান্টসের (LSG) বিরুদ্ধে একটি ম্যাচে প্রায় অসাধ্যসাধন করে ফেলেছিলেন রিঙ্কু (Rinku Singh)। সেই ম্যাচ জেতাতে না পারলেও নজর কেড়ে নিয়েছিলেন আলিগড়ের তরুণ। ২০২৩ সালের গুজরাত টাইটান্স (GT) ম্যাচে তিনি যা করলেন তাকে বাস্তব জীবন না বলে স্বচ্ছন্দে ভিডিও গেম বলে চালিয়ে দেওয়া যায়। শেষ ওভারে যশ দয়ালকে টানা পাঁচটি ছক্কা মেরে ম্যাচ জিতিয়ে দেন তিনি। এরপরেই রিঙ্কু সিং-এর জনিপ্রয়তা আসমান স্পর্শ করে দেশে। ‘ওয়ান হিট ওয়ান্ডার’ নয়, তিনি যে সত্যিই প্রতিভাবান তার ছাপ গোটা আইপিএল জুড়েই রেখেছেন রিঙ্কু। ১৪ ম্যাচে প্রায় ৬০ ব্যাটিং গড়ে ৪৭৪ রান করেছেন তিনি। স্ট্রাইক রেট ১৫০’র কাছাকাছি। মেরেছেন ২৯টি ছক্কা। আইপিএলের পরেও ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন তিনি। দেওধর ট্রফিতেও রান এলো রিঙ্কুর (Rinku Singh) ব্যাটে।
Read More: পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতকে হারতে বড় অঙ্কের টোপ অফার দাউদ ইব্রাহিমের, হলো চাঞ্চল্যকর খোলাসা !!
দেওধরে মধ্যাঞ্চলের হয়ে অর্ধশতক রিঙ্কুর-
জোরকদমে চলছে ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটের মরসুম। দিনকয়েক আগে সম্পন্ন হলো দলীপ ট্রফি। পশ্চিমাঞ্চলকে হারিয়ে খেতাব জিতলো দক্ষিণাঞ্চল। বর্তমানে চলছে দেওধর ট্রফি। দেশের রাজ্যগুলিকে ছয়টি অঞ্চলে ভাগ করে খেলা হয় এই প্রতিযোগিতা। আজ পুদুচ্চেরিতে মুখোমুখি হয়েছে সেন্ট্রাল-জোন এবং ইস্টার্ন-জোন। টসে জিতে প্রথমে ফিল্ডিং বেছে নেয় পূর্বাঞ্চল। শাহবাজ আহমেদ, মণিশংকর মুড়াসিং, আকাশ দীপদের বিপক্ষে শুরুতেই বিপাকে পড়েছিলো মধ্যাঞ্চল দল। রান গতিতে রাশ টেনে সেন্ট্রাল-জোনকে চাপে ফেলেন পূর্বাঞ্চলের বোলাররা। একে একে ফিরে যান মাধব কৌশিক, ভেঙ্কটেশ আইয়ার, যশ দুবে এবং শিভম চৌধুরী। ৬৮/৩ অবস্থায় আরিয়ান জুয়াল চোট পাওয়ার পর মাঠে নামেন রিঙ্কু (Rinku Singh)। কঠিন পরিস্থিতিতে ব্যাট হাতে লড়াই করতে দেখা গেলো তাঁকে।
উইকেটে থিতু হতে সময় নেন রিঙ্কু (Rinku Singh)। তারপর হাত খুলতে দেখা যায় বাঁ-হাতি ব্যাটারকে। মাত্র ১টি চার এবং ২টি ছক্কা মেরেছেন আজ তিনি। শর্ট-রানের দিকেই ঝুঁকতে দেখা গেলো আজ তাঁকে। শেষমেশ ৬৩ বলে ৫৪ রানের ইনিংস খেলে মণিশংকর মুড়াসিং-এর বলে আউট হন। কর্ণ শর্মার সাথে জুটি গড়ে মধ্যাঞ্চলকে লড়াইয়ের জায়গায় নিয়ে আসেন তিনি। মূলত রিঙ্কুর ৫৪, কর্ণ শর্মার (Karn Sharma) ৩২ এবং আরিয়ান জুয়ালের (Aryan Juyal) ৩৯* রানের সুবাদে স্কোরবোর্ডে ২০৭ রান যোগ করতে পারে মধ্যাঞ্চল।
সহজ জয় পেলো ইস্টার্ন-জোন-
দেওধর ট্রফির যাত্রা সহজ জয় চিয়ে শুরু করলো পূর্বাঞ্চল। পুদুচ্চেরিতে ২৩ বল বাকি থাকতেই মধ্যাঞ্চলের ছুঁড়ে দেওয়া ২০৮ রানের লক্ষ্যমাত্রা ছুঁয়ে ফেলে তারা। তাদের হয়ে বল হাতে ভালো পারফর্ম করতে দেখা যায় মণিশংকর মুড়াসিং-কে (Manishankar Murasingh)। ১০ ওভারে ২৯ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন তিনি। বাংলার দুই বোলার আকাশ দীপ (Akash Deep) ও শাহবাজ আহমেদ (Shahbaz Ahmed) যথাক্রমে ৩৫ ও ৩০ রানের বিনিময়ে ৩ টি করে উইকেট নেন। অন্য উইকেটটি জমা পড়ে উৎকর্ষ সিং-এর ঝুলিতে। ব্যাট হাতেও পূর্বাঞ্চলের ‘ম্যাচ উইনার’ উৎকর্ষই (Utkarsh Singh)। ওপেন করতে নেমে ১০৪ বলে ৮৯ রান করেন তিনি। এছাড়া অভিমণ্যু ঈশ্বরণ করেন ৫৫ বলে ৩৮ রান।
তিনে নামা বিরাট সিং (Virat Singh) আউট হয়েছিলেন ১২ রান করে। অধিনায়ক সৌরভ তিওয়ারি আউট হন ১৬ রান করে। তবে শুভ্রাংশু সেনাপতির অপরাজিত ৩৩ রানের ইনিংস পূর্বাঞ্চলকে জয়ের স্বাদ এনে দেয়। সাথে অপরাজিত রইলেন কুমার কুশাগ্র’ও। উইকেটরক্ষক-ব্যাটারের সংগ্রহে আজ ৬ রান। মধ্যাঞ্চলের হয়ে ১ টি উইকেট পেয়েছেন আদিত্য সারওয়াতে এবং বাকি তিন উইকেট নিয়েছেন অভিজ্ঞ স্পিনার কর্ণ শর্মা (Karn Sharma)।