World Cup 2023: রুদ্ধশ্বাস এক ফাইনাল ম্যাচ দিয়ে শেষ হয়েছিলো ২০১৯ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপ। সুপার ওভার শেষে ‘বাউন্ডারি কাউন্ট’ নিয়মে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে খেতাব জিতেছিলো ইংল্যান্ড। সেই ম্যাচের পর কেটে গিয়েছে চারটে বছর। আবার এক বিশ্বকাপের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে ক্রিকেটদুনিয়া। বেশী দিন বাকি নেই আর। চলছে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা।
এবারের বিশ্বকাপের (ICC World Cup 2023) আসর বসছে ভারতের মাটিতে। ১৯৮৭, ১৯৯৬ এবং ২০১১’র পর আবার দায়িত্ব পেয়েছে ভারত। তবে আগের তিনবার আয়োজনের স্বত্ব ভাগাভাগি করে নিতে হয়েছিলো পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা বা বাংলাদেশের মত দেশের সঙ্গে, এই বার প্রথম মিলেছে একক দায়িত্ব। প্রস্তুতিতে কোনো রকম ফাঁক রাখতে রাজী নয় বিসিসিআই। ইতিমধ্যেই দেশের ১০ শহরকে চিহ্নিত করে শুরু হয়ে গিয়েছে স্টেডিয়াম আধুনিকীকরণের কাজ। ৫০০ কোটি টাকার প্রকল্প ঘোষণা করেছে বোর্ড।
প্রতিযোগিতা শুরুর ঠিক ১০০ দিন আগে সম্পূর্ণ ক্রীড়াসূচী ঘোষণা করেছে আইসিসি। মূলপর্বের ম্যাচগুলি আয়োজিত হবে দশটি ভেন্যুতে। এর মধ্যে রয়েছে আহমেদাবাদ, কলকাতা, মুম্বই, দিল্লী, ধর্মশালা, লক্ষ্ণৌ, বেঙ্গালুরু, চেন্নাই, হায়দ্রাবাদ ও পুণে। উদ্বোধনী ম্যাচ ও ফাইনাল আয়োজিত হবে আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে। দুটি সেমিফাইনালের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে কলকাতার ইডেন গার্ডেন্স এবং মুম্বইয়ের ওয়াংখেড়ের মত দুই ঐতিহাসিক স্টেডিয়াম।
৫ অক্টোবর ইংল্যান্ড বনাম নিউজিল্যান্ড দিয়ে শুরু হচ্ছে বিশ্বকাপ। দশ দল প্রথমে রাউন্ড রবিন ফর্ম্যাটে একে অন্যের বিরুদ্ধে খেলবে। তারপর হবে শেষচারের লড়াই। এবং সবশেষে ফাইনাল। অংশগ্রহণকারী দলগুলির মধ্যে বাকিরা কেউ আপত্তি না তুললেও সূচী নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছে পাকিস্তান। এশিয়া কাপ নিয়ে ভারতের বিরোধিতার সূত্রে বিশ্বকাপ বয়কটের হুমকি দিয়েছিলো PCB,এখনও ভারতে আসা নিয়ে ধোঁয়াশা জিইয়ে রেখেছে তারা। ভারতের সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার পথে পাকিস্তান সরকার।
Read More: BCCI নিলো মস্ত বড় সদ্ধান্ত, অবসরের পরেও বিদেশি লীগে খেলা হচ্ছে না ভারতীয় প্লেয়ারদের !!
