World Cup 2023: ক্রিকেটদুনিয়ার নজর এখন ভারতের দিকে। অক্টোবর-নভেম্বর মাসে ভারতের মাটিতেই বসতে চলেছে একদিনের বিশ্বকাপের আসর। এর আগে ১৯৮৭, ১৯৯৬ এবং ২০১১ সালেও বিশ্বকাপ (ICC World Cup 2023) আয়োজনের দায়িত্ব পেয়েছিলো ভারত, তবে তিনবারই মঞ্চ ভাগ করে নিতে হয়েছিলো পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশের মত উপমহাদেশীয় অন্যান্য ক্রিকেটখেলিয়ে দেশের সাথে। ২০২৩-এ প্রথমবার একক আয়োজনের দায়িত্ব পেয়েছে ভারত।
এর পর আবার ২০৩১ সালে ভারতে বসবে বিশ্বকাপের আসর। তবে সেবার ফের দায়িত্ব ভাগ করে নিতে হবে বাংলাদেশের সঙ্গে। আয়োজনে কোনোরকম ত্রুটি রাখতে চাইছে না বিসিসিআই। ইতিমধ্যেই ১০টি মাঠকে সম্ভাব্য ভেন্যু হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে। এই ১০ শহরের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে- দিল্লী, মুম্বই, চেন্নাই, কলকাতা, বেঙ্গালুরু, ধর্মশালা, পুণে, আহমেদাবাদ, হায়দ্রাবাদ, এবং লক্ষ্ণৌ। স্টেডিয়ামের মানোন্নয়নের জন্য ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে বোর্ড। শুরু হয়ে গিয়েছে কাজও।
২০১১ সালে দেশের মাটিতে প্রথম দল হিসেবে বিশ্বকাপ জিতেছিলো ভারত। এরপর থেকে আয়োজক দেশের বিশ্বকাপ জয়ের যেন এক ট্র্যাডিশন তৈরি হয়ে গিয়েছে। ২০১৫ সালে আয়োজক দেশ হিসেবে জিতেছে অস্ট্রেলিয়া। ২০১৯ সালে নিউজিল্যান্ডকে রোমহর্ষক ফাইনালে হারিয়ে কাপ দেশে রেখে দেয় ইংল্যান্ড। সেই ধারা ২০২৩-এ অটুট রাখতে চায় ভারতীয় দল। ২৮ বছরের অপেক্ষার অবসান হয়েছিলো ২০১১’তে। আর ১২ বছর অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে তৃতীয়বার বিশ্বসেরা হতে চান রোহিত শর্মারা (Rohit Sharma)। মাঠে নিজেদের সর্বস্ব দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি সারছেন ক্রিকেটাররা।
মাঠের বাইরে রজার বিনি (Roger Binny), জয় শাহের (Jay Shah) মত কর্মকর্তারাও হাত গুটিয়ে বসে নেই। বিশ্বকাপকে সর্বাঙ্গসুন্দর করে তোলার জন্য ইতিমধ্যেই পর্দার আড়ালে নিরন্তর কাজ করে চলেছেন তাঁরা। ভারতীয় বোর্ডের তরফে আগেই খসড়া সূচি জমা করা হয়েছিলো আইসিসি’র কাছে। সেই অনুযায়ী গতকাল, টুর্নামেন্ট শুরুর ১০০ দিন আগে চূড়ান্ত ক্রীড়াসূচি প্রকাশ করেছে বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ামক সংস্থা। তবে এই সূচি প্রকাশের পরেও রয়েছে বিতর্ক। ভারতে আসার ব্যাপারে নিশ্চয়তা দিতে পারছে না পাকিস্তান।
Read More: WC 2023: বিশ্বকাপ ২০২৩’এর সেমিফাইনালিস্ট বেছে নিলেন দীনেশ কার্তিক, দিলেন এই দলকে বাদ !!