বিশ্বকাপ সূচী নিয়ে ক্ষোভ পাকিস্তানের-
আইসিসির তরফ থেকে যে সূচি প্রকাশ করা হয়েছে তা অনুযায়ী বিশ্বকাপের মেগা ম্যাচে ১৫ অক্টোবর ভারতের মুখোমুখি হবে পাকিস্তান। এই নিয়ে অষ্টমবার উপমহাদেশের দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দেশ সম্মুখ সময়ে নামবে একদিনের বিশ্বকাপে। এর আগের ৭টি সাক্ষাতের প্রতিটিতেই জিতেছে ভারত। এবারও ফলাফলই একই রাখার চেষ্টা থাকবে বিরাট কোহলি (Virat Kohli), রোহিত শর্মাদের (Rohit Sharma)। আইসিসি’র তরফে এই ম্যাচের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামকে।
কিন্তু ম্যাচের ভেন্যু নিয়ে আপত্তি তুলেছে পাকিস্তান। আহমেদাবাদে ভারতের মুখোমুখি হতে রাজী নয় তারা। ক্রিকেটারদের সুরক্ষা বিঘ্নিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে তারা। খসড়া সূচী সামনে আসার পরেই পাক বোর্ডের তরফে এই ম্যাচের মাঠ বদলানোর আবেদন করা হয়েছিলো। কিন্তু তাতে কোনো ফল হয় নি। চূড়ান্ত সূচীতেও আহমেদাবাদকেই এই মহাম্যাচের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে।
ভারত-পাক ম্যাচ ছাড়াও অস্ট্রেলিয়া এবং আফগানিস্তানের বিরুদ্ধেও ম্যাচের জায়গা পরিবর্তনের আবেদন জানিয়েছিলো পাকিস্তান। আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে চেন্নাইতে এবং অজিদের বিপক্ষে বেঙ্গালুরুতে খেলার ব্যাপারে সম্মত ছিলো না তারা। এক্ষেত্রেও পাকিস্তানের দাবী মানে নি আইসিসি। অপরিবর্তিত রয়েছে ম্যাচের জায়গা।
অতীতে পাকিস্তান ম্যাচ ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিলো মুম্বই। শিবসেনা সমর্থকেরা ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামের পিচ খুঁড়ে দিয়েছিলেন। ২০২৩ বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল আয়োজিত হবে ওয়াংখেড়েতে। পুরনো স্মৃতি মনে রেখে মুম্বইতে খেলা নিয়েও দ্বিধায় পাকিস্তান বোর্ড (PCB)। এক বিবৃতিতে পাকিস্তান বোর্ডের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “বিশ্বকাপে আমাদের অংশগ্রহণ, ভারতের বিরুদ্ধে আহমেদাবাদে খেলা বা যোগ্যতা অর্জন করলে মুম্বইতে সেমিফাইনাল খেলার ব্যাপারটা পুরোটাই নির্ভর করছে সরকারের ছাড়পত্র পাওয়ার উপর।”
পাকিস্তানের সম্পূর্ণ বিশ্বকাপসূচী-
অভিনব সিদ্ধান্ত নেওয়ার পথে পাক সরকার-
আহমেদাবাদ এড়াতে চেয়েছিলেন বাবর আজমরা (Babar Azam)। সেই অনুরোধ রাখা হয় নি। চেন্নাই ও বেঙ্গালুরুর ম্যাচ বদল নিয়েও শোনা হয় নি তাদের আর্জি। বিষয়টিকে যে ভালো চোখে দেখছে না পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড, তা দিনের মত স্পষ্ট এখন। এর মধ্যে পাক ক্রিকেটের অন্তর্দ্বন্দ্বের ফলে চেয়ারম্যানের পদ ছেড়েছেন নাজম শেঠি।
পরবর্তী চেয়ারম্যান পদে জাকা আসরাফের (Zaka Ashraf) বসা একপ্রকার নিশ্চিত হলেও আনুষ্ঠানিক নির্বাচন পিছিয়ে গিয়েছে ১৭ জুলাই অবিধি। ফলে অচলাবস্থা বেড়েছে সেই দেশের ক্রিকেট নিয়ে। এর আগে পিসিবি সূত্রে জানানো হয়েছিলো যে, পিসিবির তরফে গোটা বিষয়টি সম্পর্কে ইতিমধ্যেই আইসিসিকে ওয়াকিবহাল করা হয়েছে।
এক বিবৃতিতে পিসিবির এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “আমরা আইসিসিকে জানিয়ে দিয়েছি যে বিশ্বকাপে আমাদের অংশগ্রহণ করা বা নির্দিষ্ট কোনো মাঠে খেলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। গোটা বিষয়টি বেশ স্পর্শকাতর। তাই চটজলদি কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে না। একমাত্র সরকারী ছাড়পত্র পেলেই আমরা ভারতে যাবো।”
কোনোরকম নো অবজেকশন সার্টিফিকেট বা এনওসি পাওয়ার কথা এখনও জানা যায় নি। বিশ্বকাপে পাকিস্তান মাঠে নামবে কিনা সেই ধোঁয়াশা রয়েছে এখনও। দুই দেশের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক বর্তমানে ঠেকেছে তলানিতে। তারই ফল ভুগতে হচ্ছে ক্রিকেটকে। শোনা যাচ্ছে যে ভারতের সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে শতভাগ নিশ্চিত নয় পাকিস্তান সরকার। তারা এক নিরাপত্তা দলকে ভারতে পাঠাতে চায় প্রথমে। ভারতের সুরক্ষাব্যবস্থা খতিয়ে দেখেই পাক সরকারের বিদেশমন্ত্রক বাবর আজমদের (Babar Azam) ওয়াঘা সীমান্ত পেরোনোর সিদ্ধান্তে সিলমোহর দিতে পারে। বিশ্বকাপ খেলার সময়েও পাকিস্তান দল নিজেদের নিরাপত্তারক্ষী সঙ্গে করে আসে কিনা সেই দিকেই নজর থাকবে।