বিশ্বকাপ সূচি নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে পাকিস্তান-
গতকাল আইসিসির তরফ থেকে যে সূচি প্রকাশ করা হয়েছে তা অনুযায়ী বিশ্বকাপের মেগা ম্যাচে ১৫ অক্টোবর ভারতের মুখোমুখি হবে পাকিস্তান। এই নিয়ে অষ্টমবার উপমহাদেশের দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দেশ সম্মুখ সময়ে নামবে একদিনের বিশ্বকাপে। এর আগের ৭টি সাক্ষাতের প্রতিটিতেই জিতেছে ভারত। এবারও ফলাফলই একই রাখার চেষ্টা থাকবে বিরাট কোহলি (Virat Kohli), রোহিত শর্মাদের (Rohit Sharma)। আইসিসি’র তরফে এই ম্যাচের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামকে। সবচেয়ে বড় ম্যাচের জন্য স্বভাবতই সর্ববৃহৎ স্টেডিয়ামের কথা ভেবেছে বিশ্ব ক্রিকেট নিয়ামক সংস্থা।
কিন্তু এই ভেন্যু নিয়ে আপত্তি রয়েছে পাকিস্তানের। আহমেদাবাদে খেলতে রাজী নয় তারা। ক্রিকেটারদের সুরক্ষার বিষয় নিশ্চিত হতে পারছে না পিসিবি (PCB)। খসড়া সূচি যখন পাঠানো হয়েছিলো পিসিবির কাছে, তখনই এই ম্যাচের ভেন্যু নিয়ে আপত্তি তুলেছিলো তারা। তবে আইসিসি (ICC) এবং বিসিসিআই-এর তরফে কর্ণপাত করা হয় নি। চূড়ান্ত সূচিতেও ভারত-পাক মহারণের মঞ্চ হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামই।
ভারত-পাক ম্যাচ ছাড়াও অস্ট্রেলিয়া এবং আফগানিস্তানের বিরুদ্ধেও ম্যাচের জায়গা পরিবর্তনের আবেদন জানিয়েছিলো পাকিস্তান। আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে চেন্নাইতে এবং অজিদের বিপক্ষে বেঙ্গালুরুতে খেলার ব্যাপারে সম্মত ছিলো না তারা। এক্ষেত্রেও পাকিস্তানের দাবী মানে নি আইসিসি। অপরিবর্তিত রয়েছে ম্যাচের জায়গা। অতীতে পাকিস্তান ম্যাচ ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিলো মুম্বই। শিবসেনা সমর্থকেরা ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামের পিচ খুঁড়ে দিয়েছিলেন। ২০২৩ বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল আয়োজিত হবে ওয়াংখেড়েতে। পুরনো স্মৃতি মনে রেখে মুম্বইতে খেলা নিয়েও দ্বিধায় পাকিস্তান বোর্ড (PCB)। এক বিবৃতিতে পাকিস্তান বোর্ডের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “বিশ্বকাপে আমাদের অংশগ্রহণ, ভারতের বিরুদ্ধে আহমেদাবাদে খেলা বা যোগ্যতা অর্জন করলে মুম্বইতে সেমিফাইনাল খেলার ব্যাপারটা পুরোটাই নির্ভর করছে সরকারের ছাড়পত্র পাওয়ার উপর।”
বিশ্বকাপে পাকিস্তানের ম্যাচগুলি-
রাজনীতির প্যাঁচে আটকে পাকিস্তানের ভারতসফর-
পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডে ফের তৈরি হয়েছে অচলাবস্থা। অন্তর্বর্তীকালীন দায়িত্ব পেয়েছিলেন চেয়ারম্যান নাজম শেঠি (Najam Sethi)। ইতিমধ্যে মেয়াদ ফুরিয়েছে তাঁর। সরে গিয়েছেন তিনি। নতুন চেয়ারম্যান পদে আনুষ্ঠানিকভাবে জাকা আসরাফের (Zaka Ashraf) অভিষেক হতে পারে ১৭ জুলাই। এরই মধ্যে পাকিস্তানের বিশ্বকাপ খেলার ব্যাপারটি নিয়েও তৈরি হয়েছে অচলাবস্থা। বর্তমানে ভারত ও পাকিস্তানের রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে। সেই রাজনৈতিক দড়ি-টানাটানির ফল ভোগ করতে হচ্ছে ক্রিকেটকেও। পাক ক্রিকেটমহল সূত্রে খবর যে এখনও ভারতে আসার ব্যাপারে নো-অবজেকশন সার্টিফিকেট বা NOC দেয় নি পাক বিদেশমন্ত্রক।
পিসিবির তরফে গোটা বিষয়টি সম্পর্কে ইতিমধ্যেই আইসিসিকে ওয়াকিবহাল করা হয়েছে। এক বিবৃতিতে পিসিবির এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “আমরা আইসিসিকে জানিয়ে দিয়েছি যে বিশ্বকাপে আমাদের অংশগ্রহণ করা বা নির্দিষ্ট কোনো মাঠে খেলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। সরকারী ছাড়পত্র পেলেই আমরা ভারতে যাবো।” ২০১৬ সালে শেষবার টি-২০ বিশ্বকাপ খেলতে ভারতে এসেছিলো পাকিস্তান। সেইবার ইডেন গার্ডেন্সে বৃষ্টিভেজা ম্যাচে বিরাট কোহলির (Virat Kohli) ব্যাটে ভারতের বিরুদ্ধে হারতে হয়েছিলো পাক দলকে। এবারও যাবতীয় সমস্যা মিটিয়ে পাক দলকে ভারতে আনতে মরিয়া আইসিসি। কোনো কারণে ভারত বনাম পাকিস্তান্ ম্যাচ ভেস্তে গেলে বড় ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে বিশ্ব ক্রিকেট নিয়ামক সংস্থাকে।